দাঁতের ইনফেকশন একটি সাধারণ কিন্তু সমস্যাজনক স্বাস্থ্য সমস্যা। দাঁতের শিকড় বা মাড়িতে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে এই সমস্যা দেখা দেয়। আক্রান্ত ব্যক্তির মুখে ব্যথা, ফোলা, লালচে ভাব এবং কখনও জ্বর দেখা দিতে পারে। যদি সময়মতো চিকিৎসা না করা হয়, তবে সংক্রমণ অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ছড়িয়ে যেতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে দাঁতের চিকিৎসকরা সাধারণত এন্টিবায়োটিক ঔষধ ব্যবহার করেন সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য। এন্টিবায়োটিক শুধুমাত্র সংক্রমণ দমন করে, তবে ব্যথা কমানোর জন্য প্রয়োজন হতে পারে পেইন রিলিভারও।
সূচিপত্র
দাঁতের ইনফেকশনের সাধারণ কারণ
দাঁতের ইনফেকশন প্রধানত ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে হয়। সাধারণ কারণগুলো হলো:
-
ক্যাভিটি বা দাঁতে গর্ত (Tooth decay)
-
দাঁতের রুট বা পেরিয়ডন্টাল ফোল্ডে সংক্রমণ
-
দাঁতের চোট বা ফ্র্যাকচার
-
কম পরিচ্ছন্নতা বা খারাপ ওষুধের অভাব
যদি সংক্রমণ ছড়িয়ে যায়, তবে মুখ, গলা বা মাথার অংশে ফোলা দেখা দিতে পারে এবং গুরুতর ক্ষেত্রে সিস্টেমিক সমস্যা হতে পারে।
দাঁতের ইনফেকশনের জন্য ব্যবহৃত এন্টিবায়োটিক ঔষধের নাম
ডেন্টাল ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণের জন্য কয়েক ধরনের এন্টিবায়োটিক ব্যবহৃত হয়। সাধারণত ডাক্তার রোগীর বয়স, সংক্রমণের মাত্রা এবং স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি অনুযায়ী নির্ধারণ করেন।
১. পেনিসিলিন (Penicillin)
-
নাম: Amoxicillin, Penicillin V
-
ব্যবহার: সাধারণত প্রথম পছন্দ, হালকা থেকে মাঝারি সংক্রমণের জন্য কার্যকর।
-
ডোজ: ৫০০ mg দিনে তিনবার খাবার সঙ্গে বা ডাক্তার নির্ধারিত।
২. ম্যাক্রোলাইড (Macrolides)
-
নাম: Azithromycin, Clarithromycin
-
ব্যবহার: পেনিসিলিনে এলার্জি থাকলে বিকল্প।
-
ডোজ: সাধারণত Azithromycin 500 mg দিনে একবার ৩–৫ দিন।
৩. সেফালস্পোরিন (Cephalosporins)
-
নাম: Cefixime, Cephalexin
-
ব্যবহার: মাঝারি থেকে গুরুতর সংক্রমণ, পেনিসিলিনে অ্যালার্জি না থাকলে বিকল্প।
-
ডোজ: Cephalexin 500 mg দিনে ২–৩ বার।
৪. মেট্রোনিডাজল (Metronidazole)
-
ব্যবহার: সাধারণত পেরিয়ডন্টাল ইনফেকশন বা অ্যানেরোবিক ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে।
-
ডোজ: 400–500 mg দিনে ৩ বার ৫–৭ দিন।
৫. কম্বিনেশন থেরাপি
কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তার Amoxicillin + Metronidazole একসাথে প্রেস্ক্রাইব করেন, যা সংক্রমণ দ্রুত নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
দাঁতের এন্টিবায়োটিক খাওয়ার নিয়ম
-
ডাক্তার নির্ধারিত ডোজ মেনে চলুন।
-
মোট ডোজ শেষ করা অত্যন্ত জরুরি, সংক্রমণ পুরোপুরি দমন করতে।
-
খাবারের সঙ্গে খাওয়া ভালো, যাতে পেটের সমস্যা কম হয়।
-
যদি ডোজ মিস হয়, যত দ্রুত মনে পড়ে খেতে হবে। তবে পরবর্তী ডোজের সময় হয়ে গেলে অতিরিক্ত ডোজ করবেন না।
-
পেনিসিলিন বা সেফালস্পোরিনে অ্যালার্জি থাকলে, অন্য বিকল্প এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হবে।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও সতর্কতা
যেকোনো এন্টিবায়োটিকের মতো দাঁতের সংক্রমণের ঔষধেও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে।
সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:
-
বমি, ডায়রিয়া, পেট ব্যথা
-
হালকা মাথা ঘোরা
-
অ্যালার্জি: চুলকানি, লাল চর্মর্যাশ
গুরুতর সতর্কতা:
-
শ্বাসকষ্ট, মুখ বা চোখ ফোলা হলে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
-
গর্ভবতী বা স্তনদানকারী মায়েদের চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঔষধ গ্রহণ করা উচিৎ নয়।
ডেন্টাল ইনফেকশন প্রতিরোধের উপায়
-
নিয়মিত দাঁত ব্রাশ ও ফ্লস ব্যবহার।
-
চিনি জাতীয় খাবার সীমিত করা।
-
ছিদ্র বা ক্যাভিটি থাকলে সময়মতো চিকিৎসা।
-
নিয়মিত ডেন্টাল চেকআপ।
-
দাঁতে ব্যথা বা ফোলা দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসক দেখা।
দাঁতের সংক্রমণ দ্রুত চিকিৎসা না পেলে গুরুতর সমস্যা তৈরি করতে পারে। পেনিসিলিন, মেট্রোনিডাজল, সেফালস্পোরিন, ম্যাক্রোলাইডসহ বিভিন্ন এন্টিবায়োটিক সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর। তবে সবসময় ডাক্তার নির্ধারিত ডোজ ও সময় অনুযায়ী ঔষধ গ্রহণ করা প্রয়োজন। পাশাপাশি ভালো ডেন্টাল হাইজিন এবং নিয়মিত চেকআপ সংক্রমণ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ।