বাংলাদেশের গ্রামীণ শীতকালীন খাবারের মধ্যে খেজুর গুড় অন্যতম। খেজুর গুড় শুধু স্বাদের জন্যই নয়, পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধ। ভাত, পিঠা, দুধ কিংবা নানা ধরনের মিষ্টান্নতে এর ব্যবহার আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। তবে বর্তমান সময়ে ভেজাল গুড়ের কারণে অনেকেই বিভ্রান্ত হন। তাই খাঁটি খেজুর গুড় চেনার উপায়, এটি কিভাবে তৈরি হয় এবং এর উপকারিতা ও অপকারিতা জানা খুবই জরুরি।
সূচিপত্র
খাঁটি খেজুর গুড় চেনার উপায়
১. রঙ দ্বারা শনাক্ত
খাঁটি খেজুর গুড় সাধারণত গাঢ় বাদামি বা লালচে বাদামি রঙের হয়। অস্বাভাবিকভাবে হালকা বা উজ্জ্বল রঙের গুড় প্রায়ই ভেজাল হয়।
২. স্বাদ ও গন্ধ
খাঁটি গুড়ের স্বাদ প্রাকৃতিকভাবে মিষ্টি এবং খেজুর রসের বিশেষ ঘ্রাণযুক্ত হয়। ভেজাল গুড় খেলে চিনি মেশানো স্বাদ পাওয়া যায় এবং গন্ধে অস্বাভাবিকতা থাকে।
৩. শক্ত ও টেক্সচার
খাঁটি গুড় তুলনামূলকভাবে শক্ত এবং ভাঙতে গেলে টুকরো হয়ে যায়। ভেজাল গুড় সাধারণত আঠালো বা অতিরিক্ত নরম হয়।
৪. পানিতে গলানোর পরীক্ষা
খাঁটি গুড় পানিতে দিলে ধীরে ধীরে গলে যায় এবং নিচে তলানিতে মাটি বা অন্য কোনো ভেজাল পদার্থ জমে থাকে না। ভেজাল গুড় দ্রুত গলে যায় ও তলানিতে ময়লা জমে থাকে।
খেজুর গুড় কিভাবে তৈরি হয়
খেজুর গুড় তৈরির প্রক্রিয়া শত বছরের ঐতিহ্য বহন করে।
-
খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ: শীতকালে খেজুর গাছ কেটে বা খোঁচা দিয়ে কলসিতে রস সংগ্রহ করা হয়।
-
রস জ্বাল দেওয়া: সংগৃহীত রস বড় কড়াইয়ে জ্বাল দিয়ে ঘন করা হয়।
-
গুড় তৈরি: জ্বাল দেওয়ার পর ঘন রস একটি ছাঁচে ঢেলে শক্ত করা হয়। এভাবেই তৈরি হয় খাঁটি খেজুর গুড়।
এই প্রক্রিয়ায় কোনো রাসায়নিক বা চিনি ব্যবহার করা হয় না বলেই খাঁটি গুড় প্রাকৃতিক ও পুষ্টিকর হয়।
খেজুর গুড়ের উপকারিতা
১. শক্তি যোগায়
খেজুর গুড় প্রাকৃতিক চিনি ও ক্যালোরিতে সমৃদ্ধ। এটি শরীরকে দ্রুত শক্তি যোগায় এবং ক্লান্তি দূর করে।
২. রক্তশূন্যতা দূর করে
খেজুর গুড়ে প্রচুর আয়রন রয়েছে, যা হিমোগ্লোবিন বাড়িয়ে রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে সাহায্য করে।
৩. হজম শক্তি বাড়ায়
এতে থাকা প্রাকৃতিক এনজাইম হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
খেজুর গুড়ে ভিটামিন বি, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে, যা ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।
৫. হাড় ও দাঁতের জন্য উপকারী
ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি হাড় ও দাঁতের সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।
৬. ঠান্ডাজনিত রোগে উপকারী
শীতে গরম দুধ বা চায়ে খেজুর গুড় মিশিয়ে খেলে কাশি ও সর্দি কমে এবং শরীর গরম রাখে।
খেজুর গুড়ের অপকারিতা
১. অতিরিক্ত ক্যালোরি
এতে প্রচুর প্রাকৃতিক চিনি ও ক্যালোরি থাকায় অতিরিক্ত খেলে ওজন বেড়ে যেতে পারে এবং ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
২. ভেজাল গুড়ের ক্ষতি
যদি রাসায়নিক বা কৃত্রিম রঙ মেশানো হয়, তবে তা লিভার, কিডনি ও হজম প্রক্রিয়ার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
৩. দাঁতের ক্ষয়
নিয়মিত বেশি পরিমাণে গুড় খেলে দাঁতের ক্ষয় হতে পারে এবং দাঁতে ব্যথা বা ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়ে।
খাঁটি গুড় কেন বেছে নেবেন
খাঁটি খেজুর গুড় প্রাকৃতিক ও পুষ্টিকর হওয়ায় এটি শরীরের জন্য উপকারী। তবে ভেজাল গুড় স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে। তাই সবসময় নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে খাঁটি গুড় কিনতে হবে।
খেজুর গুড় আমাদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং পুষ্টির ভাণ্ডার। তবে খাঁটি গুড় চেনা এবং ভেজাল থেকে দূরে থাকা জরুরি। খাঁটি গুড় শরীরকে শক্তি দেয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং নানা শারীরিক উপকার করে। অন্যদিকে ভেজাল গুড় স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে। তাই খাঁটি খেজুর গুড় বেছে নিয়ে সঠিক পরিমাণে খেলে এটি শরীরের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ।