বর্তমান চিকিৎসাবিজ্ঞানে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন একটি পরিচিত নাম, যা মূলত ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ ও কিছু অটোইমিউন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। কোভিড-১৯ মহামারির সময় এই ওষুধটি আলোচনায় আসে, যদিও পরবর্তীতে তার কার্যকারিতা নিয়ে নানা বিতর্ক তৈরি হয়। তারপরও বিশ্বব্যাপী বহু রোগের চিকিৎসায় এখনও এটি ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে এর সঠিক ব্যবহার ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সচেতনতা জরুরি।
সূচিপত্র
হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের প্রাথমিক ব্যবহার ও চিকিৎসা ক্ষেত্র
হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন মূলত একটি অ্যান্টিম্যালেরিয়াল ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি Plasmodium প্রজাতির ম্যালেরিয়া পরজীবীর বিরুদ্ধে কাজ করে। তবে শুধুমাত্র ম্যালেরিয়ার জন্যই নয়, এটি ব্যবহৃত হয় রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস (গাঁটে ব্যথা), লুপাস (এক ধরনের অটোইমিউন রোগ), এবং অন্যান্য প্রদাহজনিত রোগের চিকিৎসায়। ওষুধটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর প্রভাব ফেলে এবং শরীরের অতিরিক্ত ইমিউন প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহারের ফলে অনেক রোগীর ব্যথা ও ফোলা কমে আসে।
কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের ব্যবহার ও বিতর্ক
২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারির সময় বিশ্বজুড়ে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন আলোচনায় আসে যখন প্রাথমিক গবেষণায় কিছু ক্ষেত্রে এর কার্যকারিতা লক্ষ্য করা যায়। অনেক দেশ এই ওষুধটি কোভিড রোগীদের উপর প্রয়োগ করতে শুরু করে। তবে পরবর্তীতে বৃহৎ আকারের গবেষণা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) পর্যবেক্ষণে দেখা যায় যে, কোভিড-১৯ প্রতিরোধ বা চিকিৎসায় হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের কার্যকারিতা প্রমাণিত নয়। বরং এটি কিছু গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি তৈরি করে। ফলে বর্তমানে অধিকাংশ দেশের চিকিৎসা প্রটোকলে কোভিডের জন্য এই ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে না।
হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের সাধারণ ও গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
যেকোন ওষুধের মতো, হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনেরও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে আছে মাথা ঘোরা, বমি, পেটে গ্যাস, ক্ষুধামন্দা ও ত্বকে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া। তবে দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহারে কিছু গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা দিতে পারে যেমন—
-
চোখের রেটিনায় স্থায়ী ক্ষতি (বিশেষ করে উচ্চ ডোজে)
-
হার্টের রিদমে সমস্যা (QT prolongation)
-
লিভার বা কিডনির কার্যকারিতা হ্রাস
-
স্নায়বিক জটিলতা
এই কারণে, ওষুধটি ব্যবহারের আগে অবশ্যই একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ জরুরি।
ব্যবহারের নির্দেশনা ও সতর্কতা
হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহারের সময় রোগীর বয়স, ওজন, রোগের ধরন এবং অন্যান্য চলমান চিকিৎসা বিবেচনায় রেখে ডোজ নির্ধারণ করতে হয়। এটি সাধারণত খাবারের পরে খেতে বলা হয় যাতে পেটে কম সমস্যা হয়। চোখের সমস্যা বা হৃৎস্পন্দনের অনিয়ম থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কখনোই এই ওষুধ খাওয়া উচিত নয়। তাছাড়া গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্যও এটি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, তাই বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন আবশ্যক।
হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন একটি কার্যকর ওষুধ হলেও এটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা জরুরি। যেসব রোগে এটি প্রমাণিতভাবে কার্যকর, শুধুমাত্র সেই ক্ষেত্রেই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এটি গ্রহণ করা উচিত। অপ্রয়োজনীয় বা ভুল ব্যবহারে এটি মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। স্বাস্থ্য সচেতনতা ও সচেতন ব্যবহারের মাধ্যমে এই ওষুধটি রোগ প্রতিরোধে কার্যকর অবদান রাখতে পারে।