আজকের তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর যুগে কম্পিউটার মানুষের জীবনের অপরিহার্য অংশে পরিণত হয়েছে। অফিস, শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে ঘরে বসে বিনোদনের ক্ষেত্রেও কম্পিউটারের ব্যবহার প্রতিনিয়ত বাড়ছে। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না—এই যন্ত্রটি কীভাবে কাজ করে, বা এর প্রধান অংশগুলো কী কী।
এক কথায় বলতে গেলে, কম্পিউটার এমন একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস যা নির্দিষ্ট নির্দেশনা অনুযায়ী ডেটা প্রক্রিয়াজাত করে ফলাফল প্রদান করে। এই লেখায় আমরা আলোচনা করব কম্পিউটারের কাজ কী, এটি কীভাবে কাজ করে, এর মূল তিনটি অংশ কী কী এবং কীভাবে এই অংশগুলো একসঙ্গে মিলিত হয়ে আমাদের বিভিন্ন কাজ সম্পাদন করে।
সূচিপত্র
কম্পিউটারের সংজ্ঞা ও কাজ
সংজ্ঞা:
কম্পিউটার একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস যা ইনপুট (প্রবেশিত) তথ্য গ্রহণ করে, সেটি প্রক্রিয়া করে এবং ফলাফল (আউটপুট) হিসেবে আমাদের সামনে উপস্থাপন করে। এটি দ্রুত গতিতে জটিল গাণিতিক ও যৌক্তিক কাজ সম্পাদনে সক্ষম।
কম্পিউটারের প্রধান কাজগুলো হলো:
-
ডেটা ইনপুট: কম্পিউটার কী-বোর্ড, মাউস, স্ক্যানার ইত্যাদির মাধ্যমে ব্যবহারকারীর কাছ থেকে তথ্য গ্রহণ করে।
-
ডেটা প্রসেসিং: প্রসেসর বা সিপিইউ প্রাপ্ত তথ্যকে নির্দিষ্ট প্রোগ্রামের সাহায্যে প্রক্রিয়াজাত করে।
-
আউটপুট প্রদান: প্রসেস করা তথ্য আমাদের মনিটর, প্রিন্টার বা স্পিকারের মাধ্যমে দেখায় বা শুনায়।
-
সংরক্ষণ: প্রক্রিয়াজাত তথ্য হาร์্ডড্রাইভ বা অন্য স্টোরেজ ডিভাইসে সংরক্ষণ করা হয়, যাতে ভবিষ্যতে ব্যবহার করা যায়।
কম্পিউটারের এই চারটি ধাপ—ইনপুট, প্রসেসিং, আউটপুট এবং স্টোরেজ—একসঙ্গে মিলিত হয়ে আমাদের বিভিন্ন কাজকে দ্রুত, নির্ভুল এবং সহজ করে তোলে।
কম্পিউটারের প্রধান তিনটি অংশ
কম্পিউটার অনেক অংশের সমন্বয়ে গঠিত হলেও এর প্রধান তিনটি মৌলিক অংশ রয়েছে, যেগুলো ছাড়া একটি কম্পিউটার কাজ করতে পারে না। এরা হলো:
ক) ইনপুট ইউনিট (Input Unit)
ইনপুট ইউনিটের কাজ হলো ব্যবহারকারীর কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে সেটিকে কম্পিউটারের জন্য বোধ্য ভাষায় রূপান্তর করে প্রসেসরের কাছে পাঠানো।
উদাহরণ:
-
কী-বোর্ড: অক্ষর, সংখ্যা এবং কমান্ড টাইপ করার জন্য।
-
মাউস: স্ক্রিনে আইটেম নির্বাচন বা মুভ করার জন্য।
-
স্ক্যানার, মাইক্রোফোন: ছবি বা শব্দ ইনপুট দেওয়ার জন্য।
খ) প্রসেসিং ইউনিট বা সিপিইউ (Central Processing Unit)
সিপিইউ-কে কম্পিউটারের “মস্তিষ্ক” বলা হয়। এটি ইনপুট তথ্যকে বিশ্লেষণ করে, নির্দিষ্ট নির্দেশনা অনুযায়ী প্রক্রিয়াজাত করে এবং আউটপুট তৈরি করে।
সিপিইউ আবার তিনটি উপ-অংশে বিভক্ত:
-
ALU (Arithmetic Logic Unit): গাণিতিক এবং যৌক্তিক কাজ করে।
-
CU (Control Unit): ইনপুট, প্রসেস এবং আউটপুটের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে।
-
Registers: ক্ষণস্থায়ীভাবে ডেটা ধরে রাখে প্রসেসিংয়ের সময়।
গ) আউটপুট ইউনিট (Output Unit)
আউটপুট ইউনিট ব্যবহারকারীর জন্য ফলাফল উপস্থাপন করে।
উদাহরণ:
-
মনিটর: ছবি ও তথ্য দৃশ্যমান করে।
-
প্রিন্টার: সফট কপি থেকে হার্ড কপি তৈরি করে।
-
স্পিকার: শব্দ বা অডিও আউটপুট দেয়।
এই তিনটি অংশ একত্রে কাজ করে একটি পূর্ণাঙ্গ কম্পিউটার সিস্টেম গড়ে তোলে। এর বাইরে র্যাম, হার্ডডিস্ক, মাদারবোর্ড, পাওয়ার সাপ্লাই ইত্যাদিও গুরুত্বপূর্ণ, তবে এগুলো মূলত এই তিন ইউনিটের সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
কম্পিউটারের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অংশ
যদিও ইনপুট, প্রসেসিং এবং আউটপুট হলো কম্পিউটারের মূল অংশ, কিছু অতিরিক্ত অংশও আছে যেগুলো ছাড়া আধুনিক কম্পিউটার চিন্তা করা যায় না।
ক) স্টোরেজ ডিভাইস:
ডেটা স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের জন্য হার্ডড্রাইভ (HDD), SSD বা ফ্ল্যাশ ড্রাইভ ব্যবহৃত হয়।
খ) RAM (Random Access Memory):
এই মেমোরি অস্থায়ী এবং দ্রুতগতির, যা কম্পিউটার কাজ করার সময় প্রয়োজনীয় তথ্য ধরে রাখে।
গ) মাদারবোর্ড (Motherboard):
কম্পিউটারের সব অংশকে একত্রে সংযুক্ত করে এবং তথ্য বিনিময় করে।
ঘ) পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট (PSU):
সকল অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে।
কম্পিউটার কীভাবে কাজ করে – একটি উদাহরণ
ধরা যাক, আপনি কম্পিউটারে ক্যালকুলেটরে ১০+৫ লিখে “=” চাপলেন। এই সাধারণ কাজটি করতে যা ঘটে:
-
ইনপুট ইউনিট (কী-বোর্ড) ১০+৫ ইনপুট নেয়।
-
কন্ট্রোল ইউনিট (CU) নির্দেশ দেয় ALU-কে এই তথ্য প্রক্রিয়া করতে।
-
ALU গাণিতিকভাবে যোগফল (১৫) বের করে।
-
আউটপুট ইউনিট (মনিটর) ১৫ আপনাকে দেখায়।
এই পুরো প্রক্রিয়া ঘটে সেকেন্ডেরও কম সময়ে—যা মানুষের জন্য অসম্ভব।
কম্পিউটার আধুনিক জীবনের একটি অপরিহার্য অনুষঙ্গ। এটি শুধু তথ্য প্রক্রিয়াজাত করে না, বরং মানুষের চিন্তা-ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে সাহায্য করে। কম্পিউটারের প্রধান তিনটি অংশ—ইনপুট ইউনিট, প্রসেসিং ইউনিট (সিপিইউ) ও আউটপুট ইউনিট—একসঙ্গে কাজ করে আমাদের দৈনন্দিন জীবন সহজ করে তোলে। শুধু ব্যবহার করলেই হবে না, এর কার্যপ্রণালী ও অংশ সম্পর্কে জানাও গুরুত্বপূর্ণ, যাতে আরও দক্ষতার সঙ্গে আমরা কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারি। তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে কম্পিউটারের জ্ঞান অর্জন মানেই নিজের জীবনের গতি বাড়ানো।