ডায়াবেটিক রোগী অসুস্থ হলে দ্রুত ব্যবস্থা কী নেবেন?

ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘমেয়াদি অসুখ যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নিয়মিতভাবে পরিচালনা করতে হয়। তবে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগী যদি হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন—যেমন সর্দি-জ্বর, বমি, ডায়রিয়া কিংবা ইনফেকশন—তাহলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। কারণ অসুস্থতার সময় শরীরে গ্লুকোজের ওঠানামা বেড়ে যেতে পারে, ইনসুলিন বা ওষুধের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে এবং হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা হাইপারগ্লাইসেমিয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

এই পরিস্থিতিতে দ্রুত এবং সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে জটিলতা তৈরি হতে পারে। তাই এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব, ডায়াবেটিক রোগী অসুস্থ হলে কীভাবে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে এবং কী কী বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

অসুস্থ অবস্থায় রক্তে শর্করার মাত্রা ঘন ঘন পরিমাপ করুন

ডায়াবেটিক রোগী যখন অসুস্থ হন, তখন শরীরের স্ট্রেস হরমোন যেমন কর্টিসল বৃদ্ধি পায়। এতে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। তাই দিনে অন্তত ৪–৬ বার রক্তে শর্করার মাত্রা মেপে রাখা অত্যন্ত জরুরি। যদি রক্তে গ্লুকোজ ১০ mmol/L-এর বেশি থাকে, তবে পানি পান বাড়িয়ে দিতে হবে এবং ইনসুলিন বা ওষুধের ডোজ সাময়িকভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরিবর্তন করতে হতে পারে।

পর্যাপ্ত পানি ও তরল গ্রহণ নিশ্চিত করুন

অসুস্থতার সময় যেমন জ্বর বা বমি-ডায়রিয়া হলে শরীর সহজেই পানিশূন্য হয়ে পড়ে। ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক। তাই দিনে অন্তত ৮–১০ গ্লাস পানি এবং ইলেকট্রোলাইট যুক্ত তরল যেমন ওআরএস, লেবুর শরবত (চিনি ছাড়া), অথবা ক্লিয়ার স্যুপ খেতে হবে। এতে রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ডিহাইড্রেশনও রোধ হবে।

See also  চুল লম্বা করার উপায়? সাত দিনে বিশ ইঞ্চি চুল লম্বা করার উপায়

ইনসুলিন বা ওষুধ চালিয়ে যাবেন নাকি বন্ধ করবেন?

অনেক সময় রোগীরা অসুস্থ হলে ইনসুলিন বা ওষুধ বন্ধ করে দেন, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক। এমনকি খাওয়া-দাওয়া না করলেও ইনসুলিন বা ওষুধ চালিয়ে যেতে হয়, তবে ডোজ সামঞ্জস্য করতে হয় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী। হঠাৎ বন্ধ করে দিলে কিটোঅ্যাসিডোসিস বা হাইপারগ্লাইসেমিয়া ঝুঁকি দেখা দিতে পারে। তাই নিজে সিদ্ধান্ত না নিয়ে, চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করেই ইনসুলিন বা ওষুধ ব্যবস্থাপনা করতে হবে।

খাদ্যাভ্যাসের যত্ন নিন – ক্ষুধা না থাকলেও কিছু খেতে হবে

অসুস্থতার সময় অনেক ডায়াবেটিক রোগী ক্ষুধা পান না। তবে দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকলে রক্তে শর্করা হঠাৎ কমে যেতে পারে। তাই সহজে হজমযোগ্য খাদ্য যেমন স্যুপ, ডাল, ওটস, খিচুড়ি, অথবা লিকুইড খাবার কম পরিমাণে বারবার খাওয়াতে হবে। হাইপোগ্লাইসেমিয়ার ঝুঁকি থাকলে হাতে গ্লুকোজ ট্যাবলেট বা মিষ্টি পানি রাখা ভালো।

কখন দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে?

সব ধরনের অসুস্থতা ঘরে বসে সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। কিছু লক্ষণ দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে যেতে হবে:

  • ৩৮.৫° সেলসিয়াস বা তার বেশি জ্বর

  • ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বমি বা ডায়রিয়া

  • রক্তে গ্লুকোজ ২০ mmol/L এর বেশি হওয়া

  • শ্বাসকষ্ট, অস্পষ্ট কথা বলা বা অচেতনভাব

  • প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া বা একেবারে বন্ধ হয়ে যাওয়া

এই লক্ষণগুলোর যেকোনো একটি দেখা দিলেই দেরি না করে ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ বা নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

ডায়াবেটিক রোগীর অসুস্থতা কখনোই হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। একটুখানি অসাবধানতাও মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই রক্তে গ্লুকোজ নিয়মিত পরিমাপ, ইনসুলিন বা ওষুধের সঠিক ব্যবহার, তরল গ্রহণ এবং পুষ্টিকর খাবারের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। কোনো ধরনের সন্দেহজনক উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। সচেতন থাকলেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ থাকা সম্ভব।

See also  শরীরের মেদ ও ওজন কমানোর উপায়? শরীরের ওজন কমানোর টিপস

Leave a Comment