Mebendazole একটি বহুল ব্যবহৃত অ্যান্টি-প্যারাসাইটিক ঔষধ, যা মূলত কৃমি দূর করার জন্য ব্যবহার করা হয়। শরীরে বিভিন্ন ধরনের রাউন্ডওয়ার্ম, হুকওয়ার্ম, হুইপওয়ার্ম এবং পিনওয়ার্ম সংক্রমণ হলে ডাক্তাররা সাধারণত এই ঔষধ প্রেসক্রাইব করে থাকেন। এটি সহজলভ্য ওষুধগুলোর একটি, যা শিশু থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক সবার ক্ষেত্রেই নিরাপদে ব্যবহার করা যায়, তবে অবশ্যই নির্দিষ্ট ডোজ ও নিয়ম মেনে সেবন করা প্রয়োজন।
এই আর্টিকেলে আমরা জানব Mebendazole এর ব্যবহার, ডোজ, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ও সতর্কতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
সূচিপত্র
Mebendazole এর কাজ কীভাবে করে?
Mebendazole কৃমির কোষের ভেতরে গ্লুকোজ শোষণ বন্ধ করে দেয়, যার ফলে কৃমি বেঁচে থাকতে পারে না। ধীরে ধীরে কৃমি মারা যায় এবং স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় শরীর থেকে বের হয়ে যায়। এ কারণে এটি বিভিন্ন ধরনের অন্ত্রের কৃমি সংক্রমণে অত্যন্ত কার্যকর।
Mebendazole এর ব্যবহার
Mebendazole বিভিন্ন কৃমি সংক্রমণে ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে প্রধান কয়েকটি হলো—
-
Ascariasis (রাউন্ডওয়ার্ম)
-
Enterobiasis (পিনওয়ার্ম)
-
Trichuriasis (হুইপওয়ার্ম)
-
Hookworm infection
-
Mixed worm infection
বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে স্কুলে পড়ুয়া শিশুদের কৃমির সমস্যা প্রতিরোধে নিয়মিত Mebendazole খাওয়ানো হয়।
Mebendazole এর ডোজ
ডোজ নির্ধারণের ক্ষেত্রে রোগীর বয়স ও সংক্রমণের ধরন বিবেচনা করা হয়। নিচে সাধারণ ডোজ উল্লেখ করা হলো, তবে সঠিক ডোজ সবসময় ডাক্তার নির্ধারণ করবেন।
শিশু (২ বছরের ঊর্ধ্বে) ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সাধারণ ডোজ:
-
পিনওয়ার্ম (Enterobiasis): একবারে ১০০ মি.গ্রা. ট্যাবলেট, ২ সপ্তাহ পর প্রয়োজন হলে পুনরায় খাওয়ানো যায়।
-
রাউন্ডওয়ার্ম, হুকওয়ার্ম, হুইপওয়ার্ম: দিনে ২ বার ১০০ মি.গ্রা. করে, টানা ৩ দিন।
-
Mixed worm infection: একইভাবে দিনে ২ বার ১০০ মি.গ্রা. করে ৩ দিন।
⚠️ ২ বছরের নিচের শিশুদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
Mebendazole এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
সাধারণত Mebendazole নিরাপদ হলেও কিছু ক্ষেত্রে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—
-
পেট ব্যথা
-
বমি বমি ভাব বা বমি
-
ডায়রিয়া
-
মাথাব্যথা
-
মাথা ঘোরা
-
হালকা চর্মরোগ (র্যাশ)
বিরল ক্ষেত্রে গুরুতর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া:
-
খিঁচুনি
-
রক্তস্বল্পতা (Anemia)
-
অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া (শ্বাসকষ্ট, চুলকানি, মুখ ফোলা ইত্যাদি)
যদি গুরুতর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
Mebendazole ব্যবহারে সতর্কতা
Mebendazole খাওয়ার আগে কিছু বিষয় বিশেষভাবে মাথায় রাখা জরুরি—
-
গর্ভাবস্থা ও স্তন্যদানকালীন সময়:
-
গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে এই ওষুধ খাওয়া সাধারণত এড়িয়ে চলা উচিত, বিশেষ করে প্রথম ৩ মাসে।
-
স্তন্যদানকালীন সময়েও চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার করা উচিত নয়।
-
-
শিশুদের ক্ষেত্রে:
-
২ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য এটি ব্যবহার করা নিরাপদ নাও হতে পারে।
-
-
অন্যান্য রোগ:
-
লিভারের রোগে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে সতর্কতার সাথে ব্যবহার করতে হয়।
-
-
ডোজ মিস করলে:
-
নির্ধারিত সময়ে ডোজ মিস হলে যত দ্রুত সম্ভব খেতে হবে, তবে একসাথে ডাবল ডোজ খাওয়া যাবে না।
-
Mebendazole কিভাবে খাবেন?
-
ট্যাবলেট চিবিয়ে বা গিলে খাওয়া যায়।
-
খাবারের সাথে বা খালি পেটে খাওয়া যেতে পারে।
-
প্রচুর পানি পান করতে হবে।
-
ডাক্তারের নির্দেশিত কোর্স শেষ করা অত্যন্ত জরুরি।
কৃমি প্রতিরোধে অতিরিক্ত টিপস
Mebendazole খাওয়ার পাশাপাশি কৃমি সংক্রমণ প্রতিরোধে কিছু অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। যেমন—
-
প্রতিদিন খাবারের আগে ও টয়লেটের পরে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া।
-
কাঁচা সবজি ও ফল ভালোভাবে ধুয়ে খাওয়া।
-
নখ ছোট করে কাটা।
-
খালি পায়ে মাটি বা ধুলায় হাঁটাচলা না করা।
-
পরিবারের সব সদস্যকে একসাথে কৃমির ঔষধ খাওয়ানো।
Mebendazole একটি কার্যকর ওষুধ, যা বিভিন্ন ধরনের কৃমি সংক্রমণ দূর করতে ব্যবহৃত হয়। তবে এর সঠিক ডোজ, ব্যবহারবিধি ও সতর্কতা মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। শিশু ও গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করা উচিত। পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে কৃমির সংক্রমণ থেকে দীর্ঘমেয়াদী সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব।