অবাধ্য সন্তান বাধ্য করার আমল | সন্তানকে বাধ্য করার উপায়
সন্তান আল্লাহর দেওয়া শ্রেষ্ঠ একটি নেয়ামত। পিতা-মাতার গোছানো সংসার বাগানের ছোট্ট ফুল। যে ফুলের সুবাসে সুরভিত হয়ে ওঠে প্রতিটি হৃদয় । আলোকিত করে দেশ ও সমাজ । মহান আল্লাহ বলেন,
“সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য । স্থায়ী সৎকর্ম তোমার রবের কাছে পুরস্কার প্রাপ্তির জন্য শ্রেষ্ঠ এবং আশান্বিত হওয়ার জন্যও সর্বোৎকৃষ্ট।” ( সুরা কাহাফ: ৪৬)
সন্তান অনুগত হলেই কেবল তারা প্রার্থীর জীবনের সৌন্দর্যে পরিণত হয় । কিন্তু যদি অবাধ্য হয় তাহলে চিন্তা ও পেরেশানি বাড়তে থাকে । সংসার জীবনে অশান্তি নেমে আসে।
তাই অবাধ্য সন্তানের পিতা-মাতারা চিন্তায় থাকেন কিভাবে সন্তানকে বাধ্য করা যায় ? কোন আমল বা তাবিজে ভালো করা যায় ? সন্তানকে বাধ্য করার জন্য পিতা-মাতা করণীয়, অবাধ্য সন্তান বাধ্য করার আমল নিচে তুলে ধরা হলো ।
সূচিপত্র
অবাধ্য সন্তান বাধ্য করার আমল – পিতা মাতার করণীয়
সন্তানকে আদর্শবান বাড়ানোর জন্য পিতা মাতার সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করতে হয় । প্রত্যেকটি ঘরকে বানাতে হয় প্রাথমিক বিদ্যালয় । পর্যাপ্ত ইসলামী জ্ঞান শিক্ষা দিতে হয় । সুশিক্ষার মাধ্যমে সন্তান বাড়িয়ে তোলে জীবনের শোভা ।
জীবনের এপিট-ওপিঠ সাজায় বর্ণিল সৌন্দর্যে । পিতা মাতার মুখ উজ্জ্বল করে । এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেন,
“প্রত্যেকটি শিশু সত্য গ্রহণের ক্ষমতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে । অতঃপর পিতা-মাতা তাকে ইহুদি বানায়, খ্রিস্টা বানায়,অগ্নিপূজক বানায়।” ( বোখারী: ১২৯২, মুসলিম: ৬৯২৬)
আরও পড়ুন- অভাব দূর করার আমল | মাওলানা শরিফ আহমাদ
অবাধ্য সন্তানকে বাধ্য করার উপায়
সন্তানদেরকে ছোট থেকেই আদর এবং শাসনের ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা । নেক কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করা । নবী কারিম (সা.) ইরশাদ করেন,
“তোমরা নিজ সন্তানদেরকে ৭ বছর বয়স থেকে নামাজের নির্দেশ দাও। আর ১০ বছর বয়সে নামাজ না পড়লে তাদের প্রহার কর এবং বিছানা পৃথক করে দাও।” (আবু দাউদ: ৪৯৫)
সন্তান দ্বীনি পরিবেশ ও আমলের অভ্যাসে বড় হলে অবাধ্য হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
সন্তানকে বাধ্য করার প্রথম শর্ত
সন্তানকে বাধ্য করার প্রথম শর্ত হল পিতা-মাতা নিজে বেশি বেশি নেক আমল করা । নেক আমলের মাধ্যমে শুধু সন্তান নয় পুরো পৃথিবী বাধ্য হয় । সবার ভালোবাসা অর্জিত হয়। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং নেক আমল করে আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই তাদের জন্য (মানুষের অন্তরে) ভালোবাসা তৈরি করে দেন।” ( সুরা মারিয়াম:৯৬)
হজরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত । রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,
“নিশ্চয়ই আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে ভালবাসেন তখন জিবরাঈলকে (আঃ) ডেকে বলেন, আমি অমুক বান্দাকে ভালবাসি, সুতরাং তুমিও তাকে ভালবাস। তখন জিবরাঈলও (আঃ) তাকে ভালবাসেন।
আরও পড়ুন- স্বপ্নে সুরা ইখলাস পড়লে কি হয়?
তারপর জিবরাঈল (আঃ) আকাশে ঘোষণা করে দেন, আল্লাহ অমুক বান্দাকে ভালবাসেন, সুতরাং তোমরাও তাকে ভালবাস। তখন সমস্ত আকাশবাসী তাকে ভালবাসে। তারপর দুনিয়াবাসীর অন্তরে তার কবুলিয়াত রেখে দেয়া হয়।
আর যখন কোন বান্দাকে অপছন্দ করেন তখন জিবরাঈলকে (আঃ) ডেকে বলেন : আমি অমুক বান্দাকে ঘৃণা করছি, সুতরাং তুমিও তাকে ঘৃণা কর। তখন জিবরাঈল (আঃ) তাকে ঘৃণা করেন এবং আকাশবাসীর নিকট এই ঘোষণা করেন যে, আল্লাহ অমুক বান্দাকে ঘৃণা করেন, সুতরাং তোমরাও তাকে দুশমন মনে কর।
তখন আকাশবাসীর সবাই তাকে ঘৃণা করে। তারপর পৃথিবীতে তার জন্য মানুষের অন্তরে শত্রুতা সৃষ্টি করে দেয়া হয়।” (মুসনাদে আহমাদ ২/৪১৩,ফাতহুল বারী ১/৪৭৬, মুসলিম ৪ / ২০৩০ )
অবাধ্য সন্তান বাধ্য করার আমল – সন্তানকে বাধ্য করার প্রথম আমল
যদি কারো সন্তানাদি মাতাপিতার অবাধ্য হয়ে যায়। তবে প্রত্যেক নামাজের পর নিম্নোক্ত আয়াত বেশী বেশী করিয়া পাঠ করুন । এই আমলের বরকতে অবাধ্য সন্তানাদি বাধ্য ও দ্বীনদার হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ ।
নিচের আয়াতটিতে উল্লেখিত (জুররিয়্যাতি) পড়ার সময় নিজের উদ্দিষ্ট সন্তানাদির কথা স্মরণ করতে হবে । আয়াতটি এই—
وَأَصْلِمْ لِي فِي ذُرِّيَّتِي إِنِّي تُبْتُ إِلَيْكَ وَإِنِّي مِنَ الْمُسْلِمِينَ
বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আসলিহলি ফি জুররিয়্যাতি , ইন্নি তুবতু ইলাইকা ওয়া ইন্নি মিনাল মুসলিমিন।
অনুবাদ: আমার সন্তানদিগকে সৎকর্মপরায়ণ কর, আমি তোমার প্রতি তওবা করিলাম এবং আমি আজ্ঞাবহদের অন্যতম। সুরা আহকাফ : আয়াত-১৫
( আমালে কোরআনী: ১০৬ )
অবাধ্য সন্তান বাধ্য করার আমল – সন্তানকে বাধ্য করার দ্বিতীয় আমল
সন্তানকে বাধ্য করার দ্বিতীয় আমল হল মহান আল্লাহর এই গুণবাচক নামটি আশ-শাহিদু ( (اَلشَّهِيْدُ
আরও পড়ুন- Ayatul Kursi Bangla ( আয়াতুল কুরসি বাংলা ) উচ্চারণ ,অর্থ , অনুবাদ ও ফজিলত
আশ-শাহিদু ১০০০ বার পাঠ করে সন্তানের উপর ফুঁক দেওয়া। এই আমলের বরকতের সন্তান বাধ্য হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ ।
(আমালিয়্যাতে কাশ্মীরি: ৬১)
প্রিয় পাঠকবৃন্দ উপরে অবাধ্য সন্তান বাধ্য করার আমল সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আপনার জীবনে কাজে দিবে ইনশাল্লাহ। তো আজকে এ পর্যন্তই। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। আল্লাহ হাফেয।