বাচ্চাদের জ্বরের এন্টিবায়োটিক সিরাপ ঔষধের নাম

জ্বর শিশুদের একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা। আবহাওয়ার পরিবর্তন, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, টনসিল, সর্দি বা সংক্রমণের কারণে শিশুদের মাঝে জ্বর দেখা দিতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভাইরাসজনিত জ্বর নিজে থেকেই ভালো হয়ে যায়, তবে ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণের ক্ষেত্রে কখনো কখনো এন্টিবায়োটিক প্রয়োজন হতে পারে। শিশুর জ্বর যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, কানে ব্যথা, গলা ব্যথা, কাশি বা পাতলা পায়খানার সঙ্গে থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এন্টিবায়োটিক সিরাপ দিতে হতে পারে।

তবে মনে রাখতে হবে, এন্টিবায়োটিক ঔষধ কোনোভাবেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া শিশুকে দেওয়া উচিত নয়। এখানে কিছু প্রচলিত ও ডাক্তারদের দ্বারা ব্যবহৃত এন্টিবায়োটিক সিরাপের নাম, তাদের কার্যকারিতা ও প্রাসঙ্গিক তথ্য নিয়ে আলোচনা করা হলো।

কেন শিশুদের জ্বরে এন্টিবায়োটিক প্রয়োজন হতে পারে?

শিশুর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বড়দের তুলনায় তুলনামূলকভাবে দুর্বল। কোনো ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের কারণে জ্বর হলে, শরীর সেই ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করতে না পারলে জ্বর বাড়তে থাকে এবং অন্যান্য উপসর্গ যেমন গলা ব্যথা, কানের ইনফেকশন, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি দেখা দেয়।

এমন ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা সাধারণত রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হন যে সংক্রমণটি ব্যাকটেরিয়াজনিত কি না। এরপর উপযুক্ত মাত্রায় এন্টিবায়োটিক সিরাপ দেওয়ার পরামর্শ দেন।

ভাইরাসজনিত জ্বরে এন্টিবায়োটিক কাজ করে না। অপ্রয়োজনীয়ভাবে দিলে শিশুর শরীরের স্বাভাবিক ব্যাকটেরিয়াল ফ্লোরা নষ্ট হতে পারে এবং ভবিষ্যতে ওষুধ প্রতিরোধ ক্ষমতা (Antibiotic Resistance) তৈরি হতে পারে।

See also  পেট ব্যাথা কমানোর উপায়

বাচ্চাদের জ্বরের জন্য ব্যবহৃত জনপ্রিয় এন্টিবায়োটিক সিরাপের নাম

নিচে কিছু সাধারণভাবে ব্যবহৃত এবং ডাক্তারের পরামর্শে দেওয়া হয় এমন শিশুদের এন্টিবায়োটিক সিরাপের নাম দেওয়া হলো। মনে রাখবেন, এগুলো শুধুমাত্র তথ্যের জন্য, প্রয়োগের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

১. Augmentin Syrup (Amoxicillin + Clavulanic acid)

  • ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনের জন্য ব্যবহৃত।

  • বিশেষ করে গলা ব্যথা, টনসিল, কানের ইনফেকশন, বা শ্বাসনালীর সংক্রমণে দেওয়া হয়।

  • ডোজ নির্ভর করে বয়স ও ওজনের ওপর।

২. Cefixime Syrup (Brand name: Suprax, Taxim-O)

  • টনসিল, ইউরিন ইনফেকশন ও নিউমোনিয়াতে ব্যবহৃত।

  • দিনে ১ বা ২ বার দেওয়া হয়।

  • খাবারের সঙ্গে বা বাদেও খাওয়ানো যায়।

৩. Azithromycin Syrup (Brand name: Azinix, Azomac)

  • শ্বাসনালীর সংক্রমণ, কানের ইনফেকশন বা চর্ম রোগে দেওয়া হয়।

  • ৩ বা ৫ দিনের কোর্সে ব্যবহার করা হয়।

৪. Cefadroxil Syrup (Brand name: Kidrox, Droxyl)

  • গলা ও ত্বকের সংক্রমণে ব্যবহার হয়।

  • শিশুদের সহজে সহ্যযোগ্য একটি এন্টিবায়োটিক।

৫. Cefpodoxime Syrup (Brand name: Podox, Cefozen)

  • ফুসফুস, গলা ও ইউরিন সংক্রমণে ব্যবহৃত।

  • পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তুলনামূলকভাবে কম।

৬. Amoxicillin Syrup (Brand name: Amoxil, Moxatag)

  • খুব ছোট বাচ্চাদের জন্য সাধারণ ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনে ব্যবহার করা হয়।

  • এটি অপেক্ষাকৃত নিরাপদ এবং বহু বছর ধরে ব্যবহৃত।

৭. Erythromycin Syrup (Brand name: Erycin, Eromycin)

  • চোখ ও শ্বাসনালী সংক্রমণের জন্য উপযোগী।

  • মাঝে মাঝে বমিভাব বা পেট গরম হওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে।

শিশুদের জন্য এন্টিবায়োটিক সিরাপ ব্যবহারের সতর্কতা

  • চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কখনো ব্যবহার নয়: কোনো শিশু জ্বর হলে আগে কারণ নিশ্চিত হতে হবে। যদি ভাইরাসজনিত হয়, তাহলে এন্টিবায়োটিক প্রয়োজন নেই।

  • সঠিক ডোজ জরুরি: বয়স, ওজন ও সংক্রমণের ধরন অনুযায়ী ডোজ ঠিক করতে হয়। কম বা বেশি ডোজ বিপদজনক হতে পারে।

  • কোর্স সম্পূর্ণ করতে হবে: অনেক সময় অভিভাবকরা ২-৩ দিন ওষুধ দিয়ে বন্ধ করে দেন, যা ব্যাকটেরিয়ার প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।

  • পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে ডাক্তার দেখান: অনেক সময় ডায়রিয়া, বমি বা স্কিন র‍্যাশ হতে পারে। এ অবস্থায় ওষুধ বন্ধ করে ডাক্তার দেখানো উচিত।

  • নির্দিষ্ট মেয়াদে ব্যবহার করুন: সিরাপ খুলে ফেলার পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই ব্যবহার করা উচিত, না হলে ওষুধ কার্যকারিতা হারাতে পারে।

See also  খুসখুসে বিরক্তিকর কাশি দূর করার উপায়? কাশি ও কফ দূর করার ঔষধ

প্রাকৃতিক ও সাধারণ জ্বর নিয়ন্ত্রণে করণীয়

প্রথম পর্যায়ে যখন জ্বরের প্রকৃতি জানা যায় না, তখন কিছু ঘরোয়া ও সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে:

  • বাচ্চাকে পর্যাপ্ত পানি খাওয়াতে হবে।

  • হালকা খাবার ও তরল খাবার দিন।

  • কপালে ঠান্ডা পানির পট্টি ব্যবহার করতে পারেন।

  • জ্বর যদি ৩ দিনের বেশি স্থায়ী হয় বা ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি হয়, চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।

শিশুর জ্বর হলে আতঙ্কিত না হয়ে ধৈর্য ধরাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অধিকাংশ সময় জ্বর সাধারণ ভাইরাসজনিত হয়ে থাকে, যা বিশ্রাম, তরল খাবার ও সঠিক পরিচর্যায় ভালো হয়ে যায়। তবে ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ। কখনোই নিজে সিদ্ধান্ত নিয়ে শিশুদের এন্টিবায়োটিক দেবেন না, কারণ এটা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির কারণ হতে পারে।

সঠিক ব্যবস্থাপনা ও সচেতনতাই শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করতে পারে। আপনার সন্তানের জ্বর যদি বারবার হয় বা ৩ দিনের বেশি থাকে, তবে দেরি না করে পেডিয়াট্রিক বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যান।

Leave a Comment