শ্বাসকষ্ট বা এজমা রোগীদের জন্য ইনহেলার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা সরঞ্জাম। এটি সরাসরি ফুসফুসে ওষুধ পৌঁছে দিয়ে শ্বাসনালী খুলে দেয় এবং দ্রুত উপশমে সহায়তা করে। তবে অনেকেই সঠিক নিয়মে ইনহেলার ব্যবহার করেন না, যার ফলে কাঙ্ক্ষিত উপকার পাওয়া যায় না এবং কখনো কখনো মারাত্মক বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। তাই ইনহেলার ব্যবহারের সময় যে সাধারণ ভুলগুলো বিপজ্জনক হতে পারে, তা জানা অত্যন্ত জরুরি।
সূচিপত্র
ইনহেলার ব্যবহারের গুরুত্ব
ইনহেলার মূলত ফুসফুসে সরাসরি ওষুধ পৌঁছে দিতে ব্যবহৃত হয়। ট্যাবলেট বা সিরাপের তুলনায় ইনহেলার দ্রুত কার্যকর হয় কারণ এটি সরাসরি শ্বাসনালীতে কাজ করে। কিন্তু সঠিকভাবে ব্যবহার না করলে ওষুধ ফুসফুসে না গিয়ে মুখ বা গলায় জমে থাকে, যা কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়।
ইনহেলার ব্যবহারের সময় সাধারণ ভুলগুলো
১. সঠিকভাবে ঝাঁকিয়ে না নেওয়া
অনেকেই ইনহেলার ব্যবহার করার আগে ঝাঁকান না। অথচ ইনহেলারের ওষুধ তরল আকারে থাকে যা সমানভাবে ছড়ানোর জন্য ঝাঁকানো প্রয়োজন। এটি না করলে ডোজ অসমান হয়ে যায়।
২. মুখে সঠিকভাবে না ধরা
ইনহেলার ব্যবহারের সময় মুখে সঠিকভাবে না ধরলে ওষুধের বড় অংশ বাতাসে বেরিয়ে যায়। এতে ফুসফুসে পর্যাপ্ত ওষুধ পৌঁছায় না এবং কার্যকারিতা কমে যায়।
৩. শ্বাসের সাথে সঠিকভাবে মিল না রাখা
ইনহেলার ব্যবহারের সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শ্বাস নেওয়ার সময় ওষুধ টেনে নেওয়া। অনেকেই প্রথমে ইনহেলার চাপ দিয়ে পরে শ্বাস নেন বা উল্টোটা করেন। ফলে ওষুধ ফুসফুসে প্রবেশ করতে পারে না।
৪. খুব দ্রুত শ্বাস নেওয়া
ইনহেলার ব্যবহারের সময় ধীরে ও গভীরভাবে শ্বাস নিতে হয়। কিন্তু অনেকে দ্রুত শ্বাস নিয়ে ফেলেন, ফলে ওষুধ গলায় জমে থাকে এবং কার্যকর হয় না।
৫. শ্বাস ধরে না রাখা
ওষুধ ফুসফুসে প্রবেশ করার পর ১০ সেকেন্ড শ্বাস ধরে রাখতে হয় যাতে ওষুধ ফুসফুসে ভালোভাবে ছড়িয়ে যায়। অনেকেই সঙ্গে সঙ্গে শ্বাস ছেড়ে দেন, যা একটি বড় ভুল।
৬. স্পেসার ব্যবহার না করা
শিশু বা বয়স্কদের ক্ষেত্রে সরাসরি ইনহেলার ব্যবহার কঠিন হতে পারে। এজন্য স্পেসার ব্যবহার করা উচিত। অনেকেই স্পেসার ছাড়া ইনহেলার ব্যবহার করেন, ফলে সঠিকভাবে ওষুধ গ্রহণ করা সম্ভব হয় না।
ইনহেলার ব্যবহারের ভুলের ফলে যেসব বিপদ হতে পারে
১. শ্বাসকষ্ট বৃদ্ধি
ইনহেলার ঠিকমতো ব্যবহার না করলে ফুসফুসে পর্যাপ্ত ওষুধ পৌঁছায় না। এতে শ্বাসকষ্ট আরও বাড়তে পারে এবং রোগী সংকটে পড়তে পারেন।
২. মুখ ও গলায় সংক্রমণ
ওষুধ যদি ফুসফুসে না গিয়ে মুখ বা গলায় জমে থাকে তবে সেখানে সংক্রমণ, জ্বালা বা ছত্রাকের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৩. অকার্যকর চিকিৎসা
সঠিকভাবে ইনহেলার ব্যবহার না করলে চিকিৎসা কার্যকর হয় না। এতে এজমা বা শ্বাসকষ্টের সমস্যার উন্নতি হয় না বরং দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
৪. আকস্মিক অ্যাজমা অ্যাটাকের ঝুঁকি
ডোজ সঠিকভাবে ফুসফুসে না পৌঁছালে হঠাৎ করে অ্যাজমা অ্যাটাক হতে পারে, যা জীবনহানির ঝুঁকিও সৃষ্টি করতে পারে।
সঠিকভাবে ইনহেলার ব্যবহারের নিয়ম
-
প্রথমে ইনহেলার ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে নিন।
-
মুখে ইনহেলার সঠিকভাবে ধরুন এবং শ্বাস ছেড়ে দিন।
-
ইনহেলার চাপ দেওয়ার সাথে সাথে ধীরে ও গভীরভাবে শ্বাস নিন।
-
শ্বাস নেওয়ার পর অন্তত ১০ সেকেন্ড শ্বাস ধরে রাখুন।
-
প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী স্পেসার ব্যবহার করুন।
-
ইনহেলার ব্যবহারের পর মুখ ভালোভাবে কুলি করে নিন যাতে সংক্রমণের ঝুঁকি না থাকে।
ইনহেলার সঠিকভাবে ব্যবহার না করলে তা মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। শ্বাসকষ্ট কমানোর পরিবর্তে তা আরও বাড়াতে পারে, মুখ ও গলায় সংক্রমণ ঘটাতে পারে এবং আকস্মিক অ্যাজমা অ্যাটাকের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তাই ইনহেলার ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের কাছ থেকে সঠিক নিয়ম শিখে নেওয়া জরুরি। নিয়ম মেনে ব্যবহার করলে ইনহেলার শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণে একটি কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে।