চোখ আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। সুন্দর দৃষ্টিশক্তি ছাড়া জীবন অনেক সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। কিন্তু বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর যুগে মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা মোবাইল, কম্পিউটার বা টেলিভিশনের স্ক্রিনে সময় কাটাচ্ছে, যা চোখের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এর ফলে চোখের দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে, চোখে ঝাপসা দেখা, চোখে পানি পড়া বা চোখে জ্বালাপোড়া হচ্ছে। তবে আপনি যদি কিছু প্রাকৃতিক উপায় অনুসরণ করেন এবং কিছু নির্দিষ্ট খাবার খান, তাহলে চোখের জ্যোতি অনেকাংশে বৃদ্ধি পেতে পারে।
সূচিপত্র
পর্যাপ্ত ঘুম ও চোখের বিশ্রাম
চোখের দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন চোখকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দেওয়া। অনেকেই সারা রাত মোবাইল বা ল্যাপটপ চালিয়ে ঘুম কমিয়ে ফেলেন, যা সরাসরি চোখের ওপর প্রভাব ফেলে। প্রতিদিন অন্তত ৬-৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। এছাড়াও প্রতি ২০ মিনিট পর পর স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে ২০ সেকেন্ড দূরে তাকিয়ে চোখকে বিশ্রাম দিন। এভাবে আপনি চোখের ক্লান্তি কমিয়ে দৃষ্টিশক্তি রক্ষা করতে পারেন।
প্রাকৃতিক উপায়ে চোখের যত্ন নেওয়ার পদ্ধতি
চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে নিয়মিত কিছু প্রাকৃতিক পদ্ধতি অনুসরণ করা খুবই কার্যকর। যেমন:
-
সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি চোখে সূর্যোদয়ের সময় খোলা চোখে সূর্যের দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থাকা।
-
ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিয়ে প্রতিদিন চোখ ধোয়া।
-
ঘরে তৈরি শসা বা আলুর স্লাইস চোখের ওপর রেখে রাখা।
-
চোখে গোলাপ জল ব্যবহার করা (চোখ ধোলাইয়ের জন্য)।
-
অন্ধকারে মোবাইল বা লাইট ছাড়া স্ক্রিন দেখা থেকে বিরত থাকা।
চোখের জ্যোতি বৃদ্ধির জন্য খাদ্যতালিকা
চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ানোর জন্য কিছু নির্দিষ্ট পুষ্টিকর খাবার রয়েছে যা নিয়মিত খেলে চোখের জ্যোতি বাড়ে:
১. গাজর
গাজরে থাকা বিটা-ক্যারোটিন ভিটামিন এ-তে রূপান্তরিত হয় যা দৃষ্টিশক্তি রক্ষায় অত্যন্ত কার্যকর। এটি চোখের কর্নিয়াকে সুস্থ রাখে এবং রাতকানা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
২. পালং শাক ও অন্যান্য সবুজ শাকসবজি
এইসব খাবারে রয়েছে লুটেইন ও জিয়াক্সানথিন, যা চোখের কোষকে রক্ষা করে এবং বয়সজনিত চক্ষু সমস্যা প্রতিরোধ করে।
৩. ডিম
ডিমে রয়েছে ভিটামিন এ, লুটেইন এবং জিঙ্ক, যা চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এটি চোখের রেটিনা সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৪. মাছ
বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ যেমন স্যামন, টুনা, ম্যাকেরেল ইত্যাদি মাছ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ, যা চোখের শুষ্কতা কমিয়ে চোখের কোষ সুস্থ রাখে।
৫. বাদাম ও বীজ
বাদাম, আখরোট এবং সূর্যমুখী বীজে রয়েছে ভিটামিন ই ও ওমেগা-৩, যা চোখে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমিয়ে দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
৬. কমলা, লেবু ও অন্যান্য সাইট্রাস ফল
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল চোখের কোষে রক্ত চলাচল বাড়ায় এবং চোখে ফ্রি র্যাডিক্যালের ক্ষতিকর প্রভাব কমায়।
নিয়মিত ব্যায়াম ও ইয়োগার ভূমিকা
শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মতো চোখেরও ব্যায়াম প্রয়োজন। কিছু সহজ চোখের ব্যায়াম যেমন ঘড়ির কাঁটার মতো চোখ ঘোরানো, কাছের এবং দূরের দিকে তাকিয়ে দেখা ইত্যাদি চোখের পেশিকে সক্রিয় রাখে। এছাড়া ইয়োগা ও প্রণায়াম বিশেষ করে ‘ত্রাটক’, ‘অনুলোম-বিলোম’ চোখের উপর দারুণ উপকার করে।
পরিমাণমতো পানি পান
চোখের সুস্থতায় পানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কম পানি পান করলে চোখ শুকিয়ে যায় এবং দৃষ্টি ঝাপসা হতে পারে। প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এটি চোখের আর্দ্রতা বজায় রাখে এবং বিষাক্ত পদার্থ চোখ থেকে বের করে দেয়।
চোখের জন্য খারাপ অভ্যাস পরিহার করুন
কিছু ভুল অভ্যাস চোখের দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে কমিয়ে দেয়। যেমন:
-
ঘন ঘন চোখে হাত দেওয়া
-
ময়লা হাত দিয়ে চোখে চুলকানো
-
ঘুমানোর আগে মোবাইল দেখা
-
দিনের পর দিন চোখে চশমা পরা বা না পরা নিয়ে অবহেলা করা
এসব ভুল অভ্যাস থেকে বিরত থাকলে দৃষ্টিশক্তি দীর্ঘদিন ভালো থাকবে।
চোখের দৃষ্টিশক্তি একবার নষ্ট হলে তা ফেরানো খুব কঠিন। তাই আগে থেকেই সচেতন হওয়া জরুরি। প্রাকৃতিক উপায়ে চোখের যত্ন নিলে এবং চোখের জ্যোতি বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত খাবার খাওয়া শুরু করলে আপনি সহজেই আপনার চোখের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে পারবেন। প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাস, ঘুম, বিশ্রাম এবং ব্যায়ামের উপর নির্ভর করে আপনার চোখ কতটা সুস্থ থাকবে। তাই আজ থেকেই চোখের প্রতি যত্নবান হোন, কারণ “চোখের জ্যোতি মানেই জীবন জ্যোতি”।