বয়স্ক ভাতার আবেদন করার নিয়ম
হ্যালো প্রিয় বন্ধুরা, আশা করি আপনারা সকলেই অনেক ভালো আছেন। আপনাদের কে আমাদের এই সাইটে আমার পক্ষ থেকে জানাই স্বাগতম। আজকের পোস্ট এ আমি আপনাদের সাথে বয়স্ক ভাতার আবেদন করার নিয়ম এই বিষয় টি নিয়ে কথা বলবো। তো চলুন দেরি না করে পোস্ট টি শুরু করে দেওয়া যাক।
পরিবারের বয়স্কদের জন্য সরকার থেকে এখন বয়স্ক ভাতা দেওয়া হয়। যদি আপনিও নিজের পরিবারের কারো জন্য বয়স্ক ভাতা এর আবেদন করতে চান তাহলে আপনাকে বয়স্ক ভাতা সম্পর্কে সব কিছু জানতে হবে এবং এর শর্তাবলী জানতে হবে।
আজকের এই পোস্ট টি বয়স্ক ভাতা আবেদন করার নিয়মের পাশাপাশি বয়স্ক ভাতা কীভাবে হাতে পাবেন তার সব কিছু সম্পর্কে জানতে পারবেন।
সূচিপত্র
বয়স্ক ভাতা কি
গরিব, কর্মহীন নির্দিষ্ট বয়সের বৃদ্ধদের জন্য সরকারের থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ আর্থিক সহায়তা পাওয়াকেই মূলত বয়স্ক ভাতা হিসেবে ধরা হয়। প্রতি মাসেই গরিব, দুস্থ ও কর্মহীন বয়স্ক দের এই বয়স্ক ভাতা সরকার এর থেকে দেওয়া হয়।
বয়স্ক ভাতা পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট একটি বয়সের প্রয়োজন হয়। এবং প্রতিমাসেই নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পাওয়া যায়। বয়স্ক ভাতা বর্তমানে G2P এর মাধ্যমে সরকার এর থেকে পাওয়া যায়। আবার মোবাইল ব্যংকিং এর মাধ্যমেও এই বয়স্ক ভাতা পাওয়া যায়।
বয়স্ক ভাতার আবেদন করার নির্দিষ্ট বয়স
বয়স্ক ভাতার আবেদন করার জন্য প্রত্যেক পুরুষ এবং মহিলাদের নির্দিষ্ট বয়সের প্রয়োজন হয়। বয়স্ক ভাতার আবেদন করার জন্য পুরুষ এর ৬৫ বয়স এবং মহিলাদের জন্য ৬২ বছর বয়স প্রয়োজন। এই নির্দিষ্ট বয়স এ পৌছালেই বয়স্ক ভাতা পাওয়ার জন্য যোগ্য হিসেবে ধরা হয়।
বয়স্ক ভাতায় মাসিক কত টাকা পাওয়া যায়
বয়স্ক ভাতা আবেদন করার পর মাসিক নির্দিষ্ট পরিমাণে বয়স্ক ভাতা পাওয়া যায়। বয়স্ক ভাতায় একজন ব্যক্তি মাসিক ৫০০ টাকা আর্থিক সহায়তা পায় সরকার এর নিকট হতে। এই টাকার পরিমাণ যদিও কম তবে ভবিষ্যতে এটার পরিমাণ ঊর্ধ্বগামী হতে পারে।
কারণ ১৯৯৮ সালে যখন প্রথম বয়স্ক ভাতা চালু করা হয় তখন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য বয়স্ক ভাতা ১০০ টাকা করে দেওয়া হতো। পরে তা ক্রমশ বাড়তে বাড়তে এখন ৫০০ টাকা হয়েছে। সুতরাং ধরাই যায় ভবিষ্যতে এই টাকার পরিমান বৃদ্ধি পেতে পারে।
[box type=”shadow” align=”aligncenter” class=”” width=””]বিদেশ যাওয়ার জন্য পুলিশ ক্লিয়ারেন্স করার নিয়ম[/box]
বয়স্ক ভাতা পাওয়ার যোগ্যতা
প্রত্যেক জিনিস পাওয়ার জন্য একটি যোগ্যতা লাগে। তেমনি বয়স্ক ভাতা পাওয়ার জন্যও একটি যোগ্যতা রয়েছে। বয়স্ক ভাতা পাওয়ার যোগ্যতা অর্থাৎ শর্ত গুলো আমি নিম্নে দিয়ে দিচ্ছি।
১. বয়স্ক ভাতা পাওয়ার প্রথম শর্ত হলো বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
২. বাংলাদেশের যে এলাকায় থাকা হয় সেখানের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
৩. আবেদন কারী এর অবশ্যই একটি জাতীয় পরিচয় পত্র (NID Card) কিংবা জন্ম নিবন্ধন থাকতে হবে।
৪. আবেদন কারী পুরুষের বয়স ৬৫ এবং মহিলাদের ৬২ বছর বয়স হতে হবে। আর এই বয়স অবশ্যই জাতীয় পরিচয় পত্র কিংবা জন্ম নিবন্ধন অনুযায়ী হতে হবে। বয়স বিবেচনায় কোনো সমস্যা হলে সরকারের সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত হবে।
৫. আবেদন কারী এর বার্ষিক আয় ১০,০০০ (দশ হাজার) টাকার কম হতে হবে। অর্থাৎ বছরে যত টাকা আয় হয় সেটাকে যদি ১২ দ্বারা ভাগ করা হয় তবে যে পরিমাণ পাওয়া যাবে তা যদি ১০,০০০ (দশ হাজার) টাকার কম হয় তবেই আপনি এই ধাপেরও যোগ্য হবেন।
বয়স্ক ভাতার অযোগ্যতা
বয়স্ক ভাতা পাওয়ার জন্য কিছু বিষয় যদি আবেদন কারী এর থেকে থাকে তবে সে বয়স্ক ভাতা পাওয়ার জন্য অযোগ্য হবে বলে গণ্য করা হবে। নিম্নে সে বিষয় গুলো দেওয়া হলো।
১. আপনি যদি সরকারী কর্মচারী থেকে থাকেন (অবসর প্রাপ্ত) তবে আপনি বয়স্ক ভাতার আওতায় থাকবেন না। কেননা সরকারী চাকরি থেকে অবসর নিলে এমনিতেও পেনশন দেওয়া হয় সরকার থেকে।
২. দুস্থ মহিলা হিসেবে ভিজিডি কার্ড ধারী হলে আপনি বয়স্ক ভাতা পাবেন না।
৩. বয়স্ক ভাতা ছাড়া অন্য কোনো সরকারী ভাতা এর আওতায় থাকলে আপনি বয়স্ক ভাতা পাবেন না
৪. কোনো বেসরকারি বা সমাজ সেবা মূলক প্রতিষ্ঠান থেকে ভাতা প্রাপ্ত হলেও আপনি বয়স্ক ভাতা পাওয়া থেকে অযোগ্য হবেন।
অনলাইনে বয়স্ক ভাতার আবেদন করার নিয়ম
অনলাইনে বয়স্ক ভাতার আবেদন করার নিয়ম খুবই সোজা। আপনারা যদি সব নিয়ম মেনে আবেদন করতে পারেন এবং সব কিছু ঠিক ঠাক থাকে তবে আপনি বয়স্ক ভাতা পাবেন। নিম্নে আবেদন করার নিয়ম দেওয়া হলো।
১. সমাজসেবা অধিদপ্তর এর বয়স্ক ভাতা আবেদন এর ওয়েবসাইট এ গিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে আবেদন করুন।
২. জাতীয় পরিচয় পত্র এর নাম্বার নম্বর ও জন্ম তারিখ দিয়ে বয়স্ক ভাতার আবেদন ফরম টি ডাউনলোড করুন এবং প্রিন্ট করে নিন।
৩. নিজের স্থানীয় চেয়ার ম্যান, পৌরসভার কাউন্সিলর এর স্বাক্ষর নিয়ে সমাজসেবা মাঠকর্মী কিংবা উপজেলা সমাজসেবা অফিস এ গিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র জমা দিন।
এই নিয়ম গুলো ফলো করলে আপনি খুব সহজেই আপনি বয়স্ক ভাতার জন্য আবেদন করতে পারবেন। তাই এই নিয়ম গুলো ফলো করবেন। তবে এখনা থেকে সম্পূর্ণ কিছু বুঝতে না পারলে নিচে দেওয়া ডিটেইলস নিয়ম গুলো ফলো করুন।
তবে মনে রাখবেন মাঝে মাঝে বয়স্ক ভাতা এর ওয়েব সাইট টি তে কিছু সমস্যার জন্য ওয়েব সাইট এ প্রবেশ করা যায় না। তখন লেখা থাকবে ❝সিস্টেম উন্নয়নের কাজ চলছে। সাময়িক অসুবিধার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত।❞
সমাজসেবা অধিদপ্তর ওয়েবসাইটে বয়স্ক ভাতার আবেদন করার নিয়ম
সমাজ সেবা অধিদপ্তর ওয়েব সাইট থেকে বয়স্ক ভাতার আবেদন করার জন্য নিচের বলা নিয়ম গুলো ফলো করুন।
ধাপ ১ঃ প্রথমেই বয়স্ক ভাতার আবেদন এর ওয়েবসাইট এ প্রবেশ করুন। বয়স্ক ভাতার আবেদন ওয়েবসাইট।
ধাপ ২ঃ এবার একটি পেজ পাবেন। সেখান থেকে নির্বাচন করুন বক্স এ ক্লিক করে “বয়স্ক ভাতা” অপশন টি সিলেক্ট করুন।
ধাপ ৩ঃ এবার আরেকটি ইন্টারফেস আসবে। সেখান থেকে প্রথম বক্স এ যার নাম এ আবেদন করছেন তার এনআইডি কার্ড এর নম্বর টি লিখুন। আর দ্বিতীয় বক্স এ তার জন্ম তারিখ টি সিলেক্ট করে দিন। এরপরে ❝যাচাই করুন❞ বাটনে ক্লিক করে দিন।
ধাপ ৪ঃ উপরের এনআইডি কার্ড টি এর তথ্য ঠিক হলে নতুন পেজ এ সব তথ্য অটোমেটিক পূরণ হয়ে যাবে। তবে যেগুলো পূরণ হবে না সেগুলো নিজে থেকে করে নিতে হবে।
ধাপ ৫ঃ এবার আবেদন কারী এর কিছু অতিরিক্ত তথ্য দিতে বলবে, সেগুলো হলোঃ
১. বৈবাহিক অবস্থা;
২.শিক্ষাগত যোগ্যতা;
৩. পরিবারের সদস্য সংখ্যা;
৪. পেশা;
৫. বার্ষিক আয়;
৬. স্বাস্থ্যগত বা কর্মক্ষমতা সংক্রান্ত তথ্য;
৭. সরকারি বা বেসরকারি আর্থিক সুবিধার তথ্য;
৮. বাসস্থান তথ্য;
৯. ভূমির পরিমাণ;
ধাপ ৬ঃ এবার যোগাযোগ করার জন্য কিছু তথ্য দিবে বলবে। সেখানে আবেদন এর ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, মোবাইল নম্বরটি কার সেটা সিলেক্ট করতে বলবে আর ইমেইল (যদি থাকে) এই অপশন গুলো পূরণ করতে বলবে।
ধার ৭ঃ এবার সব তথ্য দেখে শুনে আবেদন বাটনে ক্লিক করে দিবেন। মনে রাখবেন এবার আবেদন করার পর সেটা ঠিক করার আর অপশন পাবেন না।
ধাপ ৮ঃ আবেদন সাবমিট করে দিলে, প্রিন্ট নামক একটি অপশন পাবেন। সেই বাটনে ক্লিক করলে একটি PDF ফাইলে ফোন এ ডাউনলোড হয়ে যাবে। সেটা ডাউনলোড হয়ে গেলে আশে পাশের কোনো কম্পিউটার এর দোকান থেকে প্রিন্ট করে নিবেন। সর্বোচ্চ ১০ থেকে ২০ টাকা লাগবে এতে।
ধাপ ৯ঃ এবার প্রিন্ট করা ফরম টি এর নির্দিষ্ট যায়গায় পৌরসভার কাউন্সিলরের স্বাক্ষর নিয়ে সমাজসেবা মাঠকর্মী কিংবা উপজেলা সমাজসেবা অফিস এ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ জমা দিয়ে দিতে হবে।
বয়স্ক ভাতার আবেদন করার শেষ তারিখ
বয়স্ক ভাতার আবেদন করার শেষ তারিখ টি সমাজ সেবা অধিদপ্তর কর্তৃক নোটিশের মাধ্যমে জানানো হয় ওয়েবসাইটে। প্রত্যেক বছরেই নতুন ব্যক্তিদের বয়স্ক ভাতা আবেদন এর সুযোগ দেয়া হয় ওয়েব সাইটে।
যখন অনলাইনে বয়স্ক ভাতার আবেদন এর সুযোগ দেওয়া হয় তখন আবেদন করতে পারবেন। তাই মাঝে মাঝেই উক্ত ওয়েবসাইটে ঘুরে খোজ খরর নিয়ে রাখবেন।
বয়স্ক ভাতা মোবাইল ব্যাংকিং এ পাওয়ার উপায়
বাংলাদেশ সরকার এখন প্রায় সব ধরণের সরকারী আর্থিক সহায়তা, আবার উপবৃত্তি এর টাকা মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমেই প্রদান করে থাকে। এতে করে সাধারণ জনগনের দূর্ভোগ ও কষ্ট কমেছে। আর সরাসরি সরকার থেকে টাকা পাওয়ার জন্য দালাল এর চার্জ এর ও প্রয়োজন হয় না।
অনলাইনে আবেদন করার প্রক্রিয়া সফল হলে মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট যুক্ত করতে হবে। এর জন্য বয়স্ক ভাতা প্রাপ্ত ব্যক্তির জাতীয় পরিচয় পত্র দিয়ে সমাজ সেবা অফিসের নির্দেশনা মতে বিকাশ, নগদ বা রকেট একাউন্ট খুলে নিতে হবে। এতে মাসে মাসিক ভাতা পাওয়া যাবে।
শেষ কথা
বয়স্ক ভাতা হলো সরকার এর তরফ থেকে বয়স্কদের প্রতি সরকারের সম্মান প্রদর্শন আর্থিক সহায়তা। যারা গরিব, দুস্থ কর্মহীন নির্দিষ্ট বয়স পার করে ফেলেছেন তাদের জন্য এই ভাতা দেওয়া হয়।
তো প্রিয় বন্ধুরা আজকের এই পোস্ট এ আপনারা জানলেন, বয়স্ক ভাতার আবেদন করার নিয়ম। আশা করছি এই পোস্ট টি আপনাদের কাছে অনেক টা ভালো লেগেছে।
ভালো লেগে থাকলে কিন্তু অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন আমাদের। আর এরকম সব পোস্ট পেতে প্রতিদিন ভিজিট করতে থাকুন আমাদের এই ওয়েব সাইট টি তে। আবার দেখা হবে পরবর্তী কোনো পোস্ট এ। সে পর্যন্ত সকলে ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন। আল্লাহ হাফেয।