এজমা থেকে মুক্তির ঘরোয়া ৮টি উপায়

জমা বা হাঁপানি একটি দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্টজনিত রোগ, যা সব বয়সের মানুষকে ভোগায়। এই রোগে শ্বাসনালী সংকুচিত হয়ে শ্বাস নিতে সমস্যা হয়, বুক চাপা অনুভূত হয় এবং অনেক সময় কাশি ও শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। আধুনিক চিকিৎসায় এজমা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হলেও প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু ঘরোয়া উপায় অনুসরণ করলে এজমার উপসর্গ অনেকটাই হ্রাস পায়। আজকে জানব এজমা থেকে মুক্তির ঘরোয়া ৮টি কার্যকর উপায়।

১. আদার ব্যবহার

আদা একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান, যা শ্বাসনালীর প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত এক কাপ গরম আদা চা খেলে এজমার সমস্যা অনেকটাই কমে যেতে পারে। এছাড়া মধুর সাথে আদার রস মিশিয়ে খেলে শ্বাসকষ্ট প্রশমিত হয়।

২. মধুর উপকারিতা

মধুতে থাকা প্রাকৃতিক এনজাইম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এজমার সমস্যা প্রশমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এক চামচ মধু গরম পানির সাথে খেলে কাশি ও শ্বাসকষ্ট কমে যায়। রাতে শোবার আগে মধু খেলে শ্বাসনালী খোলা থাকে এবং ভালোভাবে ঘুমানো যায়।

৩. রসুন সেবন

রসুন শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং শ্বাসনালীকে পরিষ্কার রাখে। সকালে খালি পেটে দুই থেকে তিন কোয়া রসুন খেলে শ্বাসকষ্ট কমে আসে। এছাড়া দুধের সাথে রসুন সেদ্ধ করে খাওয়াও উপকারী।

৪. বাষ্প গ্রহণ

এজমার অন্যতম ঘরোয়া উপায় হলো বাষ্প গ্রহণ। গরম পানির বাষ্প শ্বাসনালী পরিষ্কার করতে সাহায্য করে এবং জমে থাকা শ্লেষ্মা দূর করে। বাষ্প গ্রহণের সময় মাথায় তোয়ালে দিয়ে ঢেকে গভীরভাবে শ্বাস নিতে হবে। এতে তাৎক্ষণিকভাবে শ্বাসকষ্ট কমে যায়।

৫. কফি বা গরম পানীয়

ক্যাফেইন শ্বাসনালীর পেশিকে শিথিল করতে সাহায্য করে। তাই হালকা কফি বা চা খেলে সাময়িকভাবে এজমার উপসর্গ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ ক্ষতিকর হতে পারে, তাই পরিমিত পরিমাণে পান করা উচিত।

See also  শেখ রাসেল দিবস উপলক্ষে বক্তৃতা

৬. হলুদের ব্যবহার

হলুদে থাকা কারকিউমিন শ্বাসনালীর প্রদাহ কমায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এক গ্লাস গরম দুধের সাথে এক চা-চামচ হলুদ মিশিয়ে খেলে এজমার সমস্যা অনেকটাই হ্রাস পায়। এছাড়া রান্নার খাবারে হলুদ বেশি ব্যবহার করা উপকারী।

৭. শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম

শ্বাস-প্রশ্বাসের নিয়মিত ব্যায়াম এজমা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা রাখে। প্রতিদিন সকালে ও রাতে ধীরে ধীরে গভীর শ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার অভ্যাস করলে শ্বাসনালী শক্তিশালী হয়। যোগব্যায়াম ও প্রণায়ামও এ ক্ষেত্রে দারুণ কার্যকর।

৮. ভেষজ চা পান

তুলসী পাতা, লবঙ্গ, দারুচিনি, মৌরি ও মেথি দিয়ে তৈরি ভেষজ চা এজমা রোগীদের জন্য উপকারী। এসব ভেষজ উপাদান শ্বাসকষ্ট কমায় এবং শ্বাসনালীকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত ভেষজ চা পান করলে এজমার ঝুঁকি অনেকটাই হ্রাস পায়।

সতর্কতা

যদিও এসব ঘরোয়া উপায় এজমার উপসর্গ কমাতে সাহায্য করে, তবে এটি স্থায়ী সমাধান নয়। গুরুতর শ্বাসকষ্ট হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ইনহেলার বা ওষুধ ব্যবহার করা জরুরি।

এজমা নিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধের পাশাপাশি কিছু ঘরোয়া উপায় অনুসরণ করলে উপকার পাওয়া যায়। আদা, মধু, রসুন, হলুদ ও ভেষজ চা শ্বাসনালী পরিষ্কার ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া বাষ্প গ্রহণ, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম এজমার সমস্যা হ্রাস করে। তবে মনে রাখতে হবে, এজমা একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ, তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে জীবনধারা ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনলেই সুস্থ থাকা সম্ভব।

Leave a Comment