১৫ আগস্ট সম্পর্কে কবিতা। শোক দিবসের কবিতা ।
সুপ্রিয় পাঠক । আবার এলো ১৫ আগস্ট । জাতীয় শোক দিবস । ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারের সবাইকে নৃশংস হত্যা করা হয় । তাই জাতীয় জীবনে এটা একটা কলঙ্কের দিন । দুঃখ ও পরিতাপের দিন । যে নেতার হাত ধরে বাঙালি জাতি পেলো স্বাধীনতা সেই নেতাকেই অন্যায়ভাবে পরপারে পাঠানো হলো । প্রতিবছর এই দিবসটিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হয় । বঙ্গবন্ধুর সৈনিকেরা দেশব্যাপী আয়োজন করে নানা অনুষ্ঠানের । সে অনুষ্ঠানের কার্যক্রম কিছু মিডিয়াতে প্রকাশিত হলেও অধিকাংশ কার্যক্রম প্রচার করা হয় না । তো বন্ধুরা আপনারা যদি শোক দিবসে ছড়া কবিতা পাঠে আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে এই আর্টিকেল আপনাদের জন্য । এখানে বিখ্যাত কবি সাহিত্যিকদের বেশ কিছু নির্বাচিত ছড়া কবিতা তুলে ধরা হলো। আশা করছি আপনারা উপকৃত হবেন ।
১৫ আগস্ট সম্পর্কে কবিতা
মুজিব মানে
শরিফ আহমাদ
মুজিব মানে মুক্ত আকাশ
ঝলমলে এক রবি
মুজিব মানে রক্তে আঁকা
স্বাধীনতার ছবি ।
মুজিব মানে স্বপ্ন আশা
আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা
লাল গোলাপের ঘ্রাণ,
মুজিব মানে বাংলাদেশের প্রাণ ।
মুজিব মানে ন্যায়ের শাসন
ঐতিহাসিক দেওয়া ভাষণ
জেগে ওঠার সুর,
মুজিব মানে আলোর সমুদ্দূর ।
মুজিব মানে গানের ছন্দ
ত্যাগের মাঝে খুব আনন্দ
বিজয়ের উল্লাস,
মুজিব মানে শান্তি-সুখের বাস ।
মুজিব মানে বীর বাঙালির
সজাগ রাখা দৃষ্টি
মুজিব হলো আল্লাহপাকের
অপূর্ব এক সৃষ্টি।
পড়ুন – ১৫ আগস্ট সম্পর্কে বক্তৃতা
এখানে আমার বঙ্গবন্ধু
আনজীর লিটন
মুজিব ছাড়া বাংলা বলো
কেমন করে মানতে পারি
এক জাতির একটা মুজিব
কোত্থেকে আর আনতে পারি?’
এই যে আমরা আমাদের মতো
গেয়ে যাই গান সুখে অবিরত
এই যে ফসল উর্বরা মাটি
ফুল পাখি নদী অপরূপ খাঁটি
বিজয়ের উল্লাস-
এখানে আমার বঙ্গবন্ধু মহানায়কের বাস।
এই যে আমরা পথ হেঁটে যাই
সাহসী প্রেরণা প্রাণ খুঁজে পাই
এই যে মিছিল দাবি প্রতিবাদ
মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তির স্বাদ
এই যে পতাকা স্বাধীন দেশের
মায়া ধরা এক ছবি-
এখানে আমার বঙ্গবন্ধু আলোমাখা এক রবি।
এই যে আমরা বাংলায় চলি
বাংলা ভাষায় মা’র কথা বলি
এই যে হৃদয়ে শহিদের নাম
স্মৃতির স্তম্ভ শ্রদ্ধা-সালাম
এই যে প্রাণের শহিদ মিনার
বাঙালির মূল সুর-
এখানে আমার বঙ্গবন্ধু বিজয় একাত্তর।
শোক দিবস
শরিফ আহমাদ
ঐতিহাসিক শোক দিবসের
রক্ত ঝরা গল্প
লিখছি ছড়ায় অল্প !
আগষ্ট মাসের পনেরো তারিখ
আধার ঘেরা রাতে
দেশদ্রোহীরা হামলা চালায়
মহান নেতার গা’তে ।
তার আরো যে স্বজন ছিলো
পায় যেখানে যাকে
হত্যা করে তাকে ।
দেশ প্রকৃতির রঙিন স্বপ্ন
শেষ করেছে তারা
ওদের একদিন বিচার হবে
কেউ পাবে না ছাড়া ।
প্রতি বছর আগষ্টের সেই
দিন করা হয় স্মরণ
বুকের রক্ত ক্ষরণ।
বঙ্গবন্ধুর ছড়া
শরিফ আহমাদ
বঙ্গবন্ধুর ছড়া লিখতে
ইতিহাসের পাতায় টিকতে
যেই দিয়েছি হাত,
তার কাহিনী অশ্রু ঝরায়
রাতের পরে রাত ।
আমার সাথে রাতের তারা
বন-বনানীর নিঝুম পাড়া
সবাই দিলো যোগ,
বঙ্গবন্ধুর চলে যাওয়ায়
সবার মনে শোক।
শোকের থেকে শক্তি নিয়ে
তার প্রতি প্রেম-ভক্তি নিয়ে
লিখছি ছড়া রোজ,
তার মতো এক মহান নেতা
বিশ্ব করে খোঁজ ।
চির সুখে থাকুক
শরিফ আহমাদ
বঙ্গবন্ধুর নাম
এই পৃথিবীর সবাই জানে
দেয় সকলে দাম ,
গরিব-দুঃখির আপন ছিলেন তিনি
বাঙালিরা তার কাছে আজ ঋণী।
শ্রেষ্ঠ ভাষণ তার
দুনিয়াতে এমন নজীর
আর হবে না আর,
তিনি ছিলেন স্বাধীনতার মূলে
দেশ গড়েছেন শান্তি সুখের ফুলে ।
আজকে তিনি নেই
শোক দিবসে লাখো মানুষ
হারিয়ে ফেলে খেই,
কত মানুষ দুআ মাহফিল করে
চির সুখে থাকুক মাটির ঘরে ।
স্মরনীয় বরনীয়
শাহিন আলম
এই দেশেতে জন্মেছিলেন তিনি
দেশের তরে আরাম আয়েশ ত্যাগ করেছেন যিনি
দেশের মানুষ ক্যামনে হবে স্বাধীন
ক্যামনে শিশু কষ্ট ভুলে নাচবে সুখে তাধিন
সেই চিন্তায় মগ্ন ছিলেন কিশোর বয়স থেকে
প্রতিজ্ঞা তার আঁধার ছিঁড়ে আনবে আলোক ডেকে।
অধিকারের বললে কথা কেউ বাসেনা ভালো
শাসক শ্রেণীর মুখ হয়ে যায় কালো
তবু তিনি নেই থেমে নেই অটল নিজের মতে
খালি পায়ে হাঁটলো তিনি কাটাওয়ালা পথে।
দেশের মানুষ চাইতো তাকে সেটাই ছিলো পাওয়ার
তিনি ছিলেন নিবেদিত টুয়েন্টি ফোর আওয়ার
দেশ ও জাতির কল্যানে সে করতো শুধু কাজ
তাইতো তিনি স্মরনীয়, বরনীয় আজ।
বঙ্গবন্ধুর নামে
শরিফ আহমাদ
স্কুলের এক অনুষ্ঠানে
খুব আনন্দ হাসি-গানে
বলতে হবে ছড়া,
তাই হয়েছে বন্ধ খোকার পড়া ।
কোন ছড়াটা হবে কেমন
আবৃত্তি হয় যেমন যেমন
সবকিছু নেয় শিখে,
ছড়া পাঠে যায় যেন সে টিকে ।
অনুষ্ঠানে হাজার মানুষ
যায় উড়িয়ে কথার ফানুস
সবার সামনে গিয়ে,
হঠাৎ করে খোকার হলো কি-এ ।
কবির মতো চলতে থাকে
নতুন ছড়া বলতে থাকে
বঙ্গবন্ধুর নামে,
হয় বিজয়ী ভালোবাসার খামে ।
আলোর দিশা
শরিফ আহমাদ
আকাশ জানে বাতাস জানে
জানে রাতের তারা
দেশ-প্রকৃতির মন ভালো নেই
বঙ্গবন্ধু ছাড়া ।
ফুল বাগানে ঘ্রাণ মোটে নেই
ফুল যদিও ফোটে
গাছের ডালে পাখ-পাখালির
বেসুরো গান ঠোঁটে ।
নদী ছোটে কেমন যেন
হারিয়ে নিজ গতি
বঙ্গবন্ধুর কথা সবার
পড়ছে মনে অতি ।
তিনি ছিলেন বীর বাঙালির
স্বপ্ন আলোর দিশা
তাকে ছাড়া আজকে দেশের
কাটবে অমানিশা ?
ইতিহাসের নায়ক
শরিফ আহমাদ
মুজিব তুমি জাতির পিতা
গরীব দুঃখীর পরম মিতা
সবাই পাগল শুধু তোমার জন্য
ধন্য তুমি ধন্য ।
তুমি ইতিহাসের নায়ক
আগুন জ্বলা সুরের গায়ক
তোমার ভাষণ কাঁপায় যেন বিশ্ব
সবাই তোমার শিষ্য ।
তোমার জন্য দেশ পেয়েছি
শক্তি সাহস বেশ পেয়েছি
কৃতজ্ঞ তাই শহুরে লোক-চাষী
তোমায় ভালোবাসি ।
তিনি অম্লান
রুনা তাসমিনা
সবুজ আকাশে তার বাতাস হাসে
মাঝখানে সূর্যটা রয়েছে ভেসে
মাঠে ঘাটে দেখো ঐ সবুজ শুয়ে
দিগন্ত ছুঁয়ে দেখে নীলাকাশ নুয়ে
রূপবতী বিল ঝিল শাপলা শালুকে
নেমে আসে জোছনা রাতের বুকে
বিকেল বিলিয়ে দেয় সোনা রাশি রাশি
এ আমার বাংলা, তারে ভালোবাসি।
নানান ঋতু করে নানা আলাপন
বর্ষার বুক জুড়ে অঝোরে কাঁদন
কেন কাঁদো ও বরষা অমন করে
বঙ্গবন্ধুকে বড়ো মনে পড়ে
দুঃখীর বন্ধু তিনি প্রাণের নেতা
আনলেন বাংলার বুকে স্বাধীনতা
একদল হায়েনার হিংসে হলো
কালো এক রাতে তাঁর প্রাণ কেড়ে নিলো
কোটি মানুষের মনে যে বাস করে
প্রাণ নিয়ে তাঁরে কেউ ভুলাতে পারে?
আছেন প্রাণের মাঝে তিনি অম্লান
বঙ্গবন্ধু তিনি মুজিবুর রহমান।
৩২ নম্বর
প্রত্যয় হামিদ
অতঃপর ভ্রষ্ট বুলেটেরা
রাত্রির নিদ্রা ছিন্ন ভিন্ন করে ছুটে চলল
৩২ নম্বরে।
বিশ্বাসী চোখগুলো তার বিস্ফারিত প্রায়
চশমার কাচগুলো নির্জীব
স্বপ্ন দেখানো তর্জনী তখন বিমূঢ়
সাহসী বুক রক্তাচ্ছন্ন…
তখন তার চোখ জলপাইরঙ পোশাকের দিকে
তখন তার চোখ বন্দুকের উদ্ধত নলের দিকে
তখন তার বাকরুদ্ধ চিন্তায় অসীম যন্ত্রণা-
এতগুলো মীরজাফর কী করে জায়গা নিল
এই সব বিশ্বাসী পোশাকের ভিতর?
এতগুলো রায় দুর্লভ কী করে ঢুকে গেল
এই সব পরিচিত নলের ভিতর?
উত্তরগুলো জ্ঞানকোষে আসার আগেই
বঙ্গবন্ধুর নিথর স্পর্শে
রক্তলাল হয়ে ওঠে অতি চেনা সিঁড়িগুলো
হৃদপি-ের রক্ত সিঁড়ি বেয়ে নেমে মাটি ছুঁতেই
শোকে পাথর হয়ে ওঠে শ্যামল দেশ
লুটিয়ে পড়া শরীর থেকে
মাটির হৃদয়ে বয়ে যাওয়া সেই রক্তে
আজও জাগরুক এই সোনার বাংলা;
জেগে থাকা এই বাংলায়- এইসব আকাশ নদী বৃক্ষে
মানুষে ও মানবতায়
আজও তার স্বপ্ন ভোরের রৌদ্র হয়ে
বুনে যায় সোনামাখা দিন
বঙ্গবন্ধু তুমি ছিলে, তুমি আছো, তুমি থাকবে
চির অমলিন…
বাংলা মায়ের ব্যথা
রুনা তাসমিনা
কেঁদে বলে মা:
ও-মা তোমার বুকে বাজে কীসের এতো ব্যথা-
আছে কোথায় আমার খোকা?
পাকা আম ঝরে ঝরে পড়ে বালিশা গাছের তলে
হিজল তলার ঘাটে দেখতো কার ছায়া পড়ে জলে? তোমরা কি জানো ?
বর্ষা এলে কাদাজল মেখে ফিরতো যখন ঘরে
আমার ভয়ে ঘরের কোণে লুকাতো চুপটি করে।
কোথায় যে গেলো মানিক আমার কোথায় খুঁজি তারে বুকখানি বড় খালি খালি লাগে ছুটে যাই বাইগারে ।
চোখ মুছে বলি:
কেঁদো না মা খোকার জন্য তুমি অমন করে
তোমার খোকা দিয়েছে দেখো এদেশ স্বাধীন করে।
‘বঙ্গবন্ধু’ নাম দিয়েছে দেশের মানুষ তার
হিংসেয় চোখ উঠলো জ্বলে একদল হায়েনার।
কালো একরাতে কেড়ে নিলো তারা তোমার খোকার প্রাণ তোমার পাশেই ঘুমিয়ে আছে মুজিবুর রহমান ।
বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবি বাংলার মানচিত্র
আফিফ জাহাঙ্গীর আলি
প্রত্যুষের সূর্য দীপ্তিমান
হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
দোয়েলের শিসে বাংলার জনক অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর জয়গান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আকাশে দীপ্ত-বাতাসে বহমান একটি নাম অবিস্মরণীয় বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি রোমন্থন বাঙালির প্রতিক্ষণ
করেছেন ফুলেল উর্বর খাঁটি অকুতোভয় বলীয়ান মহান নেতা জাতির পিতার জন্ম
টুঙ্গিপাড়ার মাটিতে জন্মে খোকার সোনার বাংলাকে বাংলাকে করেছে বিশ্ব দরবারে ধন্য বাংলার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিচ্ছবি বাংলার মানচিত্র স্বাধীনতার মহানায়ক কালজয়ী বঙ্গবন্ধুর লোমহর্ষক শোকগাথা প্রস্থান
শোকের সাগরে বাংলা ভাসমান বাঙালির হৃদয়ে রক্তক্ষরণ প্রবহমান
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জন্মশতবার্ষিকীর শ্রদ্ধাবনত নিযুত কোটি ভালোবাসা।
শোন একটি মুজিবরের থেকে
গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার
শোন একটি মুজিবরের থেকে
লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি-প্রতিধ্বনি
আকাশে বাতাসে ওঠে রণি
বাংলাদেশ, আমার বাংলাদেশ।
সেই সবুজের বুক চেরা মেঠোপথে
আবার যে যাব ফিরে,আমার
হারানো বাংলাকে আবার তো ফিরে পাব
শিল্পে-কাব্যে কোথায় আছে
হায়রে এমন সোনার খনি।
বিশ্বকবির ‘সোনার বাংলা’
নজরুলের ‘বাংলাদেশ
জীবনানন্দের ‘রূপসী বাংলা
রূপের যে তার নেই কো শেষ, বাংলাদেশ।
‘জয় বাংলা বলতে মনরে আমার
এখনো কেন ভাব আমার
হারানো বাংলাকে আবার তো ফিরে পাব
অন্ধকারে পুব আকাশে
উঠবে আবার দিনমণি।
মুজিব দর্শন
মাসুদ চয়ন
মুজিব কোনো অস্থায়ী ভাস্কর্যের নীল নকশার ক্ষয়িত প্রতিবিম্ব নয় যে সময় পরিক্রমায় বদলে যাবে তাঁর রূপ রঙ বৈচিত্র-
মুজিব বাঙলার রূপ বৈচিত্রে মিশে থাকা শৈল্পিক বাস্তুতন্ত্রের নাম;
যার সৌরদীপ্ত আলোক দ্যুতি নিয়তই ছড়িয়ে যাচ্ছে বহিঃবিশ্বের স্বাধীন স্বক্রীয় গণতন্ত্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে; যার রক্তাক্ত বুকপৃষ্ট হতাশার ইতিহাস প্রেক্ষাপটের মাইলস্টোন অঙ্কুরিত করে দিয়ে গেছে-
নির্লিপ্তির আঁধারে লীন হয়ে গেছে যে মহা প্রতাপশালী তর্জনী সেই আফসোসে সারা বাংলা আজও আক্ষেপ পুষছে;
তাই মুজিব মৃত্যুর এতো বছর পরেও বাঙলা পিতৃহারা রাষ্ট্রীয় কোষাগার; নষ্ট গণতন্ত্রে নৈতিক দর্শনে ভরে উঠেছে বাঙলার স্বাধীন স্বচ্ছ জমিন;
মুজিব শুধু একটি আদর্শই নয়;
একটি সজীব নির্মল নিঃস্বার্থ বঙ্গ প্রান্তর রচনার উজ্জীবিত ঈশ্বরের সর্বনাম ।
শুধু একটি নেতার জন্য
শফিক রহমান
টুঙ্গীপাড়ার সেই খোকার কাহিনী
তোমার কি সবে আজ জানো ?
তিনিই বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নামে যাকে চেনো।
ছোটবেলা থেকে ফুটবলের নেশা
খেলতেন মাঠে আগাগোড়া তিনি বেশ,
মিশনারি স্কুলে তৃতীয় শ্রেনী থেকেই
পুরস্কারের খ্যাতির ছিলনা শেষ ।
৪৭’শে বৃটিশ থেকে ভারত-পাকিস্তান দেশে বিভাজন
স্বাধীন বাংলা দেশের স্বপ্ন দেখা তার শুরু,
৫২’তে রফিক,সালাম, বরকত, জব্বার, শফিউর
ভাষার জন্য শহীদ হলো আন্দোলের তিনিই গুরু।
৬৬’তে ছয় দফা দাবী বাঙালির মুক্তির সনদ
সেনা,বিমান,নৌ রাষ্ট্রদোহিতার আগরতলা মামলা,
৬৮’তে আগরতলা ষড়যন্ত্রে নেতা গেল জেলে
৬৯’গণআন্দোলনে মুক্তিদেয় আইয়ুব সরকারে আমলা।
৭০’নির্বাচনে আওয়ামী লীগের
বাঙালী পেল সংখ্যাগরিষ্ঠতার জয়,
নভেম্বরে ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব
লাখো মানুষের মৃত্যুর শোক,
৭১’রেসকোর্সের জনসমুদ্রে
বজ্রকণ্ঠের সে ভাষণ
এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম,এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রামের শ্লোক।
ঠিক মনে পড়ে একদিন ভোরে
রাওয়ালপিন্ডির সম্মিলিত হাসপাতালে,
দাঁড়িয়ে অাছেন উদাস নয়নে
সেলাইন লাগানো হাতে।
টিলায় উঠার কোল ঘেঁষে তার
কবর খুঁড়ানো এটেল মাটি,
দু’ধারে জানালার সন্মুখ পানে জড়ো
রেখেছে যতনে পরিপাটি।
বয়সটা আমার বড় জোড় সাত
রাসেল বাবুর হবে আশপাশ,
তাইতো পিতা একাকী দাঁড়িয়ে
ভেবে ছাড়তেন দীর্ঘ নিশ্বাস ।
দেখেছিলাম তাকে একাত্তুরের সায়হ্নে
বন্দী দশায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ নেতা রূপে,
কোন প্রলোভন টলাতে পারেনি তাকে
স্বাধীনতা প্রশ্নে অবিসংবাদীত নেতার ধোপে।
একাত্তরে দেশ স্বাধীন হলো
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জাতির পিতা,
তিরিশ লাখ শহীদের রক্তে গড়া
দুই লাখ সম্ভ্রমে জাতির স্বাধীনতা ।
কৃষক ,শ্রমিক, বুদ্ধিজীবী, সৈনিক
জড় হল এক সাথে,
কথা দিলেন তারা দেশ গড়ার
কাজ চলবে নেতার পথে ।
জনগণের নেতা যুদ্ধে মরেনি
পঁচাত্তরে মরেছে দেশে,
নৃশংসভাবে হত্যা করেছে
পরিবার পরিজন সহ রোষে।
যে নেতার কণ্ঠের বজ্র ধ্বনিতে
লাখো শহীদ দিলো প্রাণ,
তারই বুক ঝাঁঝরা করে
বুলেট কেড়ে নিল জান।
তারই লাশ খাটিয়ায় রেখে
সংসদে নেতারা বসে,
কালের সাক্ষী ইতিহাস আজও
দূরে দাঁড়িয়ে শুধু হাসে ।
গনতন্ত্রের পরে সামরিক শাসন
এলো স্বৈরাচারীর দোসর,
আমলা-জান্তা মিলে দেশ চলালো
দীর্ঘ নয়টি বছর ।
শেরে বাংলা,মাওলানা ভাসানী,
জেনারেল ওসমানী মত নেতা,
বাংলার বুকে তরী বেয়ে গেল
পাইনি তীরের দেখা ।
সালাম বরকত জব্বার শফিউল
ভাষায় রেখে গেল মান,
মতিউর,জাহাঙ্গীর,রউফ,কামাল
বীরশ্রে
ষ্ঠরা দিল স্বাধীনতায় প্রাণ।
ঊনপঞ্চাশ বছর পার হয়ে গেল
নেতা ও নীতিহীন দেশ,
বাহান্ন থেকে দু’হাজার কুড়ি
শুধু ডিজিটাল হলো পরিবেশ ।
জনসংখ্যা বৃদ্ধি সাত থেকে ষোলকোটি
মুদ্রা স্ফীতির নেই শেষ,
মধ্যবিত্ত আরও নিম্নে ঠেকেছে
বেকার বেড়েছে বেশ।
এভাবেই দেশ চলছে তো বেশ
কে জানে কী শেষ পরিনতি?
যতদিন তারা নিজেরা না বদলাবে
যাবে না দেশের অসংগতি ।
নিজেকে আগে শুধরানো লাগে
পরে পরিবার পরিজন,
লোভ-লালসা বিত্তবৈভব ভুলে
সঠিক নেতার হবে কবে আগমন ?