অনেকেই আছেন যারা ওজন কমানো নিয়ে চিন্তিত, আবার এমন কিছু মানুষও আছেন যাদের চিন্তা সম্পূর্ণ বিপরীত—ওজন বাড়ানো। স্বাভাবিকভাবে মনে হতে পারে ওজন বাড়ানো সহজ, কিন্তু বাস্তবে এটি অনেকের জন্য চ্যালেঞ্জিং একটি বিষয়। শরীরের মেটাবলিজম যদি বেশি হয় বা দৈহিক পরিশ্রম বেশি হয়, তাহলে যতই খাওয়া হোক না কেন, শরীর ওজন নিতে চায় না। আবার অনেকে মানসিক চাপ, হরমোনাল সমস্যা, পুষ্টির অভাব বা দীর্ঘদিনের অসুখের কারণে ওজন কমে যাওয়ার সমস্যায় পড়েন।
ওজন বাড়াতে হলে শুধু বেশি খাওয়া যথেষ্ট নয়, বরং সঠিকভাবে ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনই হতে পারে টেকসই সমাধান। ওজন বাড়ানোর জন্য প্রয়োজন সঠিক খাদ্য তালিকা, ব্যায়াম, বিশ্রাম এবং মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন। নিচে দেওয়া হলো ১০টি সহজ এবং কার্যকরী টিপস যা আপনাকে ধীরে ধীরে ওজন বাড়াতে সহায়তা করবে, এবং তা হবে স্বাস্থ্যকরভাবে।
- প্রতিদিন পর্যাপ্ত ক্যালোরি গ্রহণ করুন
ওজন বাড়ানোর জন্য আপনার শরীরকে অতিরিক্ত ক্যালোরি সরবরাহ করতে হবে। আপনি প্রতিদিনের চাহিদার চেয়ে অন্তত ৩০০ থেকে ৫০০ ক্যালোরি বেশি গ্রহণ করুন। তবে ক্যালোরি যেন আসে পুষ্টিকর খাবার থেকে যেমন—বাদাম, ডিম, দুধ, ঘি, পনির, কলা, মিষ্টি আলু, ইত্যাদি। -
প্রোটিন গ্রহণ বৃদ্ধি করুন
ওজন বাড়াতে চাইলে প্রোটিন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। প্রোটিন মাংসপেশি গঠনে সাহায্য করে, যা আপনাকে সুগঠিতভাবে ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ছোলা, ডাল ইত্যাদি প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখুন। -
প্রতিদিন ৫–৬ বার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন
অনেকেই একবারে বেশি খেতে পারেন না। তাদের জন্য উপযুক্ত উপায় হচ্ছে দিনে ৫ থেকে ৬ বার ছোট ছোট খাবার খাওয়া। এতে করে শরীর সারা দিন ধরে পর্যাপ্ত পুষ্টি পাবে এবং ধীরে ধীরে ওজন বাড়বে। -
কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট যুক্ত খাবার খান
ওজন বাড়াতে চাইলে শুধু প্রোটিন নয়, কার্বোহাইড্রেট ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাটও প্রয়োজন। চাল, আলু, পাউরুটি, পাস্তা, ঘি, নারকেল তেল, অলিভ অয়েল ইত্যাদি খাদ্য তালিকায় রাখুন। এই উপাদানগুলো শরীরে শক্তি যোগায় ও ক্যালোরি সরবরাহ করে। -
প্রতিদিন ব্যায়াম করুন, বিশেষ করে ওয়েট ট্রেনিং
শুধু খাওয়ায় ওজন বাড়ে না, সঙ্গে ব্যায়াম করাও জরুরি। ওয়েট ট্রেনিং বা জিমে হালকা ভার উত্তোলনের মাধ্যমে মাংসপেশি বৃদ্ধি পায় এবং শরীর সুগঠিত হয়। এটি অতিরিক্ত চর্বি না বাড়িয়ে স্বাস্থ্যকরভাবে ওজন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। -
রাতে ভালো ঘুম নিশ্চিত করুন
ঘুম ওজন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন অন্তত ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। ঘুমের ঘাটতি শরীরের গ্রোথ হরমোনের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়, যার ফলে ওজন বাড়া কঠিন হয়ে যায়। -
ফাস্ট ফুড নয়, স্বাস্থ্যকর উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন
অনেকেই ফাস্ট ফুড খেয়ে দ্রুত ওজন বাড়াতে চায়, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তার পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর উপায়ে ক্যালোরি বাড়াতে ড্রাই ফ্রুটস, হোল মিল শস্য, নাশতা, দুধ ও কলা, ঘরে তৈরি পনির বা মিল্কশেক খাওয়ার অভ্যাস করুন। -
পানির পাশাপাশি তরল ক্যালোরি গ্রহণ করুন
অনেক সময় খাওয়ার পর পানি পান করলে ক্ষুধা কমে যায়। তাই খাবারের এক ঘণ্টা আগে বা পরে পানি খেতে পারেন। পাশাপাশি মিল্কশেক, ফলের জুস, স্যুপ ইত্যাদি তরল ক্যালোরি আপনার শরীরে অতিরিক্ত পুষ্টি যোগাবে। -
মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকুন
চিন্তা, মানসিক চাপ বা বিষণ্নতা খিদে কমিয়ে দেয় এবং ওজন কমার অন্যতম কারণ। তাই প্রতিদিন মেডিটেশন, হাঁটা বা পছন্দের কিছু কাজ করুন যাতে মন ভালো থাকে এবং আপনি স্বাস্থ্যকরভাবে খেতে পারেন। -
ওজন বাড়ানোর জন্য ধৈর্য ধরুন ও ধারাবাহিকতা বজায় রাখুন
ওজন বাড়া একদিনে হয় না। এটি একটি ধীরে ধীরে চলমান প্রক্রিয়া, যার জন্য দরকার নিয়মিত খাদ্য গ্রহণ, ব্যায়াম ও বিশ্রাম। আপনি যদি ধারাবাহিকভাবে সব কিছু মেনে চলেন, তাহলে ধীরে ধীরে আপনার কাঙ্ক্ষিত ওজন বৃদ্ধি হবে।
ওজন বাড়ানো একটি স্বাস্থ্যসম্মত ও ধৈর্যপূর্ণ প্রক্রিয়া। এক্ষেত্রে লক্ষ্য হওয়া উচিত শুধু ক্যালোরি বাড়ানো নয়, বরং এমন খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা যা শরীরকে শক্তি দেবে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে এবং আপনাকে সুগঠিত রাখবে। উপরোক্ত ১০টি টিপস মেনে চললে আপনি ধীরে ধীরে স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন বাড়াতে পারবেন। মনে রাখবেন, প্রতিটি মানুষের শরীর আলাদা, তাই কারো ফলাফল একমাসে আসলেও আপনার ক্ষেত্রে একটু সময় লাগতে পারে। নিজেকে সময় দিন, নিজের শরীরকে ভালোবাসুন এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারার পথে এগিয়ে যান।