বাচ্চাদের আমাশয় ঔষধ নাম। ছোট বাচ্চাদের আমাশয় হলে কি খাওয়া উচিত?

আমাশয় (Dysentery) একটি সাধারণ কিন্তু গুরুতর রোগ যা শিশুদের মধ্যে অনেক সময় দেখা যায়। এটি মূলত অন্ত্রে জীবাণুর সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে। আমাশয়ে বাচ্চারা ঘন ঘন পাতলা পায়খানা করে, অনেক সময় পায়খানার সঙ্গে রক্ত ও মিউকাসও থাকতে পারে। এই রোগে দ্রুত পানিশূন্যতা হয়ে শিশুর অবস্থা সংকটজনক হয়ে উঠতে পারে। তাই সময়মতো সঠিক চিকিৎসা ও পরিচর্যার প্রয়োজন।

এই আর্টিকেলে আমরা জানবো—বাচ্চাদের আমাশয় হলে কী কী লক্ষণ দেখা দেয়, কী কী ঔষধ দেওয়া যায়, কী খাওয়ানো উচিত এবং কিভাবে যত্ন নিলে তারা দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে।

বাচ্চাদের আমাশয়ের সাধারণ লক্ষণ

আমাশয়ের লক্ষণ শিশুর বয়স ও রোগের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে। সাধারণত নিচের লক্ষণগুলো দেখা যায়:

  • ঘন ঘন পাতলা পায়খানা

  • পায়খানায় রক্ত বা শ্লেষ্মা থাকা

  • পেট ব্যথা বা মোচড়ানো

  • জ্বর থাকা

  • বমি হওয়া

  • দুর্বলতা বা অবসাদ

  • ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ (শুষ্ক মুখ, চোখ বসে যাওয়া, প্রস্রাব কমে যাওয়া)

এই উপসর্গ দেখা দিলেই অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

বাচ্চাদের আমাশয় হওয়ার প্রধান কারণ

শিশুদের আমাশয়ের পিছনে কয়েকটি মূল কারণ কাজ করে:

  • অপরিষ্কার খাবার বা পানীয় গ্রহণ

  • অপরিষ্কার হাত দিয়ে খাবার খাওয়া

  • সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা

  • ব্যাকটেরিয়া (যেমন শিগেলা), ভাইরাস (যেমন রোটাভাইরাস), অথবা পরজীবী (যেমন অ্যামিবা) সংক্রমণ

  • অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও পয়ঃনিষ্কাশনের অভাব

প্রতিরোধের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং পরিষ্কার পানি ও খাবার খাওয়ানো অত্যন্ত জরুরি।

বাচ্চাদের আমাশয় হলে কোন ঔষধ ব্যবহার করা হয়?

বাচ্চাদের জন্য আমাশয়ের চিকিৎসা ডাক্তার দ্বারা নির্ধারিত হওয়া উচিত। তবে সচরাচর ব্যবহৃত কিছু নিরাপদ ও কার্যকর ঔষধ রয়েছে:

See also  xi admission 2023 : xi admission system 2023

সাধারণত ব্যবহৃত ঔষধের নাম:

  • ORS (ওরস্যালাইন): পানিশূন্যতা রোধে অত্যন্ত কার্যকর। প্রতিবার পায়খানার পর শিশুকে দিতে হবে।

  • জিঙ্ক ট্যাবলেট: ১০ থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত দেওয়া হয়। এটি পায়খানার মাত্রা কমায় ও প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

  • মেট্রোনিডাজল (Metronidazole): যদি অ্যামিবিক আমাশয় হয়, তবে এটি দেয়া হয় (ডাক্তারি পরামর্শে)।

  • সিপ্রোফ্লক্সাসিন বা অ্যাজিথ্রোমাইসিন: ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় (শুধুমাত্র চিকিৎসকের পরামর্শে)।

  • প্রোবায়োটিক সিরাপ/ক্যাপসুল: অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষায় সাহায্য করে।

সতর্কতা: কোনো ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক বা ওষুধ ডাক্তার ছাড়া দেওয়া একদম উচিত নয়, কারণ ডোজ ও ধরন শিশুর বয়স ও ওজন অনুযায়ী আলাদা হয়।

ছোট বাচ্চাদের আমাশয়ে কী খাওয়ানো উচিত?

আমাশয়ের সময় বাচ্চার শরীরে পানিশূন্যতা দ্রুত হয়, তাই সঠিক খাবার ও তরল দেওয়া জরুরি।

খাওয়ানোর জন্য উপযুক্ত কিছু খাবার:

  • ORS বা স্যালাইন: ঘন ঘন দিতে হবে।

  • সেদ্ধ চালের মাড়: হালকা ও সহজপাচ্য।

  • মাসুর ডাল ছেঁকে দেওয়া: প্রোটিন ও পুষ্টি দেয়।

  • সেদ্ধ আলু মাখানো: শক্তি দেয় ও পায়খানার পরিমাণ কমায়।

  • কলা: পটাশিয়াম ও ফাইবার সমৃদ্ধ, যা অন্ত্রের কাজ ঠিক রাখে।

  • দই: প্রোবায়োটিক হিসেবে কাজ করে।

  • সাধারণ ভাত, খিচুড়ি: হালকা রান্না করা খাবার শিশুকে দেয়া যায়।

যা এড়াতে হবে: তেল-মসলা যুক্ত খাবার, দুধ (অনেক ক্ষেত্রে), ঠান্ডা পানীয়, চকোলেট, অতিরিক্ত চিনি, ফাস্টফুড।

ছোট বাচ্চাদের আমাশয়ে ঘরোয়া যত্ন ও পরামর্শ

ঘরোয়া যত্নও চিকিৎসার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

  • শিশুকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন

  • প্রতিবার পায়খানার পর সাবান দিয়ে হাত ধোয়ান

  • পায়খানার জায়গা পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত রাখুন

  • ওরস্যালাইন বা তরল খাবার বারবার দিন

  • ঠান্ডা পরিবেশে রাখুন, গরমে যেন ঘেমে না যায়

  • শিশুকে বিশ্রামে রাখুন এবং টিভি/মোবাইল থেকে দূরে রাখুন যাতে সে পর্যাপ্ত ঘুমায়

ঘরোয়া কিছু সহজ উপায় যেমন লেবু পানি বা পাকা কলা অনেকসময় উপকারে আসতে পারে, তবে তা শিশুর বয়স ও অবস্থার ওপর নির্ভর করে।

See also  একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি ২০২৩ : xiclassadmission notice 2023

কখন শিশুকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া জরুরি?

শিশুর অবস্থা বেশি খারাপ হলে সময় নষ্ট না করে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে। নিচের লক্ষণগুলো থাকলে সতর্ক হোন:

  • ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে রক্তমিশ্রিত পায়খানা

  • পায়খানার সঙ্গে বমি এবং জ্বর

  • অতিরিক্ত পানিশূন্যতার লক্ষণ

  • শিশুর মুখ শুকিয়ে যাওয়া, কান্নার সময় অশ্রু না আসা

  • শিশু দুর্বল হয়ে পড়া বা অচেতন ভাব

  • খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া বা ঘন ঘন ঘুমিয়ে যাওয়া

আমাশয় শিশুদের জন্য একটি ঝুঁকিপূর্ণ রোগ হলেও সচেতনতা ও সময়মতো চিকিৎসার মাধ্যমে খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। প্রতিদিনের পরিচ্ছন্নতা, নিরাপদ খাবার এবং সঠিক ওষুধের মাধ্যমে এই রোগ থেকে শিশুদের রক্ষা করা সম্ভব।

অভিভাবকদের উচিত, বাচ্চাদের শরীরের ছোটখাটো পরিবর্তন নজরে রাখা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলা। ৫ বছরের নিচের শিশুদের ক্ষেত্রে সবসময় বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সুস্থ সন্তানই সুখী পরিবার ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রতীক—তাই শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করাই আমাদের প্রধান দায়িত্ব।

Leave a Comment