দাঁত মানুষের সৌন্দর্যের একটি বড় অংশ এবং সুস্থ জীবনের অপরিহার্য অঙ্গ। সুন্দর দাঁত শুধু হাসিকে আকর্ষণীয় করে তোলে না, এটি খাবার চিবাতে ও হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করতেও সাহায্য করে। কিন্তু অনেকেই দাঁতের যত্নে অবহেলা করেন, যার ফলে দাঁতে ব্যথা, ক্ষয়, মাড়ির রোগ, মুখের দুর্গন্ধসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। দাঁতের যত্ন নিতে হলে নিয়মিত পরিষ্কার রাখা, সঠিক অভ্যাস গড়ে তোলা এবং উপকারী খাবার গ্রহণ করা জরুরি।
সূচিপত্র
দাঁতের যত্ন কিভাবে নিতে হয়
১. দিনে দুইবার ব্রাশ করা
দাঁতের যত্নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস হলো প্রতিদিন সকালে এবং রাতে ঘুমানোর আগে দাঁত ব্রাশ করা। ফ্লুরাইডযুক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার করলে দাঁত শক্ত থাকে এবং ক্ষয় প্রতিরোধ হয়।
২. সঠিকভাবে ব্রাশ করা
ব্রাশ করার সময় হালকা হাতের চাপ ব্যবহার করতে হবে এবং দাঁতের ভেতর ও বাইরের অংশ সমানভাবে পরিষ্কার করতে হবে। অন্তত দুই মিনিট ধরে ব্রাশ করাই যথেষ্ট।
৩. ফ্লস ব্যবহার করা
শুধু ব্রাশ দিয়ে দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা খাবারের কণা বের হয় না। তাই প্রতিদিন অন্তত একবার ফ্লস ব্যবহার করলে দাঁতের ফাঁকে জীবাণু জমতে পারে না।
৪. মাউথওয়াশ ব্যবহার করা
অ্যালকোহল মুক্ত মাউথওয়াশ মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে ও ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে কার্যকর। সপ্তাহে কয়েকবার ব্যবহার করলেই ভালো ফল পাওয়া যায়।
৫. দাঁত দিয়ে শক্ত জিনিস না ভাঙা
অনেকে দাঁত দিয়ে বাদাম, বোতল বা শক্ত জিনিস ভাঙেন। এটি দাঁত ভেঙে যাওয়া বা ফাটল ধরার ঝুঁকি বাড়ায়।
৬. নিয়মিত ডেন্টিস্টের কাছে যাওয়া
প্রতি ছয় মাস অন্তর দাঁতের ডাক্তারকে দেখানো উচিত। এতে দাঁতের ছোটখাটো সমস্যা প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে এবং বড় কোনো রোগে পরিণত হয় না।
দাঁতের যত্নে উপকারী খাবার
১. দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার
দুধ, দই ও পনিরে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস থাকে, যা দাঁত ও হাড়কে মজবুত করে।
২. শাকসবজি
পালং শাক, লাউ, কুমড়া ও ব্রোকলি দাঁতের জন্য উপকারী। এগুলো দাঁতকে প্রাকৃতিকভাবে শক্তিশালী করে এবং ভিটামিন সরবরাহ করে।
৩. ফলমূল
আপেল, কমলা, স্ট্রবেরি ও লেবুর মতো ফল দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক। আপেল দাঁতের প্রাকৃতিক ক্লিনার হিসেবে কাজ করে।
৪. বাদাম ও বীজ
কাজু, কাঠবাদাম ও সূর্যমুখীর বীজে থাকা মিনারেল দাঁতকে মজবুত করে এবং ক্ষয় প্রতিরোধ করে।
৫. পানি
পর্যাপ্ত পানি পান করলে মুখের লালা উৎপাদন বাড়ে। এটি মুখের অ্যাসিড কমায় এবং দাঁত ক্ষয় থেকে রক্ষা করে।
৬. মাছ ও ডিম
এগুলোতে থাকা ভিটামিন ডি শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণ বাড়ায়, যা দাঁত ও হাড়কে শক্ত রাখে।
দাঁতের যত্নে যে খাবার এড়ানো উচিত
-
অতিরিক্ত চিনি সমৃদ্ধ খাবার ও সফট ড্রিংক
-
বেশি চকলেট ও মিষ্টি
-
অতিরিক্ত চা ও কফি, যা দাঁতের রঙ নষ্ট করে
-
ধূমপান ও অ্যালকোহল, যা দাঁত ও মাড়ির মারাত্মক ক্ষতি করে
দাঁতের সুস্থতার জন্য কিছু বাড়তি টিপস
-
প্রতিবার খাবারের পর কুলকুচি করা
-
শিশুদের ছোটবেলা থেকেই দাঁতের যত্নের অভ্যাস শেখানো
-
নিজের জন্য সঠিক আকারের টুথব্রাশ বেছে নেওয়া
-
তিন মাস পর পর টুথব্রাশ পরিবর্তন করা
দাঁতের যত্ন নেওয়া মানে শুধু ব্রাশ করা নয়, বরং সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও স্বাস্থ্যকর অভ্যাস বজায় রাখা। নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার রাখা, উপকারী খাবার খাওয়া এবং ডেন্টিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী চললে দাঁত হবে সুন্দর ও মজবুত। দাঁতের যত্ন নিলে শুধু আপনার হাসিই নয়, আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্যও থাকবে ভালো। তাই আজ থেকেই দাঁতের যত্ন নেওয়া শুরু করুন এবং সুস্থ জীবনের পথে এগিয়ে যান।