জিংক ট্যাবলেট খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

জিংক বা দস্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন জৈব প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী রাখা থেকে শুরু করে ক্ষত নিরাময়, হরমোন নিয়ন্ত্রণ এবং কোষের বৃদ্ধি—সব ক্ষেত্রেই জিংকের ভূমিকা অপরিসীম। অনেক সময় খাদ্য থেকে পর্যাপ্ত জিংক না পেলে ডাক্তাররা জিংক ট্যাবলেট খাওয়ার পরামর্শ দেন। তবে এর পাশাপাশি কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা অপকারিতাও রয়েছে যা জানা জরুরি। তাই জিংক ট্যাবলেট গ্রহণের আগে এর উপকারিতা ও সম্ভাব্য ক্ষতির দিকগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা প্রয়োজন।

জিংক ট্যাবলেট খাওয়ার প্রধান উপকারিতা

জিংক ট্যাবলেটের অন্যতম বড় সুবিধা হলো শরীরে জিংকের ঘাটতি দ্রুত পূরণ করা। এর ফলে—

  • ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হয়: জিংক ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে শরীরকে সুরক্ষা দেয়।

  • ক্ষত নিরাময়ে সহায়তা করে: ছোটখাটো কাটা বা আঘাত দ্রুত সেরে উঠতে সাহায্য করে।

  • ত্বকের স্বাস্থ্যে উন্নতি আনে: ব্রণ, একজিমা এবং অন্যান্য ত্বকের সমস্যায় কার্যকর।

  • প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: পুরুষদের ক্ষেত্রে শুক্রাণুর মান উন্নত করে এবং নারীদের হরমোন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

  • রুচি ও গন্ধ অনুভূতি উন্নত করে: যারা দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থতা বা সংক্রমণের কারণে স্বাদ ও গন্ধ হারিয়েছেন, তাদের জন্য জিংক সহায়ক হতে পারে।

জিংক ট্যাবলেটের অপকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

যদিও জিংক ট্যাবলেট অনেক উপকার এনে দেয়, কিন্তু অতিরিক্ত গ্রহণ বা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া খেলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে—

  • পেটের সমস্যা: বমি ভাব, ডায়রিয়া বা পেট ব্যথা হতে পারে।

  • তামার ঘাটতি: দীর্ঘমেয়াদী অতিরিক্ত জিংক গ্রহণ শরীরে তামার মাত্রা কমিয়ে দেয়, যা স্নায়ু ও রক্তের স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে।

  • ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হওয়া: অতিরিক্ত জিংক গ্রহণ উল্টো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে।

  • ওষুধের সাথে প্রতিক্রিয়া: কিছু অ্যান্টিবায়োটিক বা রক্তচাপের ওষুধের কার্যকারিতা কমাতে পারে।

See also  মহিলাদের চুল পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া ৫ টি উপায়

জিংক ট্যাবলেট খাওয়ার সঠিক মাত্রা

ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া জিংক ট্যাবলেট গ্রহণ না করাই উত্তম। সাধারণত—

  • প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ: দৈনিক প্রয়োজন প্রায় ১১ মি.গ্রা.

  • প্রাপ্তবয়স্ক নারী: দৈনিক প্রয়োজন প্রায় ৮ মি.গ্রা.

  • গর্ভবতী নারী: প্রয়োজন বেড়ে প্রায় ১১-১২ মি.গ্রা. হতে পারে।
    যদি খাদ্য থেকে এই পরিমাণ জিংক না পাওয়া যায়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ট্যাবলেট গ্রহণ করা উচিত।

জিংকের প্রাকৃতিক উৎস ও বিকল্প ব্যবস্থা

ট্যাবলেট ছাড়াও খাদ্য থেকেই পর্যাপ্ত জিংক পাওয়া সম্ভব—

  • প্রাণিজ উৎস: গরুর মাংস, ভেড়ার মাংস, সামুদ্রিক মাছ, ডিম।

  • উদ্ভিজ্জ উৎস: ডাল, বাদাম, বীজ, শাকসবজি।
    প্রাকৃতিক উৎস থেকে জিংক গ্রহণ শরীরের জন্য বেশি নিরাপদ এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি কম। ট্যাবলেটের প্রয়োজন হলে তা যেন সঠিক ডোজ ও সময় অনুযায়ী হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

জিংক ট্যাবলেট আমাদের শরীরে জিংকের ঘাটতি পূরণ করে ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করা, ক্ষত নিরাময়, ত্বক ও প্রজনন স্বাস্থ্যের উন্নতিতে বড় ভূমিকা রাখে। তবে অতিরিক্ত বা ভুলভাবে গ্রহণ করলে এটি পেটের সমস্যা, তামার ঘাটতি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য জটিলতার কারণ হতে পারে। তাই জিংক ট্যাবলেট গ্রহণের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত এবং সম্ভব হলে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎস থেকে জিংকের চাহিদা পূরণ করাই শ্রেয়।

Leave a Comment