হ্যালো প্রিয় বন্ধুরা, আশা করি আপনারা সকলেই অনেক ভালো আছেন। আপনাদের কে আমাদের এই সাইটে আমার পক্ষ থেকে জানাই স্বাগতম। আজকের পোস্ট এ আমি আপনাদের সাথে বিলাসী গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর এই বিষয় টি নিয়ে কথা বলবো। তো চলুন দেরি না করে পোস্ট টি শুরু করে দেওয়া যাক।
সূচিপত্র
বিলাসী গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
প্রিয় শিক্ষার্থীরা, তোমাদের বইয়ের পাঠ্য বিষয় বস্তুর মধ্য অন্যতম ও প্রয়োজনীয় হলো বিলাসী গল্প। বিলাসী গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর নিচে কয়েকটি দেওয়া হলো। আশা করি সেগুলো তোমাদের কাজে লাগবে। নিচে বাছাই করা কিছু প্রয়োজনীয় এবং যে বিষয় থেকে বেশি প্রশ্ন করা হয় এটা থেকে সেগুলোর অংশ বিশেষ দেওয়া হলো।
বিলাসী গল্পের সৃজনশীল – ১
মুসলমান বন্ধুর বাড়িতে ভাত খাওয়ায় অপরাধ করে ভারত। সে ব্যাপারে বিধান নেওয়ার জন্য জমিদার শশাঙ্ক ন্যায়রত্ন রামনিধি চট্টোপাধ্যায়কে নির্বাচন করেন। ন্যায়রত্ন সমাজ পতিদের বৈঠকে ভারতের সমস্যার সাথে সম্পর্কহীন কিছু কাহিনী বলে চোখ বন্ধ করেন। কিছুক্ষন পর চোখ খুলে বলেন, ভারতের সর্বনিম্ন শাস্তি সমাজচ্যুতি। তার সাথে যারা বসবাস করে তারাও সমাজচ্যুত।
ক. কোন যুক্তিকে কলি যুগ বলা হয়?
খ. তাহার বয়স আঠারো কি আঠাশ ঠাহর করিতে পারিলাম না’ বুঝিয়ে বল।
গ. অনুচ্ছেদে লঘু পাপের মে শুরু শান্তি তা ‘বিলাসী’ গল্পের কোন ঘটনাকে মনে করিয়ে দেয়? তা তুলে ধর।
ঘ. অনুচ্ছেদের এবং ‘বিলাসী’ গল্পের সমাজপতিদের ধর্মরক্ষার কেঠার বিধান মানব ধর্মের পরিপন্থী। ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ
ক. হিন্দু পুরাণে বর্ণিত চার যুগের শেষ যুগকে কলি যুগ বলা হয়।
খ. অসুস্থ মৃত্যুঞ্জয়ের সেবায় বিলাসী নিজেকে বিসর্জন দিয়েছে। রাতদিন সেবা করে করে বিলাসীর শরীর একেবারে নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিল। এ কারণেই ন্যাড়া তার বয়স ঠাহর করতে পারে নি। মৃত্যুঞ্জয় একবার কঠিন রোগে আক্রান্ত হলে আত্মীয়স্বজন কিংবা পাড়া-প্রতিবেশীদের কেউ তার সেবায় এগিয়ে আসেনি। সাপুড়ে কন্যা বিদেশি মৃত্যুর কবল থেকে সে যাত্রায় মৃত্যুঞ্জয়কে রক্ষা করেছে। একদিন সন্ধ্যার অন্ধকারে ন্যাড়া মৃত্যুঞ্জয়কে দেখতেই পোরোবাড়িতে গেল। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখতে পায় বিদেশি মৃত্যুঞ্জয়ের সেবা করতে করতে ফুলদানির ফুলের মধু শুকিয়ে গেছে। তার প্রকৃত বয়স আঠারো কিংবা আঠাশ কোনটাই বুঝার উপায় ছিল না। তাই মেয়েরা আলোচ্য মন্তব্যটি করেছিল।
গ. অনুচ্ছেদে লঘু পাপের যে গুরু শাস্তি তা ‘বিলাসী’ গল্পের মৃত্যুঞ্জয় বিলাসীকে সমাজচ্যুত করার ধারাটিকে মনে করিয়ে দেয়। ‘বিলাসী’ গল্পের মৃত্যুঞ্জয় ছিল কায়স্থের সন্তান। কিন্তু সে সাপুড়ের মেয়ে বিলাসীকে বিয়ে করেছে। কিন্তু সে সাপুড়ের মেয়ে বিলাসীকে বিয়ে করেছে এবং তার rs হাতে ভাত পর্যন্ত খেয়েছে। তৎকালীন হিন্দু সমাজে কোন যুগের মানুষ নিচু বংশের মেয়েকে বিয়ে এবং তার হাতে ভাত খেলে পাপ হয় মনে করা হতো। মৃত্যুঞ্জয় সাপুড়ে কন্যা বিলাসীকে বিয়ে করে তার হাতে ভাত খেয়েছে বলে তাকে অন্নপাপের জন্য দায়ী করে সমাজচ্যুত করা হয়েছে।
উদ্দীপকের ভারত মুসলমান বাড়িতে ভাত খেয়ে অপরাধ করেছে। ন্যায়রত্ন সমাজপতিদের বৈঠকে ভারতকে সমাজচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেয়। ভারতে সমাজচ্যুত হওয়ার বিষয়টি বিলাসী গল্পে মৃত্যুঞ্জয় বিলাসীকে সমাজচ্যুত করার বিষয়টিকে মনে করিয়ে দেয়। কারণ উভয়ই অন্নপাপের জন্য দায়ী। উদ্দীপকের ভারত যেমন মুসলমান ঘরে খাবার খেয়ে অন্নপাপ করেছে তেমনি মৃত্যুঞ্জয় সাপুড়ের মেয়ে বিলাসীর হাতে খাবার খেয়ে অন্নপাপ করেছিল। তাইতো উভয়কেই সমাজচ্যুত করা হয়। তাই আমরা বলতে পারি, উদ্দীপকের ভারতে সমাজচ্যুত হওয়ার বিষয়টি ‘বিলাসী’ গল্পের মৃত্যুঞ্জয় ও বিলাসীর সমাজচ্যুত হওয়ার বিষয়টিকে ইঙ্গিত করে।
ঘ. অনুচ্ছেদের এবং ‘বিলাসী’ গল্পের সমাজ পতিদের ধর্মরক্ষার কেঠার বিধান মানবতার বিচারে মানব ধর্মের পরিপন্থী।
তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থা ছিল যেমন রক্ষণশীল তেমনি কুসংস্কারচ্ছন্ন। প্রেমের টানে সাপুড়ের মেয়ে বিলাসী মুমূর্ষু মৃত্যুঞ্জয়কে সেবা-যত্ন করে মৃত্যুর ধারা প্রান্ত থেকে ফিরিয়ে আনে এবং উভয় উভয়ের হৃদয় জয় করে পরিণত সূত্রে আবদ্ধ হয়। ফলে তারা সমাজ থেকে হয় বিতাড়িত। তাদের এই বিয়ে এবং ভালোবাসা তৎকালীন কুসংস্কারছন্ন গোঁড়া হিন্দু সমাজ মেনে নিতে পারেনি। উদ্দীপকের ভারত মুসলমান বন্ধুর বিয়ে বাড়িতে খেয়ে অপরাধ করেছিল। তাইতো ন্যায়রত্ন সমাজ পতিদের বৈঠকে ভারতের সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কহীন কিছু কাহিনী বলে চোখ বন্ধ করেন। চোখ খুলে তিনি ভারতকে সমাজচ্যুত শাস্তি প্রদান করেন, যা চরম মানবতাবিরোধী। বিলাসী গল্পের মৃত্যুঞ্জয় ও বিলাসীর ভাগ্যেও একই ঘটনা ঘটেছিল। মৃত্যুঞ্জয় বিলাসীর হাতে ভাত খাওয়ার অপরাধে সমাজচ্যুত হয় এবং বিলাসীকে সহ্য করতে হয় অমানবিক নির্যাতন, যেকোনো মানব ধর্মের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না।
তৎকালীন গোঁড়া হিন্দু সমাজের কাছে মানুষের জীবনের চেয়ে ধর্মের মিথ্যার বেসাতি বড় ছিল। তারা ধর্ম রক্ষার নামে মানুষের উপর যে অত্যাচার নির্যাতন চালাত তা মানব ধর্মের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। হিন্দু ছেলে মুসলমান ঘরে ভাত খাওয়ার জন্য, কায়স্থের ছেলে সাপুড়ে মেয়ের হাতের ভাত খাওয়ার জন্য সমাজচ্যুত হয়। সমাজপতিরা ধর্মের দোহাই দিয়ে তাদেরকে সমাজচ্যুত করে যা মানবতাবিরোধী। মানব ধর্মের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী তা হতে পারে না। কারণ পৃথিবীতে ধনী-গরীব, হিন্দু- মুসলমান, সাপুড়ে কায়ছের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তাদের প্রধান পরিচয় তারা মানুষ। কিন্তু উদ্দীপক ও ‘বিলাসী’ গল্পের সমাজপতিরা ধর্মের নামে যা করেছেন তা সত্যিই মানব ধর্মের পরিপন্থী।
বিলাসী গল্পের সৃজনশীল – ২
ভালোবাসা যে কোন বাধা মানে না, এটা প্রমাণ করেই ডাক্তারের ছেলে সুবোধ বিয়ে করল রিক্সাওয়ালার মেয়ে নন্দিতাকে। সুবোধের বাবা অগ্নিশর্মা হয়ে সুবোধকে বাড়ি থেকে বের করে দিলেন। সুবোধের বাবা ভেবেছেন হয়তো ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে আসবে। কিন্তু সুবোধের ভালোবাসা মহের চটকদার মোড়কে মোড়ানো ছিল না। নন্দিতা ও তার পরিবারকে নিয়ে গ্রামছাড়া সুবোধ। পা বাড়ালো অজানা ভবিষ্যতে।
ক. মৃত্যুঞ্জয়ের বাগানটা কত বিঘার ছিল?
খ. ভয় পাইবার সময় পাইলাম না’- উক্তিটির প্রেক্ষাপট বর্ণনা কর।
গ. ‘বিলাসী’ গল্পের সমাজবাস্তবতা উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে আলোচনা কর।
ঘ. উদ্দীপকের সুবোধ ‘বিলাসী’ গল্পের মৃত্যুঞ্জয় প্রতিনিধিত্ব করেছে- এ মন্তব্যের যথার্থতা বিচার কর।
উত্তরঃ
ক. মৃত্যুঞ্জয়ের বাগানটা কুড়ি-পঁচিশ ছিল।
খ. বাল্যবন্ধু মৃত্যুঞ্জয়কে দেখা শেষে বাড়ি ফেরার পথেই ‘বিলাসী’ গল্পের
কথক ন্যাড়া উদ্ধত উক্তিটি করেছেন। সাপুড়ে কন্যা বিলাসী একদিন সন্ধ্যার অন্ধকারে ন্যাড়া মৃত্যুঞ্জয়কে দেখতে পোরোবাড়িতে গেল। গভীর বনের মধ্যে দিয়ে অন্ধকার রাতে ফেরার পথে কিছুটা হলেও ভয় পাচ্ছিল। কিন্তু বিলাসীর সাহসের কথা মনে পড়তেই তার ভয় দূর হয়ে গেল। কেবল ভারতে থাকল, একটা মৃত্যুকল্প রোগী নিয়ে এমন স্থানে একা একটা মেয়ের রাত্রি পাড়ি দেওয়া কত কঠিন কাজ। মৃত্যুঞ্জয় তো যে কোন মুহূর্তে মারা যেতে পারত। তখন নিশ্চয় মেয়েটিকে স্বামীর মৃতদেহের পাশে বসে একাকী রাত কাটাতে হতো। এ পরিপ্রেক্ষিতে ন্যাড়া বিলাসীর সাহসের উৎস হিসেবে আবিষ্কার করল স্বামী মৃত্যুঞ্জয়ের প্রতি তার সীমাহীন ভালোবাসা। এ সত্য আবিষ্কারের ন্যাড়ার মন এমনই আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল যে শ্বাপদসংকুল পথ পাড়ি দিতে গিয়ে সে ভয় পাওয়ার সময়ই পায় নি।
গ. ‘বিলাসী’ গল্পের সমাজ বাস্তবতা উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে। উনিশ শতকে বাংলাদেশ বিশেষ হিন্দু সমাজের জাত-পাত শ্রেণি বর্ণ-বৈষম্য ছিল অমোঘ নিয়তির মতোই স্বাভাবিক ঘটনা। জাত্যভিমান অনেক ক্ষেত্রে মানবিক বোধ ও শাশ্বত সুন্দরকে ধ্বংস করেছে। সামাজিকভাবে জাত্যভিমান চাপিয়ে দেওয়া অনেক সুকুমার বৃত্তি বা মানবিক চাওয়া- পাওয়া অকালে ঝরে গেছে। ‘বিলাসী’ গল্পে যে সমাজ জীবন চিত্রিত হয়েছে তার মধ্যে জাতিগত বিভেদ সংকীর্ণতা এত নির্মমভাবে উদ্ভাসিত অঙ্কিত হতে চায়।
উদ্দীপকের সুবোধ ভালোবাসার টানে ডাক্তারের ছেলে হয়েছে রিক্সাওয়ালার মেয়ে নন্দিতা কে বিয়ে করে। সুবোধের বাবা অগ্নিশর্মা হয়ে সুবোধকে বাড়ি থেকে বের করে দিলেন। কারণ সুবোধের সমাজ জাতিভেদ প্রথায় আকীর্ণ। ‘বিলাসী’ গল্পের সমাজ ব্যবস্থা ও তাই। কারণ তৎকালীন হিন্দুসমাজ মৃত্যুঞ্জয় বিলাসীর প্রেম ও বিয়ের বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি। কায়স্থের ছেলে মৃত্যুঞ্জয় সাপুড়ে কন্যা বিলাসীকে বিয়ে করার অপরাধে মৃত্যুঞ্জয়কে সমাজচ্যুত হতে হয়। বিলাসী কে নিয়ে মৃত্যুঞ্জয় পরবর্তীকালে বেঁধে জীবন গ্রহণ করে যাযাবর হয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ায়।
আরো পড়ুনঃ শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
বিলাসী গল্পের সৃজনশীল – ৩
উজ্জয়িনীর রাজা বিক্রমাদিত্যের রাজসভার প্রখ্যাত জ্যোতিবিদ বরাহপুত্র মিহিরের স্ত্রী খনা। একদিন পিতা বরাহ এবং পুত্র মিহির আকাশের তারা গণনা করতে গিয়ে সমস্যায় পড়লে খনা এ সমস্যার সমাধান দেন। রাজা বিক্রমাদিত্য তার গুণে মুগ্ধ হন। গণনা করে খনার দেওয়া পূর্বাভাসে রাজ্যের কৃষকরা উপকৃত হতেন বলে রাজা বিক্রমাদিত্য খনাকে দশম রত্ব হিসেবে আখ্যা দেন। কিন্তু খনার এই খ্যাতি ও সম্মান অল্প কাছে নিচু হওয়ার লজ্জায় প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে বরাহের আদেশে মিহির খনার জিহ্বা কেটে দেন। এর কিছুকাল পরে খনার মৃত্যু হয়।
ক. খুড়া কোন বংশের?
খ. “ইহা আর একটি শক্তি’- বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. বিলাসী চরিত্রের কোন দিকটি খনার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ তা বর্ণনা কর।
ঘ. ‘মৃত্যুগ্রয় ও মিহির পরস্পর বিপরীত চরিত্রের মানুষ ।’_ মন্তব্যটি যাচাই কর।
উত্তরঃ
ক. খুড়া মিত্তির বংশের।
খ. ‘ইহা আর একটি শক্তি’ কথাটি দ্বারা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার প্রকৃত ভালোবাসার প্রসঙ্গকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। স্বামী-স্ত্রী বহুবছর একত্রে বসবাস করলেও সত্যিকারের ভালোবাসার সন্ধান খুব কম যুগলই পায়। আলোচ্য গল্পে প্রসঙ্গক্রমে গল্পকথক তাঁর এক আত্মীয়ার উদাহরণ টেনেছেন। সেই নারী স্বামীর সাথে পঁচিশ বছর ঘর করেছে। অথচ স্বামীর মৃতদেহ আগলে পাঁচ মিনিটও একাকী থাকার সাহস তার নেই। এর কারণ প্রকৃত ভালোবাসার সম্পর্কের অনুপস্থিতি। স্বামীর মৃতদেহের কাছে থাকার জন্য প্রয়োজন ছিল আর একটু শক্তি, অর্থাৎ খাঁটি ভালোবাসা। প্রশ্নোক্ত উদ্ভিটির মধ্য দিয়ে এ বিষয়টিই ইঙ্গিতময় হয়ে উঠেছে।
গ. বিলাসী চরিত্রের করুণ পরিণতির দিকটি উদ্দীপকের খনার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
‘বিলাসী’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র বিলাসী। উচ্চবর্ণের মৃত্যুঞ্জয় তাকে ভালোবেসে বিয়ে করে। কিন্তু রক্ষণশীল সমাজ তাদের এই সম্পর্ককে মেনে নেয়নি। ফলে সমাজের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে মৃত্যুঞ্জয় নিজের জাত বিসর্জন দিয়ে সাপুড়ে হয়ে ওঠে। একদিন গোখরো সাপ ধরতে গিয়ে সাপের কামড়ে তার মৃত্যু হয়। স্বামীর মৃত্যুর শোক সইতে না পেরে বিলাসীও বিষপানে আত্মহত্যা করে।
উদ্দীপকে উল্লিখিত খনা জ্যোতির্বিদ্যায় বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। তাঁর দেওয়া পূর্বাভাসে কৃষকরা উপকৃত হলে রাজদরবারে তাঁর মর্যাদা বেড়ে যায়। তাঁর এই সুনাম অর্জনের বিষয়টিকে শ্বশুর বরাহ ভালোভাবে নেননি। শুধু তাই নয়, রাজসভায় প্রতিপত্তি এবং নারীর কাছে সম্মান হারানোর ভয়ে তাঁর শ্বশুর বরাহ নিজের ছেলেকে খনার জিহ্বা কেটে নেওয়ার আদেশ দেন। পিতার আদেশ মতো পুত্র মিহির নিজ স্ত্রী খনার জিভ কেটে নিলে কিছুদিন পর খনার মৃত্যু হয়। একইভাবে, ‘বিলাসী’ গল্পের বিলাসীও রক্ষণশীল সমাজের প্রতিহিংসার শিকার। এ কারণেই তার স্বামী মৃত্যুঞ্জয়কে সর্বস্ব হারিয়ে সাপুড়ে হতে হয় এবং পরিণতিতে সর্প দংশনে মৃত্যু হয় তার। আর পতিঅন্ত্য প্রাণ বিলাসীও স্বামীর মৃত্যু শোক সইতে না পেরে আত্মহত্যা করে। অর্থাৎ প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও আলোচ্য গল্পের বিলাসী এবং উদ্দীপকের খনা উভয়েই করুণ পরিণতির শিকার। এ দিক থেকে খনার সাথে বিলাসীর সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়।
ঘ. মৃত্যুঞ্জয় স্ত্রীকে গভীরভাবে ভালোবাসলেও উদ্দীপকের মিহির স্ত্রীর মৃত্যুর
কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ‘বিলাসী’ গল্পটি বিলাসী ও মৃত্যুঞ্জয়ের প্রণয় এবং তাদের করুণ পরিণতিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে। মৃত্যুপথযাত্রী মৃত্যুঞ্জয়কে নিম্নবর্ণের বিলাসী সেবা-শুশ্রূষা করে সুস্থ করে তুললে ভালোবেসে তাকে বিয়ে করে সে। বিলাসীর হাতে মৃত্যুঞ্জয় ভাত খাওয়ার অজুখতে গ্রামবাসীর প্রতিহিংসার শিকার হয় তারা। অবশেষে মৃত্যুঞ্জয় জাত বিসর্জন দিয়ে বিলাসীর সাথে ঘর বাঁধে এবং পুরোদস্তুর সাপুড়ে হয়ে ওঠে।
উদ্দীপকের মিহিরের স্ত্রী খনা ছিলেন অত্যন্ত গুণী। জ্যোতির্বিদ শ্বশুর ও স্বামী আকাশের তারা গণনা করতে গিয়ে সমস্যায় পড়লে বন্য নারীর কাছে প্রতিপত্তি হারানোর বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি। পরিশেষে তাঁর নির্দেশে পুত্র মিহির খনার জিহ্বা কেটে নিলে ঘনায় মৃত্যু হয়। স্ত্রীর প্রতি মিহিরের এমন ঘৃণ্য আচরণের বিপরীতে আলোচ্য গল্পের মৃত্যুঞ্জয় স্ত্রী বিলাসীর প্রতি অনুরত্ব ও দায়িত্বশীল ছিল। সাপুড়ে
মৃত্যুঞ্জয় অকৃত্রিমভাবে বিলাসীকে ভালোবেসেছে। নিজে উচ্চবর্ণের হলেও সাপুড়ের মেয়ে বিলাসীকে বিয়ে করতে দ্বিধা করেনি সে। তাদের ভালোবাসা রক্ষণশীল ও অনুদার গ্রামীণ সমাজ মেনে নিতে না পারায় সে জাত বিসর্জন দিয়েছে অবলীলায়। বিলাসীর সাথে। বেদেপল্লিতে গিয়ে ঘর বেঁধে সাপুড়ে হয়েছে। নিজের বিশাল সহায়-সম্পত্তি হারানোর ভয় তাকে এতটুকুও আচ্ছন্ন করেনি। পক্ষান্তরে, উদ্দীপকের মিহির স্ত্রীর খ্যাতিতে খুশি না হয়ে বরং প্রতিহিংসাপরায়ণ পিতার কথায় তার জিহ্বা কেটে নেওয়ার মতো গর্হিত কাজ করেন। স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা থাকলে তিনি এমনটি অন্যায় করতে পারতেন না। সেদিক বিবেচনায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথাযথ।
বিলাসী গল্পের আরো সৃজনশীল
প্রিয় বন্ধুরা উপরে তোমাদের জন্য ৩ টি সৃজনশীল প্রশ্ন এবং উত্তর দেওয়া হয়েছে। আর সেই আলোকে নিচে আরো কয়েকটি সৃজনশীল দেওয়া হলো উত্তর ছাড়া। সেইগুলো তোমরা উপরের সৃজনশীল এবং পাঠ্য বইয়ের আলোকে সলভ করার চেষ্টা করবে।
বিলাসী গল্পের সৃজনশীল – ৪
সৌদামিনী মালো স্বামীর মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারসূত্রে ধানী জমি, বসতবাড়ি, পুকুরসহ কয়েক একর সম্পত্তির মালিক হয়। এই সম্পত্তির ওপর নজর পড়ে সৌদামিনীর জ্ঞাতি দেওর মনোরঞ্জনের। সৌদামিনীর সম্পত্তি দখলের জন্য সে নানা কৌশল অবলম্বন করে। একবার সৌদামিনী দুর্ভিক্ষের সময় ধান ক্ষেত্রের পাশে একটি মানবশিশু খুঁজে পায়। অসহায়, অসুস্থ শিশুটিকে সে তুলে এনে পরম যত্নে আপন সন্তানের মতো লালন পালন করে। মনোরঞ্জন সৌদামিনীকে সমাজচ্যুত করতে প্রচার করে যে, নমশূদ্রের ঘরে ব্রাহ্মণ সন্তান পালিত হচ্ছে। এ যে মহাপাপ, হিন্দু সমাজের জাত ধর্ম শেষ হয়ে গেল।
ক. ‘বিলাসী’ গল্পের বর্ণনাকারী কে?
খ. মৃত্যুঞ্জয়ের ‘জাতবিসর্জনের’ কারণ বর্ণনা কর।
গ. সৌদামিনী চরিত্রের কোন বৈশিষ্ট্যটি বিলাসীর চরিত্রের সঙ্গে মিলে যায়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘মনোরঞ্জন যেন বিলাসী গল্পের খুড়ারই প্রতিচ্ছবি’- বিষয়টি মূল্যায়ন কর।
বিলাসী গল্পের সৃজনশীল – ৫
সুধীর রায় কুলীন বংশের লোক। তার বাগান বাড়িতে কেশব নামের এক মালি কাজ করে। নিচু বংশের বলে তিনি মালিকে তুচ্ছতাচ্ছিল্যের চোখে দেখেন। একদিন তিনি বাগান বাড়িতে তার বসার চেয়ারে মালিকে বসতে দেখে রাগান্বিত হন। তিনি তৎক্ষনাৎ চেয়ারটি ভেঙে ফেলেন এবং তার রক্ষীকে দিয়ে বেদম প্রহার করান। এর কিছুদিন পর এ বাগান বাড়িতে তিনি হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তাঁকে দ্রুত চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার কোনো যানবাহন পাওয়া গেল না। এ অবস্থায় কেশব অস্থির হয়ে পড়ে। সে সময়ক্ষেপণ না করে সুধীর রায়ের অজ্ঞান দেহটাকে নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে প্রাণপণে ছুটতে থাকে। দীর্ঘ পথ পার হয়ে অবশেষে চিকিৎসাকেন্দ্রে পৌঁছায়। চিকিৎসা-সেবা পেয়ে তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন।
ক. বিলাসীর পারিবারিক পদবী কী?
খ. কোন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে খুঢ়া মৃত্যুঞ্জয়ের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে? ব্যাখ্যা কর।
গ. সুধীর রায়ের আচরণে সমাজের কোন দিকটি প্রকাশ পেয়েছে? ‘বিলাসী’ গল্প অবলম্বনে উত্তর দাও।
ঘ. কেশবের চারিত্রিক গুনাবলির আলোকে ‘বিলাসী’ গল্পে কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নীচতলার মানুষগুলোকে যে মানব-মহিমি দিয়ে চিত্রিত করেছেন তা প্রমাণ কর।
বিলাসী গল্পের সৃজনশীল – ৬
অনির্বাণ ব্রাহ্মণের ছেলে। কিন্তু বিলেতফেরত উচ্চশিক্ষিত অনির্বাণ ধর্মীয় অনেক কিছুই মানে না। বিশেষ করে বর্ণভেদ প্রথা তার কাছে মানবতাবিরোধী বলে মনে হয়। সে বাগানের মসনা মালির অপূর্ব সুন্দরী, শিক্ষিতা মেয়ে নির্মলাকে বিয়ে করে, নিজে পছন্দ করে। নিম্নবর্ণ বলে পরিবারের কেউ এ বিয়ে মেনে নিল না। পিতা জয়ন্ত বাবু অনির্বাণকে তার সমস্ত কিছু থেকে বঞ্চিত করলেন। সমাজের সংস্কারবাদী হিন্দুরা তাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে একঘরে করল। অনির্বাণ নির্মলাদের সবাইকে নিয়ে শহরে চলে গেল।
ক. কামাখ্যা কী?
খ. মৃত্যুঞ্জয়ের প্রতি খুড়োর বৈরী মনোভাবের কারণ কী?
গ. উদ্দীপকের অনির্বাণ ও নির্মলার বিয়ে প্রসঙ্গে গ্রামবাসীর ক্ষোভ ‘বিলাসী’ গল্পের কোন অংশের সাথে মিল পাওয়া যায়।- ব্যাখ্যা কর।
ঘ. প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও নির্মলা ও বিলাসী দুজনই হিন্দু সমাজের অনুদারতা ও বর্ণপ্রথার শিকার। মূল্যায়ণ কর।
শেষ কথা
তো প্রিয় বন্ধুরা আজকের এই পোস্ট এ আপনারা জানলেন কয়েকটি বিলাসী গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর এবং এরই সাথে কিছু এক্সট্রা সৃজনশীল প্রশ্ন। আশা করছি এই পোস্ট টি আপনাদের কাছে অনেক টা ভালো লেগেছে।
ভালো লেগে থাকলে কিন্তু অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন আমাদের। আর এরকম সব পোস্ট পেতে প্রতিদিন ভিজিট করতে থাকুন আমাদের এই ওয়েব সাইট টি তে। আবার দেখা হবে পরবর্তী কোনো পোস্ট এ। সে পর্যন্ত সকলে ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন। আল্লাহ হাফেয।