করোনা ভাইরাস বাংলা রচনা

সকল শ্রেনীর শিক্ষার্থীদের জন্য আজকের শিক্ষনীয় রচনা

করোনা ভাইরাস

ভূমিকা

করোনা ভাইরাস বলতে আর এন এ একটি ভাইরাসের একটি শ্রেনিকে বোঝায়, যেগুলি স্তন্যপায়ী প্রানী এবং পাখিদের কে আক্রান্ত করে। এগুলো মানুষ ও পাখির শরীরে শ্বাসনালির সংক্রামন ঘটায়। এ ভাইরাসের সংক্রামন মৃদু থেকে মারাত্নক হতে পারে। কুনা ভাইরাস এমন একটি সংক্রামক ভাইরাস যা এর আগে কখনো মানুষের মধ্যে ছড়ায় নি। এই ভাইরাসের বিশ্বব্যাপী প্রানহানীর সংখ্যা প্রায় ১৮ লাখ। বিশ্বব্যাপী সনাক্তের সংখ্যা সাড়ে আট কোটির বেশি। নতুন এ রোগটিকে প্রথম দিকে নানা নামে ডাকা হচ্ছিল। যেমন চায়না ভাইরাস,করোনা ভাইরাস,২০১৯ এন কভ।

করোনার প্রতিকার

নতুন ভাইরাস,রহস্যভাইরাস,ইত্যাদি।২০২০ সালে ফেব্রুয়ারী মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা রোগটির আনুষ্ঠানিক নাম দেয় কোভিড-  ১৯ যা করুনা ভাইরাস ডিজিজ এর সংক্ষিপ্ত রোগ। ভাইরাসটির আরেক নাম ২০১৯ এনসিওভি বা নভেল করোনা ভাইরাস। এটি একধরনের করুনা ভাইরাস।করোনা ভাইরাসের অনেক রকম প্রজাতি আছে কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ৬ টি প্রজাতি মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে। তবে নতুন ধরনের ভাইরাসের কারনে সেই সংখ্য এখন থেকে হবে সাতটি।২০২০ সাল থেকে চীনে মহামরি আকারে ছড়িয়ে পড়া সার্স যে ভাইরাসের সংক্রামনে পৃথিবীতে ৭৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল  আর ৮০৯৮ জন সংক্রমিত হয়েছিল সেটি ও ছিল একধরনের করুনা ভাইরাস।

করোনা ভাইরাসের প্রভাব

কি সে করোনা ভাইরাস যা আসলে মানুষের ঘুম কেড়ে নিচ্ছে করুনা শব্দটি এসেছে ইংরেজি শব্দ ক্রনিক থেকে।যার সরল বাংলা অনুবাদ করলে দাড়ায় দীর্ঘস্থায়ী।মার্কিন যুক্তরাষ্টে অবস্থিত ন্যাশনাল সেন্টার ফর হেলথ,স্টেটিকসের পরিবাষায় ক্রনিক বলতে সে সব রোগ কে বোঝায় যার প্রভাবে কোন একজন রোগি দীর্ঘ মেয়াদের কোন ধরনের শারীরিক জটিলতা ভোগ করে থাকেন।

 

কিন্তু আদৌ তার সুচিকিৎসার ব্যাবস্থা করা যায় না। ক্রনিক ডিজিস প্রতিরোধে কোন ধরনের ভ্যাকসিন ও নেই। করোনা ভাইরাস মানুষের শরীরে সংক্রমনের সংগে সঙ্গে দ্রুত বিস্তার লাভ করে এবং মানুষের শরীরে ফুস ফুস এবং অনেক সময় পাকস্থলিতে বিশেষ ধরনের প্রদাহ সৃষ্টি করে। করুনা ভাইরাস নিঃসন্দেহে এ শতাব্দীতে গোটা পৃথিবীর মানুষের কাছে সবচেয়ে বড় আতঙ্কের নাম।কোনো ধরনের সামরিক যুদ্ধ নয় কোন ধরনের পারমানবিক অস্ত্র নয় বা নয় কোন ধরনের প্রাকৃতিক দূর্যোগ।সামান্য কয়েক ন্যানোমিটারে ক্ষুদ্র এক মইক্রোঅর্গানাইজিমের কাছে আজ গোটা পৃথিবী অসহায়।খালি চোখে দেখা যায় না অথচ কোনো এক অদৃশ্যশক্তি রুপেই গোটা পৃথীবিকে সে অচল করে দিচ্ছে। এবং বিশ্বেরপ্রায় সব দেশ এক হয়ে ও রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে এ ক্ষুদ্র অণুজীবটির কাছে।সমগ্র পৃথিবী যেন আজ মৃত্যুপুরীতে পরিনত হয়েছে। শুধু এ একটি ভাইরাসের কারনে।

করোনা ভাইরাস

২০২০ সালে ডিসেম্বর মাসে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম শনাক্ত হওয়া এ ভাইরাসটি আজ আ্যান্টার্কটিকা ছাড়া গোটা পৃথিবীতে বিস্তার লাভ করছে। এবং প্রতিনিয়ত মানুষের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করে যাচ্ছে।

 

করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি

 

অনেক সময় কোন এক প্রানী থেকে এসে নতুন নতুন ভাইরাস মানব শরীরে বাসা বাধতে শুরু করে। বিশ্বসাস্থ্য সংস্থার ধারনা সাম্প্রতিক ভাইরাস টি উৎস কোন এক প্রানী।যতটুকু জানা যায় মানুষের আক্রানত্ হবার ঘটনাটি ঘটেছে চীনের উহান শহরে সামুদ্রিক মাছ পাইকারি ভাবে বিক্রি হয় এমন একটি বাজারে। করুনা ভাইরাস পরিবারে আছে তবে এধরনের ছয়টি ভাইরাস আগে পরিচিত থাকলে ও এখন যেটিতে সংক্রমিত হচ্ছে মানুষ সেটি নতুন।

 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে ভাইরাসটির ইনকিউবেশন পিরিয়ড ১৪ দিন পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। তবে কিছু কিছু গবেষক এর মতে এর স্থায়িত্ব ২৪দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। মানুষের মধ্যে যখন ভাইরাসে উপসর্গ দেখা দিবে তখন বেশি মানুষের সংক্রমনের সম্ভাবনা থাকবে তাদের। তবে এমন ধারনা ও করা হচ্ছে যে নিজেরা অসুস্থ্য না থাকার সময় ও সুস্থ্য মানুষের ভাইরাস সংক্রমিত করতে পারে মানুষ।

 করোনা ভাইরাসের লক্ষন

 

করোনা ভাইরাসের লক্ষন গুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বর, কাশি,এবং শ্বাসকষ্ট।আরো মারাত্নক ক্ষেত্রে এই সংক্রমনের ফলে নিউমোনিয়া বা শ্বাস- প্রশ্বাসের অসুবিধা হতে পারে। তবে খুব কম ক্ষেত্রে এ রোগ প্রানগাতি হয়। এসব লক্ষন গুলো ফ্লু বা সাধারন ঠান্ডা জ্বর যা কোভিড -১৯ এর চেয়ে অনেক বেশি সাধারন।এ কারনে কোভিড ১৯ এ আক্রান্ত হয়েছে কি না তা পরীক্ষা নেওয়া দরকার। এটি মনে রাখা প্রয়োজন যে মূল প্রতিরোধমূলক ব্যাবস্থা একই রকম।

করোনার লক্ষ্মণ

এর মধ্যে রয়েছে বার বার হাত ধোয়া, এবং শ্বাস প্রশ্বাস জনিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। যেমন হাচি বা কাশি দেওয়ার সময় কনই দিয়ে ঢেকে নেওয়া বা টিস্যু ব্যাবহার করা। তারপর টিস্যুটি নিকটবর্তী টিস্যুটি নিকট বর্তী বন্ধ ময়লার বাক্সে ফেলা দেয়া জ্বর দিয়ে ভাইরাসের সংক্রমন শুরু হয়। এরপর শুকনো কাশি দেখা দিতে পারে। প্রায় একসাপ্তাহ পরে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়। অনেক রোগিকেহাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দিতে হয়। এখন পর্যন্ত বৈশ্বিকভাবে

 

শনাক্তের তুলনায় মৃত্যুর হার তিন ভাগের বেশি।ইউরোপের কোন কোন অঞ্চলে অধিক মৃত্যুর হার ও দেখা যাচ্ছে। ৫৬ হাজার আক্রান্ত টোগির উপর চালানো এক জরিপ নিয়ে বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থ্যা এক পরি সংখ্যানে উঠে এসেছে। এই রোগে ৬% কঠিনভাবে অসুস্থ হয়, তাদের ফুসফুস বিকল হওয়া সেপটিক শক, অঙ্গ বৈকল্য, এবং মৃত্যুর সম্ভাবনা তৈরী হয়।

 

করোনা যেভাবে বিস্তার লাভ করে

 

বিভিন্ন ভাবে এই ভাইরাস বিস্তার লাভ করতে পারে যেমন

কর্মক্ষেত্রেঃ

অফিসে একই ডেক্স এবং কম্পিউটার ব্যাবহার করলে ভাইরাস সংক্রমনের ঝুকি থাকে। বিশেষজ্ঞ রা বলেছেন হাচি কাশি থেকে করুনা ভাইরাস ছড়ায়। যেকোন জায়গা থেকে করোনা ভাইরাস কয়েকঘন্টা এমনকি কয়েকদিন পর্যন্ত সক্রিয় থাকতে পারে।

জনসমাগম

যেসব জায়গায় মানুষ বেশি জড়ো হয় সেসব স্থান এড়িয়ে চলা। কিংবা বাড়তি সতর্কতার পরামর্শ দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। এর মধ্যে খেলাধুলার স্থান ও সিনেমা হল থেকে শুরু করে ধর্মীয় স্থান ও রয়েছে।

ব্যাংক প্রতিষ্ঠানেঃ

বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকআর্থিক প্রতিষ্ঠানে  ও যখন গ্রাহকরা যায় তখন অনেকে একটি কলম ব্যাবহার করেন করোনা ভাইরাসের আক্রান্ত কোন ব্যাক্তি যদি সে কলম ব্যাবহার করে তাহলে পরবর্তী ব্যাবহারকারী ব্যাক্তিদের করুনা ভাইরাসের ঝুকি থাকে।

লিফটঃ

 

ভাইরাস সংক্রমনের আরেকটি জায়গা হতে পারে বাড়ি কিংবা অফিসের লিফট। লিফট ব্যাবহারের সময় নির্ধারিত ফ্লোরে যাবার জন্য লিফটের বাটন অনেকে বয়াবহার করছে। এদের মধ্যে কেউ যদি করুনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগি থাকেন এবং সে লিফট বাটনে অন্যদের আঙ্গুল গেলে সংক্রমনের সম্ভাবনা থাকে

টাকা পয়সাঃব্যাংক নোট বা টাকায় নানা ধরনের জীবানুর উপস্থিতির ঘটনা নতুন নয়। এমনকি ব্যাংক নোটের মাধ্যমে ও সংক্রামক নানা রোগ ছড়িয়ে পড়ার কথা ও বলেন বিশেষজ্ঞ রা।

করোনা ভাইরসের সতর্কতাঃ

করোনা ভাইরাস থেকে বাচার জন্য আমরা কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে পারি সেগুলো হলো

১. প্রবাহ মান পানিতে হাত ভিজানো।

২.ভেজা হাতে পর্যাপ্ত পরিমান সাবান ব্যাবহার করা।

৩. হাতের পিছনের অংশ ও আঙ্গুলের মধ্যের অংশ এবং নখের নিচের অংশ সহ হাতের সব অংশয় অন্তত পক্ষে ২০ সেকেন্ড ভালোভাবে ধুয়ে ফেলা।

৪. প্রবাহমান পানিতেভালোভাআে জকচলে হাত ধোয়া।

৫. বাইরে বের হওয়ার সময় মাস্ক ব্যাবহার করা অন্যদেশের মত বাংলাদেশে ও করোনা ভাইরাসের প্রাূুর্ভাব ঠেকাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। মানুষের মধ্যে করুনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে সরকারি বেসরকরি সাধারন ছুটি ঘোষনা করেছেন।এসময় ঔষধএর দোকান নিত্যপ্রয়োজনীয় নিত্যপন্যের দোকান বাদে দেশের সকল বিপনিবিতান বন্ধ ঘোষনা করা হয়। দুমাসের ও বেশি সাধারন ছুটি শেষ করে আবার সবাই কাজে গেছে।

 

বিপনিবিতান খুলে গেছে। চালু হয়েছে গনপরিবহন ও। বলা হয়েছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এগুলো করা হচ্ছে।শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনো বন্ধ রয়েছে। বিমান চলাচল দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর অভ্যন্তরীন বিমান চালু হয়েছে।এক বছরের ও কম সময়ের মধ্যে করোনা ভাইরাস ভ্যাকসিন আবিষ্কার করে ফেলেছেবিশ্বের বেশ কটি প্রতিষ্ঠান।এমনকি পরীক্ষা নীরিক্ষার পরে চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে বেশ কয়েকটি।

উপসংহার

করোনা ভাইরাস মহামারির ফলে প্রায় সবদেশ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। শুধু মৃত্যু ডেকে আনেনি নানা বিপর্যয় ও ডেকে এনেছ।এখন দেশ কিছুটা স্বাভাবিক অবস্থায় আছে।আমাদের সতর্কতা ও নিয়মনীতির ফলেই এমন মহামারী এড়িয়ে চলা সম্ভব।উপরিউক্ত লক্ষনগুলো সতর্কতা মেনে চললে এ ভাইরাস ঠেকানো সম্ভব।তাই এ ভাইরাস ঠেকাতে সকলকে একসাথে নিয়ম মেনে কাজ করতে হবে এতেই দেশ ও জাতির মঙ্গল।

আরো পড়ুন – দরখাস্ত লেখার নিয়ম ২০২২

আরো পড়ুন – গার্মেন্টস মেশিন পরিচিতি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *