বর্তমান সময়ে অনিয়মিত জীবনযাপন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং পর্যাপ্ত পানি না খাওয়ার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক সময় পায়খানা শক্ত হয়ে যাওয়া, একাধিক দিন পায়খানা না হওয়া কিংবা মলত্যাগে ব্যথা হওয়া স্বাভাবিক জীবনে বড় ধরনের অস্বস্তি তৈরি করে। এ অবস্থায় অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বিভিন্ন ওষুধ ব্যবহার করে থাকেন। তবে সঠিক ট্যাবলেট ও সিরাপ সঠিক মাত্রায় ব্যবহার করলে কোষ্ঠকাঠিন্য দ্রুত উপশম করা সম্ভব। আজকের এই লেখায় আমরা জানব পায়খানা ক্লিয়ার করার জন্য কোন কোন ট্যাবলেট ও সিরাপ ব্যবহার করা হয়, এগুলোর কার্যকারিতা এবং ব্যবহারের নিয়ম।
সূচিপত্র
পায়খানা ক্লিয়ার করার সাধারণ কারণ ও চিকিৎসার প্রয়োজন
পায়খানা ক্লিয়ার না হওয়ার পেছনে মূলত কয়েকটি কারণ কাজ করে, যেমন—
-
পর্যাপ্ত পানি না খাওয়া
-
আঁশযুক্ত খাবারের ঘাটতি
-
অতিরিক্ত ভাজা-পোড়া ও জাঙ্ক ফুড খাওয়া
-
শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়ামের অভাব
-
মানসিক চাপ ও অনিদ্রা
-
কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
এসব কারণে অন্ত্রে মল জমে যায় এবং স্বাভাবিকভাবে বের হতে চায় না। তাই চিকিৎসার পাশাপাশি সঠিক ওষুধ ব্যবহার করলে দ্রুত আরাম পাওয়া যায়।
পায়খানা ক্লিয়ার করার ট্যাবলেটের নাম
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বাজারে বেশ কিছু কার্যকর ট্যাবলেট পাওয়া যায়। তবে এগুলো অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করা উচিত। জনপ্রিয় কয়েকটি ট্যাবলেট হলো—
১. Dulcolax (Bisacodyl Tablet)
-
এটি একটি বহুল ব্যবহৃত ল্যাক্সেটিভ।
-
অন্ত্রের গতিশীলতা বাড়িয়ে মল নরম করে সহজে বের হতে সাহায্য করে।
-
সাধারণত রাতে খেলে সকালে কার্যকারিতা দেখা যায়।
২. Bisacodyl Tablet (Generic Form)
-
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে কার্যকর।
-
মলত্যাগের জন্য প্রয়োজনীয় চাপ তৈরি করে।
-
শিশু ও বয়স্ক উভয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়, তবে মাত্রা আলাদা।
৩. Cremaffin Plus Tablet
-
এটি একটি কম্বিনেশন ওষুধ, যা মল নরম করে এবং সহজে পায়খানা ক্লিয়ার করতে সাহায্য করে।
-
দীর্ঘমেয়াদী কোষ্ঠকাঠিন্যে উপকারী।
৪. Sodium Picosulfate Tablet
-
এটি অন্ত্রে পানির প্রবাহ বাড়িয়ে দেয়, ফলে মল নরম হয়।
-
তুলনামূলক দ্রুত কার্যকর।
পায়খানা ক্লিয়ার করার সিরাপের নাম
যাদের জন্য ট্যাবলেট ব্যবহার কঠিন, বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য সিরাপ একটি ভালো সমাধান। কার্যকর কিছু সিরাপ হলো—
১. Duphalac Syrup (Lactulose Syrup)
-
এটি কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য সবচেয়ে পরিচিত সিরাপ।
-
মল নরম করে এবং অন্ত্রে পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে।
-
শিশু, গর্ভবতী মহিলা ও বয়স্কদের জন্য নিরাপদ বলে ধরা হয়।
২. Laxicon Syrup
-
এটি একটি ল্যাক্সেটিভ সিরাপ, যা দ্রুত মলত্যাগে সাহায্য করে।
-
অন্ত্র পরিষ্কার রাখতে কার্যকর।
৩. Cremaffin Syrup
-
মল নরম করার পাশাপাশি অন্ত্রের মুভমেন্ট বাড়ায়।
-
দীর্ঘমেয়াদে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ব্যবহার করা হয়।
৪. Softlax Syrup
-
এটি শিশু ও বয়স্ক উভয়ের জন্য কার্যকর।
-
হজমের সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্য একসাথে কমাতে সাহায্য করে।
ট্যাবলেট ও সিরাপ ব্যবহারের নিয়ম
-
সাধারণত রাতের বেলা ট্যাবলেট বা সিরাপ খাওয়া ভালো, যাতে সকালে সহজে পায়খানা ক্লিয়ার হয়।
-
সিরাপের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের নির্দেশিত মাত্রা অনুযায়ী ব্যবহার করতে হবে।
-
পর্যাপ্ত পানি পান করা অত্যন্ত জরুরি।
-
সপ্তাহে ২–৩ বারের বেশি ব্যবহার না করাই ভালো, নইলে অভ্যাস তৈরি হতে পারে।
-
দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে অবশ্যই ডাক্তার দেখানো উচিত।
প্রাকৃতিকভাবে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায়
ওষুধের পাশাপাশি কিছু প্রাকৃতিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা অনেকটাই কমে যায়। যেমন—
-
প্রতিদিন অন্তত ৮–১০ গ্লাস পানি পান করা।
-
বেশি করে শাকসবজি, ফলমূল ও আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া।
-
প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে টয়লেটে যাওয়ার অভ্যাস করা।
-
নিয়মিত হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম করা।
-
অতিরিক্ত ভাজাপোড়া ও জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলা।
সতর্কতা
-
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহার করা উচিত নয়।
-
অতিরিক্ত ল্যাক্সেটিভ খাওয়া শরীরের প্রাকৃতিক হজম প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
-
গর্ভবতী নারী, ডায়াবেটিস বা হৃদরোগী রোগীদের ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
-
শিশুদের জন্য সিরাপের মাত্রা আলাদা, তাই অভিভাবকদের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
পায়খানা ক্লিয়ার করার ট্যাবলেট ও সিরাপ কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় তাৎক্ষণিক আরাম দেয়। তবে এগুলো কখনোই স্থায়ী সমাধান নয়। জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং নিয়মিত ব্যায়াম করার মাধ্যমেই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দীর্ঘমেয়াদে দূর করা সম্ভব। সুতরাং, ওষুধ ব্যবহার করার পাশাপাশি প্রাকৃতিক উপায়ে শরীর সুস্থ রাখা উচিত।