বর্তমান সময়ে বাচ্চাদের মধ্যে এলার্জির সমস্যাটি বেশ সাধারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দূষণ, খাবারে কেমিক্যাল, আবহাওয়ার পরিবর্তন কিংবা জিনগত কারণে শিশুরা সহজেই বিভিন্ন ধরণের এলার্জিতে আক্রান্ত হতে পারে। কখনো কখনো সামান্য উপসর্গ থেকে শুরু হয়ে বড় ধরনের শারীরিক জটিলতায় রূপ নিতে পারে।
অনেক সময় বাবা-মায়েরা বুঝতেই পারেন না যে, তাদের সন্তানটি এলার্জিতে ভুগছে। ফলে সময়মতো চিকিৎসা না পেয়ে সমস্যা বাড়ে। তাই বাচ্চাদের এলার্জির লক্ষণগুলো সঠিকভাবে জানা এবং এলার্জি প্রতিরোধে ঘরোয়া ও চিকিৎসাভিত্তিক উপায়গুলো জানা অত্যন্ত জরুরি। এই লেখায় আমরা বিস্তারিত জানব কীভাবে বাচ্চাদের এলার্জি চিনবেন এবং তা থেকে রক্ষা করার কার্যকর পদ্ধতিগুলো কী হতে পারে।
সূচিপত্র
বাচ্চাদের এলার্জির সাধারণ লক্ষণগুলো কী?
বাচ্চাদের এলার্জির লক্ষণ বয়স অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে, তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ সব বয়সের বাচ্চাদের মধ্যে দেখা যায়। যেমন:
-
বারবার হাঁচি বা নাক দিয়ে পানি পড়া
-
চোখ লাল হয়ে যাওয়া বা চুলকানি
-
ত্বকে র্যাশ বা ফুসকুড়ি দেখা দেওয়া
-
বুক ধড়ফড় করা বা শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
-
খুসখুসে কাশি যা রাতে বাড়তে পারে
-
কিছু নির্দিষ্ট খাবার খাওয়ার পর পেট ব্যথা বা বমি
-
ঘনঘন কান্না বা অস্থিরতা, বিশেষ করে চুলকানির কারণে
এ ধরনের লক্ষণ যদি কয়েকদিন ধরে চলতে থাকে, তাহলে দ্রুত শিশু চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
বাচ্চাদের এলার্জি হওয়ার কারণসমূহ
শিশুদের এলার্জি সাধারণত পরিবেশগত বা খাদ্যভিত্তিক কারণেই হয়ে থাকে। নিচে উল্লেখযোগ্য কিছু কারণ তুলে ধরা হলো:
-
ধুলাবালি ও বাতাসে থাকা পরাগ রেণু
-
দুধ, ডিম, চিংড়ি মাছ, বাদাম, চকলেট ইত্যাদি খাবার
-
পোষা প্রাণীর লোম বা থুতু
-
ঘরের মধ্যে থাকা ফাংগাস বা ছাঁচ
-
কেমিক্যালযুক্ত সাবান, পারফিউম বা লোশন
-
অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম আবহাওয়ার পরিবর্তন
এসব কারণ থেকে বাচ্চাদের দূরে রাখা গেলে এলার্জির ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
বাচ্চাদের এলার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায়
বাচ্চাদের এলার্জি প্রতিরোধে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে, যেমন:
-
গরম পানির ভাপ: নাক বন্ধ বা হাঁচির সমস্যা থাকলে গরম পানির ভাপ শিশুদের জন্য উপকারী।
-
তাজা পানি ও ফলমূল: শিশুকে বেশি পানি পান করানো এবং ভিটামিন সি-যুক্ত ফল খাওয়ানো প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
-
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ রাখা: বিছানা, পোশাক, খেলনা প্রতিদিন পরিষ্কার করা প্রয়োজন।
-
সরাসরি ধুলাবালিতে খেলতে না দেওয়া: বাইরে থেকে এলে হাত-পা ধোয়া এবং জামাকাপড় বদলানো উচিত।
-
প্রাকৃতিক মধু (১ বছরের বেশি বয়সী শিশুদের জন্য) অল্প পরিমাণে খাওয়ানো যেতে পারে, যা হালকা এলার্জি কমাতে সাহায্য করে।
কখন ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন?
বাচ্চার এলার্জি যদি ঘন ঘন ফিরে আসে বা ঘরোয়া উপায়ে নিয়ন্ত্রণে না আসে, তাহলে দেরি না করে ডাক্তার দেখানো উচিত। নিচের উপসর্গ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি:
-
শিশুর শ্বাস নিতে সমস্যা হওয়া
-
ত্বকে ফোলা বা চুলকানির সঙ্গে জ্বর
-
কোনো খাবার খেয়ে তাৎক্ষণিক বমি, ডায়রিয়া বা চেতনা হারানো
-
একটানা ৭ দিনের বেশি কাশি বা র্যাশ
চিকিৎসক প্রয়োজন অনুযায়ী অ্যান্টি-হিস্টামিন, ইনহেলার বা স্কিন কেয়ার ওষুধ দিতে পারেন। তবে কোনো ওষুধ অবশ্যই নিজের ইচ্ছামতো না দিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শে দেওয়া উচিত।
বাচ্চাদের এলার্জি সমস্যা যতটা সাধারণ, ততটাই গুরুত্বপূর্ণ এটি সময়মতো শনাক্ত ও চিকিৎসা করা। একটু সচেতনতা ও ঘরোয়া যত্নের মাধ্যমে এলার্জি অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই শিশুর প্রতিটি শারীরিক পরিবর্তনের দিকে খেয়াল রাখুন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসা নিন। সুস্থ ও আনন্দময় শৈশব উপহার দিতে এর কোনো বিকল্প নেই।