হ্যালো প্রিয় বন্ধুরা, আশা করি আপনারা সকলেই অনেক ভালো আছেন। আপনাদের কে আমাদের এই সাইটে আমার পক্ষ থেকে জানাই স্বাগতম। আজকের পোস্ট এ আমি আপনাদের সাথে লালসালু উপন্যাসের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর এই বিষয় টি নিয়ে কথা বলবো। তো চলুন দেরি না করে পোস্ট টি শুরু করে দেওয়া যাক।
সূচিপত্র
লালসালু উপন্যাসের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
প্রিয় একাদশ – দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা, তোমাদের বইয়ের পাঠ্য বিষয় বস্তুর মধ্য অন্যতম ও প্রয়োজনীয় হলো লালসালু উপন্যাস। লালসালু উপন্যাসের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর নিচে কয়েকটি দেওয়া হলো। আশা করি সেগুলো তোমাদের কাজে লাগবে। নিচে বাছাই করা কিছু প্রয়োজনীয় এবং যে বিষয় থেকে বেশি প্রশ্ন করা হয় এটা থেকে সেগুলোর অংশ বিশেষ দেওয়া হলো।
লালসালু উপন্যাসের সৃজনশীল – ১
সালামতপুর গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই নিরক্ষর, কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও ধর্মান্ধ। গ্রামে বাস করে এক শিক্ষিত যুবক, নাম তার কামাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ. ডিগ্রি লাভ করে গ্রামে ফিরে এসেছে গ্রামের উন্নয়ন করার জন্য। গ্রামের মানুষকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার লক্ষ্যে গ্রামে সে একটি মূল প্রতিষ্ঠা করতে চায়। সেই উদ্দেশ্যে গ্রামের লোকজনকে ডেকে সভা আহ্বান করলে গ্রামের প্রভাবশালী ব্যক্তি বাদল মাতব্বর কামালের স্কুল প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে মক্তব গড়ার পক্ষে মতামত দেন। কামাল এর প্রতিবাদ করলে কামালকে বাদল মাতব্বর তার সাঙ্গোপাঙ্গদের সহযোগিতায় সুকৌশলে গ্রাম ছাড়তে বাধ্য করেন।
ক. গারো পাহাড় মধুপুরগড় থেকে কত দিনের পথ
খ. শস্যের চেয়ে টুপি বেশি, ধর্মের আগাছা বেশি” – ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের কামালের সাথে ‘লালসালু’ উপন্যাসের আক্কাসের যে সাদৃশ্য রয়েছে তা নিজের ভাষায় বর্ণনা কর ।
ঘ. “উদ্দীপকের বিষয়বস্তু ‘লালসালু’ উপন্যাসের খণ্ডচিত্র মাত্র, সামগ্রিক চিত্র নয়”- বিশ্লেষণ কর।
উত্তরঃ
ক. গারো পাহাড় মধুপুর গড় থেকে তিন দিনের পথ।
খ. “শস্যের চেয়ে টুপি বেশি, ধর্মের বেশি”— উক্তিটিতে বোঝানো হয়েছে যে, খাদ্য না থাকলেও লোক দেখানো ধর্মচর্চায় কেউ কার্পণ্য করে না
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ ‘লালসালু’ উপন্যাসে যে এলাকার বর্ণনা। দিয়েছেন সেখানকার মানুষ প্রচণ্ড অভাবী। এই অভাবের মধ্যেও তারা ধর্মচর্চা করে। ঘরে খাদা না থাকলেও সেই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে ধর্মচর্চায় কোনো কার্পণ্য নেই। তাদের মধ্যে সবাই খোদার ভয়ে ধর্মচর্চা করে এমন নয়। কেউ কেউ ধর্মের নামে প্রতারণা ও ভন্ডামি করে। এই প্রতারকরাই ধর্মের আগাছা। তাই লেখক আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।
গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘লালসালু’ উপন্যাসের আব্বাসের সাদৃশ্য রয়েছে।
শিক্ষা মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসে। শিক্ষা ছাড়া মানুষের জীবনে সার্বিক উন্নতি বিধান সম্ভব নয়। একজন শিক্ষিত মানুষ সবসময় চান অন্যরাও শিক্ষার আলোয় আলোকিত হোক; অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার থেকে মুক্তি পাক।
উদ্দীপকে এক শিক্ষিত যুবক কামাল তার গ্রামের নিরক্ষর, কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও ধর্মান্ধ মানুষকে শিক্ষিত করতে গ্রামে ফুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। কামালের স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ ব্যর্থ। করে দিয়ে বাদল মাতব্বর সুকৌশলে তাকে গ্রামছাড়া করেন। উদ্দীপকের এই বিষয়টি ‘লালসালু’ উপন্যাসের স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। মহব্বতনগর গ্রামের অশিক্ষিত, অন্ধবিশ্বাসী মানুষদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে আব্বাস সেই গ্রামে স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চায়। কিন্তু শিক্ষিত মানুষ মজিদের মাজার ব্যবসায়ের অন্তরায় হতে পারে। তাই মজিদ সুকৌশলে আব্বাসের স্কুল প্রতিষ্ঠাকে ব্যর্থ করে দিয়ে গ্রামে মসজিদ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করে।
তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকের কামালের চিন্তা ও কাজের সঙ্গে আলোচ্য উপন্যাসের আক্কাসের সাদৃশ্য রয়েছে।
ঘ. “উদ্দীপকের বিষয়বস্তু ‘লালসালু’ উপন্যাসের খণ্ডচিত্র মাত্র, সামগ্রিক চিত্র নয়”- মন্তব্যটি যথার্থ।
সমাজে কিছু মানুষ সমাজের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করে, আবার কিছু মানুষ নিজেদের স্বার্থে সমাজের অমঙ্গল ডেকে আনে। সমাজে শিক্ষিত, অশিক্ষিত, ধার্মিক, প্রতারক সব ধরনের লোকই দেখা যায়। আমিত্ব রক্ষায় এসব মানুষের কর্মকাণ্ডও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে
উদ্দীপকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ. পাস করা শিক্ষিত যুবক কামালের নিজ গ্রামে স্কুল প্রতিষ্ঠার বার্থ চেষ্টা এবং স্বার্থপর বাদল মাতব্বরের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে গ্রামছাড়া হওয়ার বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে। এই বিষয়টি ‘লালসালু’ উপন্যাসের শিক্ষিত যুবক আব্বাসের মহব্বতনগর গ্রামে স্কুল প্রতিষ্ঠার ব্যর্থ চেষ্টার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। আব্বাস ধূর্ত মজিদের ষড়যন্ত্রে এবং মসজিদ প্রতিষ্ঠায় অন্ধভক্ত কুসংস্কারাচ্ছন্ন অশিক্ষিত গ্রামবাসীর সমর্থনের কারণে স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। ‘লালসালু’ উপন্যাসে এ বিষয়টি ছাড়াও আরও অনেক বিষয় রয়েছে। যেগুলো উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়নি।
‘লালসালু’ উপন্যাসে প্রতারক ধর্মব্যবসায়ী মজিদের ভণ্ডামি তুলে ধরা হয়েছে। এখানে কুসংস্কারাচ্ছন্ন গ্রামবাসীর পীর- মাজারে বিশ্বাস, নারীর প্রতি অমানবিক আচরণ, সামাজিকভাবে নারীর অধিকারহীনতা, গ্রামে ধনী রাক্তির প্রভাব ইত্যাদি বিষয় বর্ণিত হয়েছে, যা উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়নি। এসব দিক বিচারে তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।
লালসালু উপন্যাসের সৃজনশীল – ২
মেহের আলী রসুলপুর গ্রামের একজন বিত্তবান লোক । প্রতিপত্তির মালিক হওয়ার জন্য গ্রামের সকলে তাকে বেশ সম্মান করে। অপরদিকে, মেহের আলী সম্মানের চোখে দেখে তারই গ্রামে বসবাসরত সোলায়মান আলীকে। তার উপর মেহের আলীর অগাধ বিশ্বাস। তাই সোলায়মান আলী মৌখিকভাবে যে নির্দেশনাই দেন মেহের আলী তা বাস্তবায়ন করতে কুণ্ঠাবোধ করে না। একদিন সোলায়মান আলী মেহের আলীকে বললেন, “মেহের, তোমার স্ত্রী সংসারে অশুভ শক্তির ছায়ারূপে বিরাজ করছে। তাকে তুমি অবিলম্বে তালাক দাও।” এমন নির্দেশনা পেয়ে কালবিলম্ব না করে স্ত্রীকে তালাক দেয় মেহের আলী।
ক. কে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত?
খ. “জমিলা যেন ঠাটাপড়া মানুষের মতো হয়ে গেছে”- বাক্যটি ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের মেহের আলী ‘লালসালু’ উপন্যাসের কোন চরিত্রের প্রতীক বহন করে? যুক্তিসহকারে আলোচনা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের মেহের আলীর স্ত্রীর জীবন এবং ‘লালসালু’ উপন্যাসের আমেনা বিবির জীবনের পরিণতি একই”— মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।
উত্তরঃ
ক. খেতানির মা পক্ষাঘাতে আক্রান্ত।
খ. “জমিলা যেন ঠাটাপড়া মানুষের মতো হয়ে গেছে”- বাক্যটিতে জমিলার প্রতিক্রিয়াহীন হয়ে যাওয়ার বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে।
কিশোরী বয়সেই বিয়ে হয়ে মজিদের ঘরে আসে জমিলা। দুনিয়া সম্পর্কে সে তেমন কিছুই জানে না, জানার প্রয়োজনও মনে করে না। একদিন সকালে খ্যাংটা বুড়ি মাজারে এসে মৃত ছেলেকে জীবিত করে তোলার জন্য মজিদকে লক্ষ্য করে আর্তনাদ করে। মজিদ তাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলে সে পাঁচ পয়সা মজিদের উদ্দেশে ছুড়ে দিয়ে বলে তার ছেলেকে ফেরত দিতে। এই পুরো ঘটনাটি জমিলা নিজের চোখে পর্যবেক্ষণ করে প্রতিক্রিয়াহীন হয়ে যায়। জমিলার এমন নীরবতাকেই প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটির মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে।
গ. উদ্দীপকের মেহের আলী ‘লালসালু’ উপন্যাসের খালেক ব্যাপারী চরিত্রের প্রতীক বহন করে।
অশিক্ষা ও অসচেতনতার কারণে মানুষ কুসংস্কারে বিশ্বাস করে। এরই সুযোগ নেয় সমাজের একশ্রেণির স্বার্থপর মানুষ। তারা আত্মস্বার্থসিদ্ধির জন্য ধর্মের আশ্রয় নিয়ে মিথ্যার ফাঁদ পাতে।
উদ্দীপকে প্রতিপত্তির অধিকারী রসুলপুর গ্রামের মেহের আলীর প্রতি গ্রামবাসীর সম্মান এবং ঐ গ্রামের সোলায়মান আলীকে মেহের আলীর অগাধ বিশ্বাসের কথা বলা হয়েছে। এমনকি সোলায়মান আলীর কথায় মেহের আলী তার স্ত্রীকে তালাক পর্যন্ত দিয়ে দেয়। এই ঘটনাটি লালসালু’ উপন্যাসের ভণ্ড মজিদের পরামর্শে খালেক ব্যাপারীর স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। খালেক ব্যাপারী মহব্বতনগর গ্রামের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। আর সে সম্মান করে মাজার ব্যবসায়ী ভক্ত মজিদকে। মজিদ আমেনা বিবির ওপর প্রতিশোধ নিতে খালেক ব্যাপারীকে বলে স্ত্রী আমেনা বিবিকে তালাক দিতে। ব্যক্তিত্বহীন খালেক ব্যাপারী মজিদের কথা শুনে স্ত্রী আমেনা বিবিকে তালাকও দেয়। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের মেহের আলী উপন্যাসের খালেক ব্যাপারীর চরিত্রের প্রতীক বহন করে।
ঘ. “উদ্দীপকের মেহের আলীর স্ত্রীর জীবন এবং ‘লালসালু’ উপন্যাসের আমেনা বিবির জীবনের পরিণতি একই” – মন্তব্যটি যথার্থ
পুরুষশাসিত সমাজে নারীরা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়। বিশেষ করে স্ত্রীরা স্বামীর গৃহে অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়। তারা তাদের স্বামীদের স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদ করতে পারে না। সব নির্যাতন মুখ বুজে সহ্য করে চলে।
উদ্দীপকে সোলায়মান আলীর নির্দেশনায় মেহের আলী স্ত্রীকে কোনো রকম চিন্তা ভাবনা না করেই তালাক দিয়েছে। বিষয়টি ‘লালসালু’ উপন্যাসে মজিদের পরামর্শে পালের ব্যাপারীর স্ত্রী আমেনাকে তালাক দেওয়ার সঙ্গে একসূত্রে গাঁথা। ভন্ড ধর্মব্যবসায়ী মজিদ আত্মস্বার্থ এবং জেদের বশবর্তী খালেক ব্যাপারীকে বলেছে তার স্ত্রী আমেনা বিবিকে তালাক দিতে। তার কথামতো খালেক ব্যাপারী তার প্রথম স্ত্রী আমেনাকে তালাক দেয়। উপন্যাসের আমেনা বিবির পরিণতির সঙ্গে উদ্দীপকের মেহের আলীর স্ত্রীর জীবন সাদৃশ্যপূর্ণ। 4
‘লালসালু’ উপন্যাসের নিঃসন্তান আমেনা বিবি সন্তান লাভের আশায় মজিদের নিষেধ অমান্য করে আওয়ালপুরে আগর পীরের পানিপড়া খেতে চেয়েছিল। তাই কৌশলে মজিদ খালে ব্যাপারীকে পরামর্শ দিয়ে আমেনা বিবিকে তালাক দেওয়ায়। উদ্দীপকের মেহের আলীও তার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে অসহায়ত্বের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এসব দিক বিচারে তাই বলা যায়, প্রশ্নোত্ত মন্তব্যটি যথার্থ।
লালসালু উপন্যাসের সৃজনশীল – ৩
মাহাবুব সাহেব মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে অঢেল টাকা উপার্জন করেন। এলাকার রাস্তা, সেতু, মসজিদ, মন্দির নির্মাণে তার অকাতর দান রয়েছে নিঃসন্তান মাহাবুবের পিতৃ-হৃদয়ের আস্বাদ পূরণে অনেকেই তাকে দ্বিতীয় বিয়ের পরামর্শ দেন। স্ত্রী শামিমাও এ প্রস্তাব সমর্থন করেন। মাহাবুব তার এক বোনের নবজাতককে নিজ সন্তান হিসেবে প্রতিপালন করে স্ত্রী শামিমার মাতৃ-হৃদয়ের অতৃপ্ত বাসনা পূরণ করেন।
ক. ‘লালসালু’ কোন ধরনের উপন্যাস?
খ. “কেবল ধীরে ধীরে কাঠের মত শক্ত হয়ে ওঠে তার মুখটা” – কার মুখ শক্ত হয়ে ওঠে এবং কেন?
গ. উদ্দীপকের মাহাবুবের সাথে ‘লালসালু’ উপন্যাসের খালের ব্যাপারীর চরিত্রের তুলনা কর।
ঘ. উদ্দীপকে প্রতিফলিত ইতিবাচক জীবনচেতনা ‘লালসালু’ উপন্যাসে অনুপস্থিত।” – উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।
উত্তরঃ
ক. ‘লালসালু’ সামাজিক সমস্যামূলক উপন্যাস।
খ. মজিদের ব্যবহারে জমিলার মুখ ধীরে ধীরে কাঠের মতো শক্ত হয়ে ওঠে।
‘লালসালু’ উপন্যাসে কিশোরী জমিলার বিয়ে হয় মাঝবয়সী মজিদের সঙ্গে। এক রাতে জমিলা নামাজ পড়ে ঘুমিয়েছে কিনা তা জানার জন্য মজিদ তার সঙ্গে অত্যন্ত রূঢ় ব্যবহার করে। সে জমিলাকে ঘুম থেকে আচমকা এমনভাবে টেনে তোলে যে, তার রাগে ক্ষোভে তার প্রচণ্ড জেদ হয়। মজিদ অনেক কথা বলার পরেও জমিলা মূর্তির মতো বসে থাকে। মজিদ তার মাঝে তার জাগানোর জন্য অনেক কথা বলে। কিন্তু জমিলা কোনো কথারই উত্তর দেয় না। কেবল তার মুখ কাঠের মতো শক্ত আকার ধারণ করে। প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি এই প্রসঙ্গেই করা হয়েছে।
গ. উদ্দীপকের মাহাবুবের সঙ্গে ‘লালসালু’ উপন্যাসের খালেক ব্যাপারীর অর্থনৈতিক অবস্থা এবং নিঃসন্তান হওয়ার দিক থেকে সাদৃশ্য থাকলেও মানসিকতার দিক থেকে বৈসাদৃশ্য।
বাবা-মায়ের কাছে সবচেয়ে প্রিয় হলো তার সন্তান। সন্তানের জন্য নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় ত্যাগ স্বীকার করতেও প্রস্তুত থাকেন বাবা-মা। অন্যদিকে যাদের সন্তান নেই, তাদের জীবন হয়ে যায় মরুভূমি ।
উদ্দীপকের মাহাবুব সাহেব অনেক টাকা-পয়সার মালিক। কিন্তু তার কোনো সন্তান নেই। দ্বিতীয় বিয়ের জন্য অনেকে এমনকি তার স্ত্রী পরামর্শ দিলেও তিনি রাজি হননি। বরং স্ত্রীর শূন্য কোল ভরিয়ে দিতে তার এক বোনের নবজাতক সন্তানকে তুলে দিয়েছেন স্ত্রীর কোলে। ‘লালসালু’ উপন্যাসের খালেক ব্যাপারী অনেক টাকা-পয়সার মালিক। সে নিঃসন্তান হওয়ায় পুনরায় দ্বিতীয় বিয়ে করে সন্তানের পিতা হয়। অন্যের প্ররোচনায় প্রথম স্ত্রীকে তালাক দেয়। উদ্দীপকে মাহাবুর সাহেব নিজের এবং স্ত্রীর নিঃসঙ্গতা এড়িয়ে যেতে উদ্যোগী হয়েছেন। কিন্তু উপন্যাসের খালেক ব্যাপারীর মাঝে এমন উদ্যোগ দেখা যায় না। তাই বলা যায়, মাহাবুবের সঙ্গে খালেক ব্যাপারীর দান করা ও নিঃসন্তান হওয়ার দিক থেকে সাদৃশ্য থাকলেও মানসিকতার দিক থেকে বৈসাদৃশ্য রয়েছে।
ঘ. “উদ্দীপকে প্রতিফলিত ইতিবাচক জীবনচেতনা ‘লালসালু’ উপন্যাসে অনুপস্থিত।”- মন্তব্যটি যথার্থ।
সমাজ চলে সব মানুষের সার্বিক প্রচেষ্টায়। কিন্তু সমাজের সবাইকে বঞ্চিত করে বিশেষ এক বা দুজন যখন নীতিনির্ধারকের ভূমিকা পালন করে আর বাকিদের মতামতকে গুরুত্ব দেয় না, তখন সামাজিক ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়ে। সেই সমাজে উন্নতির স্পর্শ লাগে না।
উদ্দীপকে মাহাবুব সাহেব নিঃসন্তান হলেও তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন না। বরং সন্তানের অভাব পূরণে তার এক বোনের সন্তানকে প্রতিপালন করার সিদ্ধান্ত নেন। তার এমন সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে উদার মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। অপরপক্ষে ‘লালসালু’ উপন্যাসে খালেক ব্যাপারী সম্পদশালী হলেও তার সন্তান না থাকায় প্রথম স্ত্রীকে রেখে পুনরায় দ্বিতীয় বিয়ে করে সে। অন্যদিকে মজিদকেও দেখা যায় রহিমার সন্তান না হওয়ায় জমিলাকে বিয়ে করে । উপন্যাসের মজিদ কিংবা খালেক ব্যাপারী কারও মাঝেই উদার মানসিকতা দেখা যায় না। বরং সন্তান না হওয়ায় তারা দুজনই পুনরায় বিয়ে করে।
উদ্দীপকে এলাকার উন্নয়ন ও অন্যের সন্তানকে প্রতিপালনের দায়িত্ব নেওয়ার মধ্য দিয়ে এক ধরনের ইতিবাচকতা ও উদারতা প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু ‘লালসালু’ উপন্যাসে সন্তান না হওয়ায় প্রথম স্ত্রীকে রেখে দ্বিতীয় বিয়ে করতে দেখা যায়। এছাড়া স্বার্থসিদ্ধির জন্য অন্যায় করতেও তারা পিছপা হয়নি। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে প্রতিফলিত ইতিবাচক জীবনচেতনা ‘লালসালু’ উপন্যাসে অনুপস্থিত।
লালসালু উপন্যাসের আরো সৃজনশীল
প্রিয় বন্ধুরা উপরে তোমাদের জন্য ৩ টি সৃজনশীল প্রশ্ন এবং উত্তর দেওয়া হয়েছে। আর সেই আলোকে নিচে আরো কয়েকটি সৃজনশীল দেওয়া হলো উত্তর ছাড়া। সেইগুলো তোমরা উপরের সৃজনশীল এবং পাঠ্য বইয়ের আলোকে সলভ করার চেষ্টা করবে।
আরো পড়ুনঃ সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর লেখার নিয়ম
লালসালু উপন্যাসের সৃজনশীল – ৪
আগে এক গ্রাম্য মাতব্বরের শাসন ও শোষণে অতিষ্ঠ ছিল। রিপুর গ্রামের মানুষ। এখন সেখানে এসে জুটেছে এক ভক্ত চিকিৎসক। অলৌকিক তার চিকিৎসা পদ্ধতি। সে নিজেকে জিনের বাদশা’ পরিচয় দেয়। বন্ধ্যত্ব, পঙ্গুত্ব, ক্যান্সার প্রভৃতি 1 রোগ নিয়ে লোকেরা তার কাছে আসে। মানুষের অসহায়ত্ব ও সরলতার সুযোগ নিয়ে সে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয়। মাতব্বরের কাছে নালিশ করেও কোনো প্রতিকার মেলে না। কারণ, চোৱে চোরে মাসতুত ভাই।
ক. কত বছর বয়সে আমেনা বিবির বিয়ে হয়েছিল?
খ. কোন ঘটনায় মজিদ বিস্ময়করভাবে নিঃসঙ্গ বোধ করে?
গ. চোরে চোরে মাসতুত ভাই’ কথাটি ‘লালসালু’ উপন্যাসের যে দিকটির ইঙ্গিত করে, তার পরিচয় দাও।
ঘ. “উপায় ভিন্ন হলেও জিনের বাদশা ও উপন্যাসের মজিদের উদ্দেশ্য অভিন্ন” – উক্তিটি মূল্যায়ন কর।
লালসালু উপন্যাসের সৃজনশীল – ৫
সমমনা যুবকদের নিয়ে নিজ গ্রামের মানুষকে স্বাস্থ্য, পুষ্টি, শিক্ষা পরিবেশ, ধর্মান্ধতার কুফল ইত্যাদি বিষয়ে সচেতন করার কাজ করে চলেছে শিক্ষিত যুবক বাজিত। বাজিতের কাজ-কর্মে খুশি নয় গ্রাম্য মাতব্বর চেরাগালি। গ্রামের মানুষ সচেতন হলে তার প্রভাব ক্ষুণ্ণ হবে- এই তার ভয়। ওরা গান বাজনা করে, মেয়েলোকের সাথে আড্ডা দেয় ইত্যাদি অভিযোগ তুলে গোঁড়া সমর্থকদের সাথে নিয়ে সে বাজিতের ক্লাবে আগুন ধরিয়ে দেয়।
ক. মজিদ কেন হাসপাতালে গিয়েছিল?
খ. “বিশ্বাসের পাথরে যেন খোদাই সে চোখ” – ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের বাজিত ‘লালসালু’ উপন্যাসের আক্কাসের সাথে কীভাবে তুলনীয়? বুঝিয়ে দাও ।
ঘ. “রাজিত ও আক্কাস মূলত স্বার্থান্বেষী মহলের হিংসার শিকার” – কথাটি মূল্যায়ন কর।
লালসালু উপন্যাসের সৃজনশীল – ৬
মহিম আলির সংসারের সকল দায়িত্ব তার স্ত্রী হনুফার। যৌথ পরিবারে গ্রামীণ সংসারের রান্নাবান্না থেকে শুরু করে ধান। শুকানো, মাড়ানো, গৃহপালিত হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলের তদারকি। সবই শক্ত হাতে সামলান। এমনকি আত্মীয়-স্বজনের সাথে যোগাযোগ, তাদের মান রক্ষা সবই হনুফার গুরুদায়িত্ব। এতে তার আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি বা ক্লান্তি নেই। কিন্তু ‘হনুফা’কে মাঝে মাঝে অসহায়ত্ব ও একাকিত্ব গ্রাস করে। মহিম আলি হনুফার একাকিত্ব অনুভব করে। কারণ তারা নিঃসন্তান।
ক. ‘লালসালু’ উপন্যাসের ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্টের নাম কী?
খ. “দলিল-দস্তাবেজ জাল হয়, কিন্তু খোদাতালার কালাম জাল। হয় না।” – বুঝিয়ে লেখ
গ. “উদ্দীপকের হনুফা ‘লালসালু’ উপন্যাসের রহিমার মতোই ঘরের খুঁটি। ”- ব্যাখ্যা কর
ঘ. “উদ্দীপকে বর্ণিত হনুফা সন্তান বাসনায় অতৃপ্ত কিন্তু ‘লালসালু’ উপন্যাসে বর্ণিত রহিমার মাতৃহৃদয় কিছুটা পরিপূর্ণ।” কীভাবে? ব্যাখ্যা কর ।
লালসালু উপন্যাসের সৃজনশীল – ৭
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘বীতংস’ গল্পে আসামের চা-বাগানে যেখানে দলে দলে লোক কালাজ্বরে মরে, মজুর খাটতেও লোক সেখানে যেতে চায় না; সেখানে কুলি যোগান সমস্যা নিরসনে সাঁওতাল পরগনার অশিক্ষিত, অসহায়, কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষকে সুন্দরলাল তার উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য শিংবোঙার দৈববাণীকে কাজে লাগায়।
ক. সাত ছেলের বাপের নাম কী?
খ. ‘দুনিয়াটা বড় বিচিত্র জায়গা’ – কথাটি কখন এবং কোন প্রসঙ্গে করা হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের দৈববাণীর সাথে ‘লালসালু’ উপন্যাসের কিসের সাদৃশ্য রয়েছে? আলোচনা কর।
ঘ. উদ্দীপকের সাঁওতাল পরগনার মানুষগুলো যেন ‘লালসালু’ উপন্যাসের মহব্বতনগর গ্রামবাসীর প্রতিনিধিত্ব করে।— মন্তব্যটি ব্যাখ্যা কর।
লালসালু উপন্যাসের সৃজনশীল – ৮
দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারি বিদ্যা অর্জন করে জনাব মোশারফের ছেলে বাপ্পী বিনয়পুর গ্রামে একটি হাসপাতাল স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু অশিক্ষিত গ্রামবাসী এর প্রতিবাদ জানায়। গ্রামবাসী মনে করে হাসপাতাল তৈরি হলে কাটাছেঁড়া করতে গিয়ে ডাক্তাররা মানুষ মেরে ফেলবে। তাদের কাছে ডাক্তার মানেই কসাই। তার চেয়ে গ্রামের কবিরাজ, ফকির- বৈদ্য, ঝাড়ফুঁকই তাদের জন্য মঙ্গল। কসাই ডাক্তারখানার দরকার নেই ।
ক. আক্কাসের বাবার নাম কী?
খ. দুনিয়াটা বড় বিচিত্র জায়গা’- ব্যাখ্যা কর ।
গ. উদ্দীপক ও ‘লালসালু’ উপন্যাসের সাদৃশ্য আছে কি? বর্ণনা কর ।
ঘ. ‘লালসালু’র আক্কাস ও উদ্দীপকের বাপ্পীর মানসিকতা মূল্যায়ন কর।
লালসালু উপন্যাসের সৃজনশীল – ৯
জান না কি তুমি, রে বেঈমান
আল্লাহ সর্বশক্তিমান
দেখিছেন তোর সবকিছু?
জাব্বা জোব্বা দিয়ে ধোঁকা
দিবি আল্লারে, ওরে বোকা কেয়ামতে হবে মাথা নীচু ।
ক. কে জমিলাকে প্রথম মজিদকে দেখায়?
খ. “গ্রামের লোকেরা যেন রহিমারই অন্য সংস্করণ।” বুঝিয়ে লেখ ।
গ. উদ্দীপকের বেঈমান ‘লালসালু’র কোন চরিত্রটিকে ইঙ্গিত করে?- ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘লালসালু’র কোন দিকটি উদ্দীপকের সাথে সম্পর্কযুক্ত – বিশ্লেষণ কর।
লালসালু উপন্যাসের সৃজনশীল – ১০
নদীভাঙনে সর্বস্বান্ত হতে বসেছে শ্যামলছায়া গ্রামে খেটে খাওয়া মানুষেরা। জীবিকা নির্বাহের আশায় তাদের অনেকেই ছুটছে দূর-দূরান্তে। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ জেনেও তারা ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্নে বিভোর। ভাগ্য-বিড়ম্বিত এমনই এক যুবক শফিকের ঠাঁই হয় শহরের বস্তিতে রিকশা চালানো দিয়ে জীবিকা শুরু করলেও অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হয়ে প্রভাব প্রতিপত্তিসহ এখন সে অভিজাত এলাকার বাসিন্দা।
ক. ‘বেচাইন’ শব্দটির অর্থ কী?
খ. “বিশ্বাসের পাথরে যেন খোদাই সে চোখ।” ব্যাখ্যা – কর।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত অসহায় মানুষদের জীবনাচরণের সঙ্গে ‘লালসালু’ উপন্যাসের কোন বিষয়ের সাদৃশ্য রয়েছে? আলোচনা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের শফিক এবং ‘লালসালু’ উপন্যাসের মজিদ উভয়ের মধ্যেই অস্তিত্ববাদী চেতনা প্রতিফলিত।” তোমার মতামত দাও ।
শেষ কথা
তো প্রিয় বন্ধুরা আজকের এই পোস্ট এ আপনারা জানলেন কয়েকটি লালসালু উপন্যাসের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর এবং এরই সাথে কিছু এক্সট্রা সৃজনশীল প্রশ্ন। আশা করছি এই পোস্ট টি আপনাদের কাছে অনেক টা ভালো লেগেছে।
ভালো লেগে থাকলে কিন্তু অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন আমাদের। আর এরকম সব পোস্ট পেতে প্রতিদিন ভিজিট করতে থাকুন আমাদের এই ওয়েব সাইট টি তে। আবার দেখা হবে পরবর্তী কোনো পোস্ট এ। সে পর্যন্ত সকলে ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন। আল্লাহ হাফেয।