শবে বরাত নিয়ে স্ট্যাটাস
সুপ্রিয় পাঠক। আবার এসে গেলো শবে বরাত। শবে বরাত নিয়ে আমাদের অনেক আগ্রহ । সেটা থাকাটাই স্বাভাবিক। কেননা হাদীসে এ রাতের গুরুত্ব ও ফজিলত নিয়ে অনেক কথা রয়েছে। আপনাদের মাঝে সেই গুরুত্ব আছে বিধায় শবে বরাত নিয়ে স্ট্যাটাস সার্চ করেছেন। হ্যাঁ সেটা নিয়েই এই লেখাটি সাজানো হয়েছে। পুরোটা পড়ুন।
সূচিপত্র
শবে বরাত ২০২৩ ইং
পবিত্র শবে বরাত ২০২৩ ইং সারাদেশে একসঙ্গে পালিত হবে ৭ মার্চ মঙ্গলবার দিবাগত রাতে । একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের আকাশে ১৪৪৪ হিজরী সনের পবিত্র শাবান মাসের চাঁদ দেখা গেছে । তাই বাইশ ফেব্রুয়ারি থেকে শাবান মাস গণনা শুরু হয়েছে । এই হিসেবে সাত মার্চ মঙ্গলবার দিবাগত রাতেই হল লাইলাতুল বরাত ।
শবে বরাত নিয়ে স্ট্যাটাস
১. শবে বরাতের নির্ধারিত কোন আমল নেই। সাধ্যমত নফল ইবাদাত করুন।
২. শবে বরাত মানে হলো মুক্তির রাত । আসুন সকলে তাওবা করে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হই ।
৩. আল্লাহর রহমত লুফে নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ নিয়ে এসেছে লাইলাতুল বরাত। সবাই সময়টিকে কাজে লাগান ।
৪. নামাজের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ইবাদত আর হতে পারে না। তাই শবে বরাতে বেশি করে নামাজ পড়ুন।
৫. দৈনিক সিজদা করার সুযোগ পাচ্ছেন । এটা বড় একটি নেয়ামত । বলুন আলহামদুলিল্লাহ ।
৬. খেলা দেখার জন্য যদি রাত জাগতে পারেন তাহলে একটি রাত জেগে কেন আল্লাহকে ডাকতে পারবেন না ? Change your mind
৭. মুশরিক ও হিংসুককে আল্লাহ তাআলা বরাতের রাতেও ক্ষমা করবেন না । তাই উক্ত দুটি বিষয়ে সতর্ক থাকুন ।
৮. আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জন করতে কোন যোগ্যতা লাগে না । শুধু প্রয়োজন সহীহ নিয়তে আমল করা।
৯. শবে বরাত নিয়ে বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি বন্ধ হোক ।
ইবাদতের খুশবুতে মেতে উঠুক শহর গ্রাম ।
১০. সহীহ হাদীস থেকে প্রমাণিত শবে বরাত ভাগ্য রজনী নয় । এটা হল মুক্তির রাত ।
শবে বরাতের হাদিস
সুপ্রিয় পাঠক। শবেবরাত মূলত হাদিসে বর্ণিত শব্দ নয় । এগুলো হলো ফারসি ভাষার শব্দ । হাদিসে বর্ণিত শব্দ হলো লাইলাতুন মিন নিসফি শাবান । আরবীতে লাইলাতুল বারাআত । কিন্তু সমাজে প্রসিদ্ধ হয়ে গেছে শবে বরাত ।
শুধু শবে বরাত নয় এমন আরো অসংখ্য শব্দ আছে যা কোরআন ও হাদিসের বর্ণিত অন্যটি আর সমাজে প্রসিদ্ধ আরেকটি । এবার আসুন আসল কথায় অনেকে শবে বরাত অস্বীকার করে হাদিসে এই শব্দে বর্ণিত হয়নি বলে । তারা মূলত ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ বা সামান্য জানে । কথায় আছে না খালি কলসি বাজে বেশি ওরকম অবস্থা । আচ্ছা শবেবরাত বললে কি কোন গুনাহ হবে ? নিঃসন্দেহে না । তাহলে এত আপত্তি কিসের ? ওই রাতের আমল সংক্রান্ত অসংখ্য সহীহ হাদিস রয়েছে । তাই কারো কথায় বিভ্রান্ত না হয়ে সাধ্যমত নফল ইবাদত করুন ।
শবে বরাতের ছন্দ
১.শবে বরাত এসে গেল
আমল করো নফল
ঈমান আমল বেশি হলে
জীবন হবে সফল ।
পড়ৃুন – আয়াতুল কুরসি বাংলা অর্থ সহ
২. শবে বরাত নিয়ে এলো
সুযোগ ক্ষমা চাওয়ার
রাত জেগে ইবাদত করা
রব শানে গান গাওয়ার।
শবে বরাতের স্ট্যাটাস
৩. আজ বরাতে করবো আমল
জাগবে শহর পাড়া
ইবাদতের সুযোগ মানে
রবের ডাকে সাড়া ।
শবে বরাতের কবিতা
৪. এসে গেছে শবে বরাত
রাখতে হবে রোজা
নেক আমলে হৃদয় হাসে
দীনের পথটি সোজা।
৫. আসুন সবাই মুক্তির রাতে
দোয়া করি বেশি
পরস্পরকে মাফ করে দিই
ছেড়ে রেষারেষি।
শবে বরাত সম্পর্কে হাদীস
১. হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন , আল্লাহ তায়ালা ১৫ শাবানের রাতের সৃষ্টির দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন । এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন।
(সহীহ ইবনে হিব্বান-৫৬৬৫, সিলসিলাতুল আহাদীছিস সহীহাহ-৩/৩১৫)
২. হযরত আ‘লা ইবনুল হারেস থেকে বর্ণিত, হযরত আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা বলেন, রাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযে দাঁড়ান এবং এত দীর্ঘ সিজদা করেন যে, আমার ধারণা হলো তিনি হয়তো মৃত্যুবরণ করেছেন, আমি তখন উঠে তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলী নাড়া দিলাম, তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলী নড়ল। যখন তিনি সিজদা থেকে উঠলেন এবং নামায শেষ করলেন, তখন আমাকে লক্ষ করে বললেন, হে আয়েশা/হুমাইরা! তোমার কি এ আশংকা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম, না; ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনার দীর্ঘ সিজদা থেকে আমার আশংকা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কিনা? নবীজী জিজ্ঞাসা করলেন. তুমি কি জানো এটা কোন রাত? আমি বললাম. আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। রাসূল তখন ইরশাদ করলেন, এটা অর্ধ শা‘বানের রাত। আল্লাহ তা‘আলা এ রাতে বান্দার প্রতি মনোযোগ দেন এবং ক্ষমাপ্রার্থীদের ক্ষমা করেন ও অনুগ্রহপ্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষপোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই। (শু‘আবুল ঈমান-হাদীস নং- ৩৬৩৫)
৩. একদা হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে না পেয়ে খুঁজতে বের হলেন । তাকে জান্নাতুল বাকিতে পেলেন । তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম বললেন চৌদ্দই সাবান দিবাগত রাতে আল্লাহ তাআলা প্রথম আকাশে অবতরণ করেন এবং বনু কালব গোত্রের পালিত ছাগল পালের শরীরের পশমের চেয়ে অধিক সংখ্যক বান্দাকে ক্ষমা করে দেন । (তিরমিযী শরীফ-হাঃ নং ৭৩৯, ইবনে মাজাহ- হাঃ নং ১৩৮৫)
৪. হযরত আলী ইবনে আবু তালেব রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত । রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন অর্ধ শাবানের রাত যখন আসে তখন তোমরা এ রাত্রি ইবাদত বন্দেগীতে কাটাও এবং দিনের বেলা রোজা রাখ । কেননা এ রাতের সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তায়ালা প্রথম আসমানে আসেন এবং বলেন কোন ক্ষমা আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করব । আছে কি কোন রিযিক প্রার্থী ? আমি তাকে রিযিক দেব । এভাবে সুবহে সাদিক পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা মানুষের প্রয়োজনের কথা বলে তাকে ডাকতে থাকেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ-১৩৮৪, শু’আবুল ঈমান-৩৮২৩-২২)
শেষ কথা
লাইলাতুল বরাতের ফজিলত নির্ভরযোগ্য কয়েকটি হাদিস উপরে উল্লেখ করা হলো । সম্মিলিত কোনো রূপ না দিয়ে এবং রাত উদযাপনের বিশেষ কোনো নিয়ম পন্থা উদ্ভাবন না করে শক্তি ও সামর্থ্য অনুযায়ী বেশি বেশি ইবাদত করাও নির্ভরযোগ্য রেওয়ায়েত দ্বারা প্রমাণিত । অতএব সকলে ইবাদাতের দিকে মনোযোগী হোন । কুসংস্কার থেকে বিরত থাকুন ।