পেট ব্যথা কেন হয়? পেট ব্যাথা কমানোর ঔষধ নাম।

পেট ব্যথা একটি সাধারণ কিন্তু অস্বস্তিকর স্বাস্থ্য সমস্যা, যা ছোট থেকে বড় সবাইকেই জীবনে কোনো না কোনো সময়ে ভোগায়। এটি অনেক কারণে হতে পারে এবং ব্যথার ধরন অনুযায়ী এর চিকিৎসা বা ওষুধও ভিন্ন হয়ে থাকে। কারো ক্ষেত্রে হালকা ব্যথা কিছু সময় পর ঠিক হয়ে যায়, আবার কারো ক্ষেত্রে এটি মারাত্মক আকার ধারণ করে। পেট ব্যথা কখনও খাদ্য হজমজনিত কারণে, কখনও সংক্রমণ, আবার কখনও হরমোনজনিত বা মানসিক চাপ থেকেও হতে পারে। এই আর্টিকেলে আমরা জানবো পেট ব্যথার কারণ, কীভাবে এই ব্যথা প্রতিরোধ করা যায় এবং কোন কোন ওষুধ পেট ব্যথা কমাতে কার্যকর হতে পারে।

পেট ব্যথা কেন হয়?

পেট ব্যথা হওয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে এবং তা নির্ভর করে ব্যথার ধরন ও অবস্থানের উপর। সবচেয়ে সাধারণ কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে গ্যাস জমে যাওয়া, বদহজম, অতিরিক্ত ঝাল বা মসলাযুক্ত খাবার খাওয়া, পেট ফাঁপা, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং অ্যাসিডিটি। এগুলো ছাড়াও পেটে সংক্রমণ, পাইলস, আলসার, পিত্তথলি বা কিডনির পাথর, পাকস্থলীর সমস্যা, ডিউডেনাল আলসার কিংবা অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতেও পেট ব্যথা দেখা দিতে পারে।

নারীদের ক্ষেত্রে পেট ব্যথা অনেক সময় পিরিয়ডজনিত সমস্যা, ডিম্বাশয় সংক্রান্ত জটিলতা কিংবা ইউটেরাস সংক্রান্ত কারণেও হয়ে থাকে। শিশুদের ক্ষেত্রে সাধারণত পেট ব্যথার কারণ হিসেবে গ্যাস্ট্রোএনটেরাইটিস, খাবারের অ্যালার্জি, কৃমি বা খাদ্য অপাচয় দেখা যায়।

পেট ব্যথার ধরন ও লক্ষণ

পেট ব্যথা কখনও তীব্র আবার কখনও মৃদু হতে পারে। কখনও ব্যথা পুরো পেট জুড়ে অনুভূত হয়, আবার কখনও পেটের কোনো নির্দিষ্ট অংশে ব্যথা অনুভূত হয়। গ্যাসের কারণে পেট ব্যথা হলে সাধারণত ফাঁপা ভাব, ঢেঁকুর ওঠা, বুক জ্বালা বা অম্বলের মতো অনুভূতি হতে পারে। আলসারজনিত ব্যথা সাধারণত খালি পেটে হয় এবং ব্যথা খাওয়ার পর কিছুটা কমে আসে। কিডনির পাথরের ক্ষেত্রে ব্যথা পিঠ বা কোমরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং মূত্রত্যাগে সমস্যা দেখা দেয়।

See also  গলা ব্যথার ট্যাবলেট এর নাম

চিন্তার বিষয় হচ্ছে, যদি ব্যথার সাথে জ্বর, বমি, রক্তক্ষরণ, ওজন হ্রাস, বা দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা সমস্যা থাকে তবে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

ঘরোয়া পদ্ধতিতে পেট ব্যথা উপশম

হালকা ধরনের পেট ব্যথার ক্ষেত্রে অনেক সময় ঘরোয়া কিছু উপায়ে আরাম পাওয়া যায়। হালকা গরম পানি খাওয়া, জিরা বা আদা চা পান করা, হজমে সাহায্যকারী ফল যেমন কলা বা পেপে খাওয়া এসব ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া পেটের উপর হট ব্যাগ ব্যবহার করলেও অনেকটা আরাম পাওয়া যায়। পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও হালকা খাবার গ্রহণও উপকারী।

তবে মনে রাখতে হবে, ঘরোয়া উপায় কেবলমাত্র সাময়িক ও সাধারণ ব্যথার জন্য কার্যকর। যদি ব্যথা ঘন ঘন বা মারাত্মক হয় তবে অবশ্যই চিকিৎসা নেওয়া উচিত।

পেট ব্যথা কমানোর ঔষধ নাম

বিভিন্ন ধরণের পেট ব্যথার জন্য আলাদা আলাদা ওষুধ ব্যবহৃত হয়। সাধারণ গ্যাস বা অ্যাসিডিটির কারণে ব্যথা হলে অ্যান্টাসিড যেমন ওমিপ্রাজল, র‍্যানিটিডিন, বা ইসোমিপ্রাজল ভালো কাজ করে। এই ওষুধগুলো পাকস্থলীর অতিরিক্ত অ্যাসিড নির্গমন কমায় এবং হজমে সহায়তা করে।

যদি পেট ফাঁপা বা গ্যাসের কারণে ব্যথা হয় তবে সিমেথিকন জাতীয় ওষুধ যেমন এমটিএক্স বা এসিমেন্ট ব্যবহার করা যায়। বদহজমের কারণে ব্যথা হলে ডাইজেস্টিভ ট্যাবলেট যেমন এনজাইম সিরাপ বা ট্যাবলেট সহায়ক হতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে ব্যথা হলে ল্যাক্সেটিভ জাতীয় ওষুধ যেমন ল্যাকটুলোজ বা আইসাবগুল খাওয়া যেতে পারে।

আলসার বা দীর্ঘমেয়াদি গ্যাস্ট্রিক সমস্যার ক্ষেত্রে গ্যাস্ট্রোপ্রটেকটিভ ওষুধ যেমন সুক্রালফেট ব্যবহার করা হয়। পিরিয়ডজনিত ব্যথার জন্য মেয়েদের ক্ষেত্রে মেফেনামিক অ্যাসিড (যেমন পনস্টান) কার্যকর একটি ওষুধ।

ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণের কারণে ব্যথা হলে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন হতে পারে, তবে তা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করতে হবে। ভুল অ্যান্টিবায়োটিক খেলে উপকারের চেয়ে ক্ষতি হতে পারে।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি?

যদি পেট ব্যথা এক সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয়, ব্যথার তীব্রতা সময়ের সাথে বাড়ে, বমি বা রক্তক্ষরণ হয়, খাওয়ার প্রতি অনীহা দেখা দেয় বা হঠাৎ করে পেটে শক্ত ভাব অনুভূত হয়, তবে অবহেলা না করে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। অনেক সময় পেট ব্যথা কোনো বড় রোগের লক্ষণ হতে পারে, যেমন অ্যাপেন্ডিসাইটিস, পিত্তথলির পাথর, আলসার, কোলাইটিস বা এমনকি ক্যান্সারও হতে পারে।

See also  ওয়েট গেইন মিল্ক শেক খাওয়ার নিয়ম ও দাম কত

পেট ব্যথা যতটা সাধারণ একটি সমস্যা, ততটাই অবহেলা করলে তা বড় জটিলতায় পরিণত হতে পারে। তাই এই ব্যথার কারণ বুঝে তা অনুযায়ী চিকিৎসা নেয়া উচিত। হালকা ব্যথার ক্ষেত্রে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি ও ওষুধ ভালো কাজ করে, তবে দীর্ঘমেয়াদি বা তীব্র ব্যথার ক্ষেত্রে দেরি না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। সুস্থ থাকতে হলে শরীরের ছোট সমস্যাকেও গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত। তাই পেট ব্যথা হলে তা গোপন না রেখে দ্রুত সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

Leave a Comment