Ayatul Kursi Bangla ( আয়াতুল কুরসী বাংলা ) উচ্চারণ ,অর্থ , অনুবাদ ও ফজিলত
প্রিয় দীনি ভাই-বোনেরা । আসসালামু আলাইকুম ওরাহমাতুল্লাহ। আশা করছি আপনারা ভালো আছেন। আপনাদের সুস্থতা এবং দীর্ঘায়ু কামনা করে শুরু করছি Ayatul Kursi bangla নিয়ে লেখা । পুরো এই আর্টিকেল পড়লে আয়াতুল কুরসি বাংলা সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবেন। তাই খুব উপকারী পুরো লেখাটি পড়ার আহ্বান রইল ।
Ayatul Kursi Bangla
আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়া ,আল হাইয়্যুল কাইয়্যুম,লা তা খুযুহু সিনাতুও ওয়ালা নাওম ,লাহু মা ফিস সামা ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদি, মান যাল্লাযী ইয়াশফাউ ইন্দাহু ইল্লা বিইযনিহী ,ইয়া লামু মা বাইনা আইদিহীম ওয়ামা খলফাহুম ,ওয়ালা ইউহিতুনা বিশাইইম মিন ইলমিহী ইল্লা বিমা শাহায়া ,ওয়াসি আ কুরসিয়্যুহুস সামা ওয়াতি ওয়াল আরদা,ওয়ালা ইয়াউদুহু হিফজুহুমা ওয়া হুয়াল আলিয়্যুল আজীম ।
সূচিপত্র
ayatul kursi bangla uccharon / আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ ছবি
Ayatul Kursi Bangla Anubad আয়াতুল কুরসী বাংলা অর্থ
আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাকে তন্দ্রা স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রা ও নয় । আসমান ও জমীনে যা কিছু রয়েছে সবই তার । কে আছে এমন যে সুপারিশ করবে তার কাছে তার অনুমতি ছাড়া ? দৃষ্টির সামনে এবং পিছনে যা কিছু আছে সবই তিনি জানেন । তার জ্ঞান সীমা থেকে তারা কোন কিছুকে পরিবষ্টিত করতে পারে না , কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন । তার সিংহাসন সমস্ত আসমান ও জমিনকে পরিবেষ্টিত করে আছে । আর সেগুলোকে ধারণ করা তার পক্ষে কঠিন নয় । তিনি সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান ।
পড়ুন – গায়েবী টাকা পাওয়ার দোয়া
Ayatul Kursi Bangla Anubad আয়াতুল কুরসী বাংলা অর্থ ছবি
আয়াতুল কুরসি আরবি
اَللّٰہُ لَاۤ اِلٰہَ اِلَّا ہُوَ ۚ اَلۡحَیُّ الۡقَیُّوۡمُ ۬ۚ لَا تَاۡخُذُہٗ سِنَۃٌ وَّلَا نَوۡمٌ ؕ لَہٗ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَمَا فِی الۡاَرۡضِ ؕ مَنۡ ذَا الَّذِیۡ یَشۡفَعُ عِنۡدَہٗۤ اِلَّا بِاِذۡنِہٖ ؕ یَعۡلَمُ مَا بَیۡنَ اَیۡدِیۡہِمۡ وَمَا خَلۡفَہُمۡ ۚ وَلَا یُحِیۡطُوۡنَ بِشَیۡءٍ مِّنۡ عِلۡمِہٖۤ اِلَّا بِمَا شَآءَ ۚ وَسِعَ کُرۡسِیُّہُ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضَ ۚ وَلَا یَـُٔوۡدُہٗ حِفۡظُہُمَا ۚ وَہُوَ الۡعَلِیُّ الۡعَظِیۡمُ .
আয়াতুল কুরসির উপকারিতা ও ফজিলত
আয়াতুল কুরসির অনেক কার্যকরী ফল বা উপকার রয়েছে । আছে অসংখ্য হাদীস । কয়েকটি হাদীস এমন–
১. হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু কতৃক বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদীসের একাংশে উল্লেখ করা হয়েছে-
اذا اويت الى فراشك فاقرا اية الكرسي الله لا اله الا هو الحي القيوم حتى تختم الآية فانك لن يزال عليك من الله حافظ ولا يقربك شيطان حتى تصبح. رواه البخاري في كتاب الكفالة.
অনুবাদ: যখন তুমি বিছানায় যাবে তখন Ayatul Kursi bangla – اَللّٰہُ لَاۤ اِلٰہَ اِلَّا ہُوَ ۚ اَلۡحَیُّ الۡقَیُّوۡم
থেকে আয়াত শেষ পর্যন্ত পাঠ করবে । তাহলে সকাল পর্যন্ত আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমার নিকট হেফাজতকারী থাকবে এবং শয়তান তোমার কাছে আসতে সক্ষম হবে না । (সহীহ বুখারী , হাদীস নং ২৩১১ )
আয়াতুল কুরসির ফজিলত হাদিস
২. হযরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত । নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, প্রতিটি জিনিসের একটি চূড়া থাকে কোরআনের সূরা সূরা বাকারা । তাতে এমন একটি আয়াত আছে যা কোরআনের অন্য আয়াতের নেতা । সেটা হলো Ayatul Kursi । (সুনানে তিরমিজি, হাদীস নং ৩১১৯)
৩.হযরত আবু উমামা রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে আর কিছু তার জান্নাতে প্রবেশের পক্ষে অন্তরায় নেই । অর্থাৎ মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে । ( সুনানে নাসায়ী ,তাবারানী ও সহীহ ইবনে হিব্বান )
আয়াতুল কুরসি পড়ার নিয়ম
ayatul kursi bangla পাঠ করার নির্ধারিত বিশেষ কোন নিয়ম নেই । তবে আউযু বিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম এবং বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম আগে পড়ে তারপর আয়াতুল কুরসি পাঠ করতে হয় । অজুসহ এবং অযু ছাড়া দুই অবস্থায় পড়া যায় । তবে অজুসহ পাঠ করা উত্তম ।
ayatul kursi bangla পড়ার সময় হলো –
১.পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পরে একবার পাঠ করতে হয়।
২. ঘুমানোর আগে অযুর সাথে একবার পড়তে হয়।
৩. অযু ছাড়াও মুখস্থ দিনে রাতে যখন তখন পড়া যায় ।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ: বলেন যখন শয়তান মানব সমাজে পরিভ্রমণ করে তখন Ayatul Kursi bangla পড় । অর্থাৎ সকাল সন্ধ্যায় বেশি করে পাঠ করো ।
আয়াতুল কুরসির ইতিহাস Ayatul Kursi History
আয়াতুল কুরসী সংশ্লিষ্ট ইতিহাস বা ঘটনা হলো দুটি । পর্যায়ক্রমে দুটিই উল্লেখ করা হচ্ছে ।
আয়াতুর কুরসির ঘটনা ১
হযরত আবু আইয়ুব আনসারী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, আমার ধনাগার থেকে জিনেরা খেজুর চুরি করে নিয়ে যেত । আমি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এজন্য অভিযোগ পেশ করি । তিনি বলেন যখন তুমি তাকে দেখবে তখন ।
بسم الله اجيبي رسول الله
পাঠ করবে যখন সে এলো তখন এটি পাঠ করে আমি তাকে ধরে ফেললাম তখন সে বলল আর আসবে না সুতরাং আমি তাকে ছেড়ে দিলাম আমি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে উপস্থিত হলে আমাকে বললেন তোমার বন্দী কি করেছিল ?
আমি বললাম তাকে আমি ধরে ফেলেছিলাম । কিন্তু সে আর আসবে না অঙ্গীকার করা তাকে ছেড়ে দিয়েছি । তিনি বললেন সে আবার আসবে । আমি তাকে এভাবে দু তিনবার ধরে ছেড়ে দেই । আমি তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বর্ণনা করি ।
তিনি বারবার বলেন সে আবার আসবে । শেষবার আমি তাকে বলি এবার তোমাকে ছাড়বো না , সে বলল আপনি আমাকে ছেড়ে দিন আমি এমন একটি জিনিস শিখিয়ে দিচ্ছি যে কোনদিন জ্বীন ও শয়তান আপনার কাছে আসতে পারবে না । আমি বললাম আচ্ছা বলে দাও । সে বলল ওটা আয়াতুল কুরসি । আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বর্ণনা করি । তিনি বললেন সে মিথ্যাবাদী হলেও এটা সত্য বলেছে ।
( মুসনাদে আহমদ, ৫/৪২২ জামে তিরমিজি, হাদীস নং ৮/১৮৩
সহিহ বুখারীতে এমন একটি বর্ণনা আছে হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানে আমাকে যাকাতের মালের প্রহরী নিযুক্ত করেন । আমার নিকট একজন আগমনকারী আসে এবং ওই মাল থেকে কিছু উঠিয়ে নিয়ে সে তার চাদরে জমা করতে থাকে । আমি তাকে ধরে ফেললাম এবং বললাম আমি তোমাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে নিয়ে যাব । সে বলে আমাকে ছেড়ে দিন । আমি অত্যন্ত অভাবী ।
আমার অনেক পোষ্য আছে । তার প্রতি আমার করুণা হয় । আমি তাকে ছেড়ে দেই । সকালে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমার বন্দীর কি করেছিল ? আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে তার ভীষণ অভাবের অভিযোগ করে এবং বলে তার অনেক পোষ্য রয়েছে ।
কাজেই আমি তাকে ছেড়ে দেই । নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে । সে আবার আসবে । আমি নবীজির কথায় বুঝলাম সে আবার আসবে । আমি পাহারা দিতে থাকলাম । সে এলো এবং খাদ্যে উঠাতে লাগলো । আমি তাকে ধরে বললাম , তোমাকে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট নিয়ে যাব ।
সে আবার ওই কথাই বলল আমাকে ছেড়ে দিন আমার খুবই অভাব। আমার অনেক পরশু আছে আমি প্রতিজ্ঞা করছি আর চুরি করতে আসবো না । তখন তার প্রতি আমার দয়া হলো আমি তাকে ছেড়ে দিলাম । সকালে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন হে আবু হুরায়রা তোমার বন্ধী কি করেছে ?
আমি বললাম সে ওয়াদা করেছে তাই ছেড়ে দিয়েছি । নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে । সে আবার আসবে । তৃতীয় রাতে আমি পাহারা দিতে থাকলাম । অতঃপর সে খাদ্য উঠাতে লাগলো আমি তাকে বললাম এটা তৃতীয়বার এটাই শেষ বার ।
তুমি বারবার বলছো আর আসবে না অথচ আবার আসছো । এবার আমি তোমাকে নবীজির সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট নিয়ে যাব । সে বলল আমাকে ছেড়ে দিন । আমি আপনাকে এমন জিনিস শিক্ষা দিচ্ছি যা দ্বারা আল্লাহ তা’আলা আপনার উপকার সাধন করবেন । আমি বললাম ওইগুলি কি ? তখন সে বললো যখন আপনি বিছানায় শয়ন করবেন তখন আয়াতুল কুরসি পাঠ করবেন ।
আয়াতুল কুরসী ইতিহাস
তাহলে আল্লাহ তায়ালা আপনার জন্য একজন প্রহরী নিযুক্ত করবেন। তাই সকাল পর্যন্ত শয়তান আপনার নিকটবর্তী হতে পারবে না ।
সুতরাং আমি তাকে ছেড়ে দিলাম । পরদিন সকালে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাই আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন আবু হুরায়রা তোমার বন্দী কি করেছে ? আমি বললাম সে আমাকে এমন জিনিস শিখিয়েছে যা দ্বারা আল্লাহ সাহায্য প্রাপ্ত হব ।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন সেটা কি ? সে বলেছে যখন আপনি বিছানায় শয়ন করবেন তখন আয়াতুল কুরসি পাঠ করবেন । তাহলে আল্লাহ তায়ালা আপনার জন্য একজন প্রহরী নিযুক্ত করবেন। সে ভোর পর্যন্ত আপনার পাহারায় থাকবে । তাই শয়তান সকাল পর্যন্ত আপনার নিকটবর্তী হতে পারবে না ।
সুতরাং আমি তাকে ছেড়ে দিলাম । নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন সে চরম মিথ্যাবাদী হলেও এ ব্যাপারে সত্য বলেছে । হে আবু হুরায়রা তুমি কি জানো তিন রাত কার সাথে কথা বলেছো ?
আবু হুরায়রা বললেন না । তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন সে ছিল শয়তান ।( ফাতহুল বারী,৮/৬৭২,৪/৫৬৮,৬/৩৮৬ সুনানে দারেমী,৫৩২ )
আয়াতুল কুরসি ও তিন কুল পাঠের গুরুত্ব
আয়াতুল কুরসি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি আয়াত । হযরত উবাই ইবনে কাব রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুকে রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করেন , আল্লাহ তায়ালার কিতাবে সর্বাপেক্ষা মর্যাদা বিশিষ্ট আয়াত কোনটি ? তিনি উত্তরে বলেন আল্লাহ তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভালো জানেন ।
তিনি পুনরায় এটাই জিজ্ঞেস করেন । বারবার প্রশ্ন করায় তিনি বলেন এটা ayatul kursi bangla । তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়া সাল্লাম বলেন হে আবুল মুনজির! আল্লাহ তাআলা তোমার জ্ঞানে বারাকাত দান করুন । যে আল্লাহর হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তার নামে শপথ করে বলছি যে,এর জিব্বা হবে , ওষ্ঠ হবে , এটি প্রকৃত বাদশার পবিত্রতা বর্ণনা করবে ও আরশের পায়ায় লেগে থাকবে ।
( মুসনাদে আহমদ, ৫/১৪ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ১/৫৫৬ )
হযরত আবু উমামা রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে আর কিছু তার জান্নাতে প্রবেশের পক্ষে অন্তরায় নেই । অর্থাৎ মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে । ( সুনানে নাসায়ী ,তাবারানী ও সহীহ ইবনে হিব্বান )
আয়াতুল কুরসির পাশাপাশি তিন কুল পাঠের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনেক। শরিয়ত মোতাবেক যত রুকাইয়ার আয়াত বা সূরা আছে তার মধ্যে তিন কুল আছে । এই তিন কুল অর্থাৎ সূরা ইখলাস, ফালাক্ব ও নাসের কার্যকরীতা অনেক।
ayatul kursi benefits
এগুলো ৩ বার করে পড়ে হাতে ফুঁক দিয়ে শরীরের সম্মুখ ভাগে মুছে দেওয়া যায় । এ সম্পর্কে স্পষ্ট হাদীস এসেছে । প্রতি রাত্রে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শয্যা গ্রহণকালে সূরা ইখলাস ,সূরা ফালাক, সূরা নাস পাঠ করে দুহাত একত্রিত করে হাতে ফুঁক দিয়ে সমস্ত শরীরে হাত বুলাতেন । মাথা ও মুখ থেকে শুরু করে তার দেহের সম্মুখভাগের উপর হাত বুলাতেন এবং তিনবার এরূপ করতেন । ( সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৬৫২)
ফজর ও মাগরিব এই দুই ওয়াক্তের ফরজ নামাজের পর সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস প্রতিটি তিনবার করে পড়া সুন্নাত । অন্যান্য ফরজ নামাজ আদায় করে একবার করে এই তিন সূরা পড়ার কথা বলা হয়েছে । (আবু দাউদ )
ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পড়ার ফজিলত
ঘুমানোর আগে অযু করতে হয়। এটি সহজ হলেও খুব ফজিলত পূর্ণ একটি আমল । কেননা হাদীসে বর্ণিত হয়েছে–
যে ব্যাক্তি পবিত্রবস্থায় ( অযু্ অবস্থায়) ঘুমায় তার সাথে একজন ফেরেশতা নিয়োজিত থাকে। অতঃপর সে ব্যাক্তি ঘুম থেকে জেগে ওঠার সাথে সাথেই আল্লাহর কাছে ফেরেশতাটি প্রার্থনা করে বলে , হে আল্লাহ! তোমার উমুক বান্দাকে ক্ষমা করে দাও। কেননা সে পবিত্রবস্থায় ঘুমিয়েছিল। ( সহীহ ইবনে হিব্বান)
অযু করার পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করা উত্তম।
নবীজির ঘোষণা–
যে ব্যক্তি ঘুমানোর পূর্বে Ayatul Kursi bangla পাঠ করবে, তার হেফাজতের জন্য আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে একজন ফেরেশতা নিযুক্ত করা হবে । সে তাকে সকাল পর্যন্ত শয়তান থেকে হেফাজতে রাখবে । ( সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ২৩১১)
আয়াতুল কুরসি ও সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত
আয়াতুল কুরসি আরবি
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
اَللّٰہُ لَاۤ اِلٰہَ اِلَّا ہُوَ ۚ اَلۡحَیُّ الۡقَیُّوۡمُ ۬ۚ لَا تَاۡخُذُہٗ سِنَۃٌ وَّلَا نَوۡمٌ ؕ لَہٗ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَمَا فِی الۡاَرۡضِ ؕ مَنۡ ذَا الَّذِیۡ یَشۡفَعُ عِنۡدَہٗۤ اِلَّا بِاِذۡنِہٖ ؕ یَعۡلَمُ مَا بَیۡنَ اَیۡدِیۡہِمۡ وَمَا خَلۡفَہُمۡ ۚ وَلَا یُحِیۡطُوۡنَ بِشَیۡءٍ مِّنۡ عِلۡمِہٖۤ اِلَّا بِمَا شَآءَ ۚ وَسِعَ کُرۡسِیُّہُ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضَ ۚ وَلَا یَـُٔوۡدُہٗ حِفۡظُہُمَا ۚ وَہُوَ الۡعَلِیُّ الۡعَظِیۡمُ .
সূরা হাশরের শেষ ৩ আয়াত
اَعُوْذُ بِاللهِ السَّمِيْعِ الْـعَلِيْمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
هُوَ اللهُ الَّذِیْ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ۚ عٰلِمُ الْغَیْبِ وَ الشَّهَادَۃِ ۚ هُوَ الرَّحْمٰنُ الرَّحِیْمُ ﴿۲۲﴾ هُوَ اللهُ الَّذِیْ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ۚ اَلْمَلِكُ الْقُدُّوْسُ السَّلٰمُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَیْمِنُ الْعَزِیْزُ الْجَبَّارُ الْمُتَکَبِّرُ ؕ سُبْحٰنَ اللهِ عَمَّا یُشْرِكُوْنَ ﴿۲۳﴾ هُوَ اللهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْاَسْمَآءُ الْحُسْنٰی ؕ یُسَبِّحُ لَهٗ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ ۚ وَ هُوَ الْعَزِیْزُ الْحَکِیْمُ ﴿۲۴﴾
(সুনানে তিরমিযী, হাদীস: ৩০৯০)
اَعُوْذُ بِاللهِ السَّمِيْعِ الْـعَلِيْمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ
(তিনবার)
তারপর بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ (১ বার) পড়ে।
যে ব্যক্তি সকালে তিনবার আউযুবিল্লাহিস সামিউল আলিম মিনাস শাইতানির রাজিম পাঠ করার পর সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পাঠ করবে, তার জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত ৭০ হাজার ফেরেশতা গুনাহ মাফের জন্য দোয়া করবে। আবার সন্ধ্যায় পাঠ করলে সকাল পর্যন্ত ৭০ হাজার ফেরেশতা গুনাহ মাফের দোয়া করবে এবং সে ঐদিন মারা গেলে শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করবে ।
আয়াতুল কুরসি মুখস্থ করার সহজ উপায়
আয়াতুল কুরসী মুখস্ত করা খুব সহজ । আপনারা যদি পবিত্র কুরআন নাজেরা অর্থাৎ দেখে দেখে পড়তে পারেন , তাহলে দেখে দেখে দৈনিক একটু একটু করে মুখস্ত করা শুরু করুন। মুখস্ত করার সময় প্রত্যেকটি লাইনে আঙ্গুল দিয়ে ধরে ধরে পড়ুন । মাথা থেকে অন্য চিন্তা বাদ দিয়ে অক্ষরগুলো মাথায় গেঁথে নিতে চেষ্টা করুন ।
এভাবে কয়েকদিন ট্রাই করে গেলে অনেকটা মুখস্ত যাবে ইনশাআল্লাহ। সম্ভব হলে যাদের এটা মুখস্ত আছে তাদেরকে শোনাবেন । ভুলত্রুটি সহজে তারা ধরে দিতে পারবে । আর যদি পবিত্র কোরআন দেখে দেখে না পড়তে পারেন তাহলে ইউটিউবে সার্চ করে ভালো ভিডিও বেছে নিন । এবং নিয়মিত শুনতে থাকুন । অল্প কয়েকদিনের মধ্যে মুখস্ত যাবে ইনশাআল্লাহ।
আয়াতুল কুরসি বাংলা মুখস্ত করার সহজ উপায় ভিডিও
ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়ার দলিল
পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করতে স্বয়ং নবীজি উৎসাহিত করেছেন । নিজেও পাঠ করেছেন । এই দেখুন হাদীসটি ।
হযরত আবু উমামা রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে আর কিছু তার জান্নাতে প্রবেশের পক্ষে অন্তরায় নেই । অর্থাৎ মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে । ( সুনানে নাসায়ী ,তাবারানী ও সহীহ ইবনে হিব্বান )
আয়াতুল কুরসি নিয়ে হাদিস
পড়ুন – ঝড়ের সময় পড়ার দোয়া
কুরসি নিয়ে অসংখ্য হাদীস রয়েছে । এখানে ধারাবাহিকভাবে চারটি হাদীস উল্লেখ করা হচ্ছে ।
আয়াতুল কুরসি নিয়ে হাদিস ১
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু কতৃক বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদীসের একাংশে উল্লেখ করা হয়েছে- যখন তুমি বিছানায় যাবে তখন আয়াতুল কুরসি – اَللّٰہُ لَاۤ اِلٰہَ اِلَّا ہُوَ ۚ اَلۡحَیُّ الۡقَیُّوۡم
থেকে আয়াত শেষ পর্যন্ত পাঠ করবে । তাহলে সকাল পর্যন্ত আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমার নিকট হেফাজতকারী থাকবে এবং শয়তান তোমার কাছে আসতে সক্ষম হবে না । (সহীহ বুখারী , হাদীস নং ২৩১১ )
আয়াতুল কুরসি নিয়ে হাদিস ২
হযরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত । নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, প্রতিটি জিনিসের একটি চূড়া থাকে কোরআনের সূরা সূরা বাকারা । তাতে এমন একটি আয়াত আছে যা কোরআনের অন্য আয়াতের নেতা । সেটা হলো আয়াতুল কুরসি । (সুনানে তিরমিজি, হাদীস নং ৩১১৯)
আয়াতুল কুরসি নিয়ে হাদিস ৩
হযরত আবু উমামা রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে আর কিছু তার জান্নাতে প্রবেশের পক্ষে অন্তরায় নেই । অর্থাৎ মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে । ( সুনানে নাসায়ী ,তাবারানী ও সহীহ ইবনে হিব্বান )
আয়াতুল কুরসি নিয়ে হাদিস ৪
হযরত উবাই ইবনে কাব রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুকে রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করেন , আল্লাহ তায়ালার কিতাবে সর্বাপেক্ষা মর্যাদা বিশিষ্ট আয়াত কোনটি ? তিনি উত্তরে বলেন আল্লাহ তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভালো জানেন ।
তিনি পুনরায় এটাই জিজ্ঞেস করেন । বারবার প্রশ্ন করায় তিনি বলেন এটা আয়াতুল কুরসি । তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়া সাল্লাম বলেন হে আবুল মুনজির! আল্লাহ তাআলা তোমার জ্ঞানে বারাকাত দান করুন । যে আল্লাহর হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তার নামে শপথ করে বলছি যে,এর জিব্বা হবে , ওষ্ঠ হবে , এটি প্রকৃত বাদশার পবিত্রতা বর্ণনা করবে ও আরশের পায়ায় লেগে থাকবে ।
( মুসনাদে আহমদ, ৫/১৪ সহীহ মুসলিম হাদীস নং ১/৫৫৬ )
আয়াতুল কুরসি নিয়ে আরবি হাদীস
اذا اويت الى فراشك فاقرا اية الكرسي الله لا اله الا هو الحي القيوم حتى تختم الآية فانك لن يزال عليك من الله حافظ ولا يقربك شيطان حتى تصبح. رواه البخاري في كتاب الكفالة.
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু কতৃক বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদীসের একাংশে উল্লেখ করা হয়েছে- যখন তুমি বিছানায় যাবে তখন আয়াতুল কুরসি – اَللّٰہُ لَاۤ اِلٰہَ اِلَّا ہُوَ ۚ اَلۡحَیُّ الۡقَیُّوۡم
থেকে আয়াত শেষ পর্যন্ত পাঠ করবে । তাহলে সকাল পর্যন্ত আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমার নিকট হেফাজতকারী থাকবে এবং শয়তান তোমার কাছে আসতে সক্ষম হবে না । (সহীহ বুখারী , হাদীস নং ২৩১১ )
عن ابي امامة رضي الله عنه قال قال: رسول الله صلى الله عليه وسلم. من قرا ايات الكرسي في دبر كل صلاة لم يمنعه من دخول الجنه الا ان يموت. رواه النساي.
হযরত আবু উমামা রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে আর কিছু তার জান্নাতে প্রবেশের পক্ষে অন্তরায় নেই । অর্থাৎ মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে । ( নাসায়ী,তাবরানী )
عن الحسن ابن علي رضي الله عنه قال قال: رسول الله صلى الله عليه وسلم. من قرا اية الكرسي في دور الصلاة المكتوبة كان في ذمة الله الى الصلاة الاخرى . رواه التبراني باسناد حسن
হযরত হাসান ইবনে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে সে পরবর্তী নামাজ পর্যন্ত আল্লাহর জিম্মায় থাকবে । ( তাবারানী )
আয়াতুল কুরসি রুকাইয়া
ayatul kursi bangla নিয়ে অনেক রকম রুকাইয়া করা যায় । বরং বলা চলে শরীয়ত সম্মতভাবে যতরকম তদবির সংক্রান্ত আমল বা আয়াত রয়েছে তার ভিতরে আয়াতুল কুরসি আছে । নিম্নে আয়াতুল কুরসির দুটি রুকাইয়া উল্লেখ করা হলো ।
আয়াতুল কুরসি রুকাইয়া ১
যে ব্যক্তির উপর জীনের আছর আছে কিংবা যে ঘরে জিনের উপদ্রব আছে সেই ঘরে সূরা ফাতিহা ,আয়াতুল কুরসি ও সুরা জিনের প্রথম পাঁচ আয়াত পড়ে পবিত্র পানিতে ফুঁক দিতে হয় । অতঃপর ওই পানি জীনগ্রস্ত ব্যক্তি বা ঘরে ছিটিয়ে দিলে দ্রুত সুস্থ এবং উপদ্রব বন্ধ হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ ।
হযরত আবু জাফর নাহহাস এই হাদীস নকল করেছেন যে কোন ব্যক্তি যদি আয়াতুল কুরসি এবং সূরা আরাফের ৫৪–৫৬ নং আয়াত , সূরা সাফফাতের ১–৮ নং আয়াত, এবং সূরা আর রহমানের ৩১–৩৫ নং আয়াত পাঠ করে তবে সমস্ত দিন এবং সন্ধ্যায় পাঠ করলে সমস্ত রাত শয়তান ও জাদুকরের অনিষ্ট ,জালেম বিচারকের অত্যাচার এবং চোর ডাকাতের অনিষ্ঠ ও হিংস্র প্রাণী আক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকবে।
আয়াতুর কুরসী নিয়ে প্রশ্ন উত্তর
আয়াতুল কুরসী কোন সূরার অংশ ?
আয়াতুল কুরসী মূলত পবিত্র কুরআনুল কারীমের সবচেয়ে বড় সূরা আল বাকারার অংশ । ক্রমিক নং অনুযায়ী এটি পবিত্র কুরআনের দ্বিতীয় নং সূরা । এই সূরাটি মাদানী অর্থাৎ পবিত্র মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে । সূরাটির মোট আয়াত সংখ্যা ২৮৬ টি । এবং রুকু ৪০ টি
আয়াতুল কুরসি ২৫৫ নং আয়াত । অনেক প্রোগ্রামে ইসলামিক কুইজ ধরা হয় । যেমন কোরআনের সবচেয়ে বড় এবং ছোট সূরার নাম কি ? অথবা অনেক ইসলামিক ইউটিউবাররা আপনাদের হাতের নাগালে পেয়ে প্রশ্ন করতে পারে ছোট এবং বড় সূরার নাম নিয়ে । কিংবা বন্ধুদের আড্ডার মাঝেও কোরআনের তথ্য কণিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে ।জীবনে উপরোক্ত অবস্থার সম্মুখীন হলে দ্বিধা সংকচ না করে দ্রুত বলে দিবেন পবিত্র কোরআনের সবচেয়ে বড় সূরা হল সূরা আল বাকারা এবং সব থেকে ছোট সূরা হলো সুরাতুল কাওসার ।
আয়াতুল কুরসি কত নাম্বার আয়াত ?
পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে সূরাতুল বাকারার মোট আয়াত সংখ্যা ২৮৬ টি । এর মধ্যে ২৫৫ নং আয়াতটি হলো খুব গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্য বহুল। এটি আয়াতুল কুরসি নামে পরিচিত ।
আয়াতুল কুরসি কেন বলা হয় ?
কুরছি শব্দের অর্থ হল আসন বা চেয়ার। বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা বলেন , কুরসি মানে আল্লাহ্র আকাশ । আয়াতে উল্লেখিত কুরসি শব্দ থেকেই আয়াতুল কুরসী নামকরণ করা হয়েছে । আর হাদীসে যেহেতু আয়াতুল কুরসি নাম বলা হয়েছে তাই সেটাই প্রসিদ্ধি লাভ করেছে ।
স্বপ্নে আয়াতুল কুরসি পড়লে কি হয়
স্বপ্ন কমবেশি সবাই দেখে থাকে । স্বপ্ন মূলত তিন কারণে হয় ।
১. শারীরিক সমস্যার কারণে ।
২. শয়তানের পক্ষ থেকে ।
৩. আল্লাহর পক্ষ থেকে ।
শরীয়তের বিধানের বহির্ভূত কোন স্বপ্ন হলে বুঝতে হবে তা শয়তানের পক্ষ থেকে । আর শরীয়ত সম্মত হলে অনেক ক্ষেত্রে আল্লাহর পক্ষ থেকে হতে পারে।
আবার অনেক সময় অনেক বেশি আমল করার কারণে ও ভালো স্বপ্ন হয়ে থাকে। এই যেমন আয়াতুল কুরসি।
দিনে-রাতে কারো পড়ার অভ্যাস থাকলে ঘুমের মধ্যেও আয়াতুল কুরসি পড়ার স্বপ্ন দেখতে পারে । তবে ঘুমের মধ্যে আয়াতুল কুরসির পড়ার স্বপ্ন দেখা নিঃসন্দেহে একটি ভাল বিষয় । কল্যাণকর একটি দিক ।
আর কারো আয়াতুল কুরসির পড়ার অভ্যাস না থাকার পরেও যদি স্বপ্নে পড়তে দেখে তাহলে তার নিয়মিত এটার ওপর আমল করা উচিত । হয়তো এই ইঙ্গিতই তাকে স্বপ্নের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে ।
আয়াতুল কুরসি পড়ে ঘুমালে কি হয় ?
যে ব্যক্তি ঘুমানোর পূর্বে আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, তার হেফাজতের জন্য আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে একজন ফেরেশতা নিযুক্ত করা হবে । সে তাকে সকাল পর্যন্ত শয়তান থেকে হেফাজতে রাখবে । ( সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ২৩১১)
আয়াতুল কুরসি পড়ে বাড়ি থেকে বের হলে
ঘর-বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় হাদীসে বর্ণিত অন্য একটি দোয়া আছে । সেটি পাঠ করেই বের হওয়া উচিত । তাহলে নিরাপত্তা, হেদায়েত লাভ হয় । তবে কেউ যদি আয়াতুল কুরসি পরে বাড়ি থেকে বের হয় তবু এটা তার জন্য উত্তম হবে ।
আয়াতুল কুরসি দিয়ে নামাজ পড়া যাবে ?
আয়াতুল কুরসি দিয়ে নামাজ আদায় করা যাবে । কেননা নামাজের কেরাত সর্ব নিম্ন তিন হতে হয় । যেমন সূরা কাওসার। আয়াত যদি বড় হয়ে থাকে তাহলে এক আয়াত দিয়েও নামাজ আদায় করা যাবে। তবে নামাজের প্রথম রাকাতে কেরাত লম্বা করা উচিত। আর হ্যাঁ নামাজে কেরাত পাঠের সুন্নাত নিয়ম ও আছে । সেই নিয়ম অনুযায়ী নামাজ আদায় করা ভালো।
আয়াতুল কুরসি পড়ে বুকে ফু দেওয়া যাবে ?
ayatul kursi bangla পাঠ করে বুকে ফুঁক দেওয়া জায়েয আছে। কোন কোন রাক্কীর ( শরীয়ত সম্মত তদবীর কারী) কাছে এটা করা উত্তম। তাছাড়া কোন হাদীসে ফুঁক দেওয়াকে নিষিদ্ধ করা হয়নি । বরং বরং তিন কুল পাঠ করে হাতে ফুঁক দিয়ে শরীরের সম্মুখ ভাগে মোছার কথা হাদীসে বর্ণিত হয়েছে । তবে আয়াতুল কুরসি পাঠ করে ফুঁক দেওয়াকে ফরজ বা ওয়াজিব পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যাবে না।
আয়াতুল কুরসির মর্যাদা এত বেশি কেন ?
মহাগ্রন্থ আল কুরআনুল কারীমের পাতায় পাতায় মহান আল্লাহ তাআলার পরিচয় দেওয়া আছে। কিন্তু আল্লাহ তাআলার পরিচয় সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় সূরা ইখলাস এবং আয়াতুল কুরসির মধ্যে । বিশেষ করে আয়াতুল কুরসির মধ্যে চমৎকার ও সংক্ষেপে আল্লাহ তায়ালার পরিচয় এসেছে। তার একচ্ছত্র ক্ষমতার কথা সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে । এজন্য আয়াতুল কুরসি এত অনন্য । বৈশিষ্ট্যময় ।
আর সবচেয়ে বড় কথা হাদীসের মধ্যে আয়াতুল কুরসির গুরুত্ব,ফজিলত ও মর্যাদার বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে । নবীজির জবানে যেহেতু আয়াতুল কুরসির কথা আলোচিত হয়েছে অতএব অন্য আর কোন কারণ খোঁজার যৌক্তিকতা নেই ।
আয়াতুল কুরসি কুরআন শরীফের কোন পাড়ায় ?
সমাজে অনেক রকম প্রকাশনীর ছাপানো কুরআনুল কারীম পাওয়া যায় । তার মধ্যে কলিকাতার ছাপা , নূরানী এবং হাফেজী কোরআন শরীফ । সাধারণ মানুষদের মধ্যে কলিকাতা এবং নুরানী বড় বড় অক্ষরে র ছাপা ব্যাপক হলেও প্রত্যেকটি হাফেজীয়া মাদ্রাসা এবং আলেমদের কাছে হাফেজী কুরআন জনপ্রিয়।
কেননা এই কোরআনে পৃষ্ঠা এবং পারা নিয়ম মতো থাকে । যা অন্য কোরআনের পাওয়া যায় না । এই যে আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত হাফেজগণ তারাও হাফেজী কোরআন দেখে মুখস্ত করেন। হাফেজি কোরআন হিসেবে আয়াতুল কুরসি তিন নং পাড়ায় অবস্থিত ।
আয়াতুল কুরসির মধ্যে আল্লাহ তাআলার কয়টি নাম রয়েছে
আয়াতুল কুরসির মধ্যে আল্লাহ তাআলার তিনটি আকর্ষণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ নাম রয়েছে । প্রথম নামটি জাতী নাম । পরের দুটি সিফাতী নাম । নাম তিনটি হলো–
১. আল্লাহ ২. হাইয়্যুন ৩. কাইয়্যুম ।
সিফাতী নাম দুটির ফজিলত ও হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে । এই দুটি নামের জিকির দ্বারা আল্লাহ তা’আলা কঠিন সমস্যাকে ও সমাধান করে দেন । বিপদ-আপদ কে দূর করে দেন । মনের ইচ্ছা পূর্ণ করে দেন ।
সিফাতি এ দুটি নাম ইসমে আজমের অন্তর্ভুক্ত । ইসমে আজম নিয়ে বিস্তারিত কথা বলার এখানে সুযোগ নেই । তাই আপাতত হাইয়্যুম এবং কাইয়্যুমের একটি হাদীস লক্ষ্য করুন । يا حي يا قيوم , برحمتك استغيث
অনুবাদ হে চিরঞ্জীব ! হে শক্তিধর রক্ষণাবেক্ষণকারী ! তোমার দয়ার উপর ভরসা করে তোমার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি । ( জামে তিরমিজি, হাদীস নং ৩৫২৪)
হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বর্ণনা করেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেকোনো পেরেশানি দেখলে তখন তিনি উপরোক্ত দোয়াটি পাঠ করতেন ।
হায়েজ অবস্থায় আয়াতুল কুরসি পাঠ করা যাবে কি ?
হায়েজ অবস্থায় নারীদের জন্য নামাজ, রোজা, তাওয়াফ ও কোরআন তেলাওয়াত নিষিদ্ধ । একথা কমবেশি সবার জানা আছে । কিন্তু হায়েজ অবস্থায় আয়াতুল কুরসি পাঠ করা যাবে কিনা এটা অনেকের জানা নেই । এই বিষয়টা ক্লিয়ার করেই আয়াতুল কুরসি শিরোনামের লেখাটি শেষ করা হবে ।
হায়েজ অবস্থায় মহিলারা কোরআন-হাদীসে বর্ণিত জিকির করতে পারে জিকিরের নিয়তে । এই জিকিরের নিয়তে জীন এবং ক্ষতিকর প্রাণীর আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য আয়াতুল কুরসি পাঠ করা যাবে।
আবার বলা হচ্ছে জিকিরের নিয়তে আয়াতুল কুরসি পড়তে হবে । তেলাওয়াতের উদ্দেশ্য নয় ।
শেষ কথাঃ
প্রিয় বন্ধুরা ayatul kursi bangla / আয়াতুল কুরসি বাংলা নিয়ে আজকের দির্ঘ্য লেখা এখানেই শেষ করছি । আশা করছি আপনাদের ভালো লেগেছে । আমলের নিয়তে মনোযোগ সহকারে আয়াতুল কুরসি পড়বেন এবং আমল করবেন বলে আশাবাদি আমি । আজকের মত এখানেই শেষ করছি । ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন আমাদের সাথেই থাকুন ।
লিখনে: মাওলানা শরিফ আহমাদ
লেখক ও শিক্ষক