বমির সমস্যা হলে সাথে সাথে কোন ওষুধ খাওয়া যায়

বমি একটি সাধারণ শারীরিক সমস্যা যা হঠাৎ করেই হতে পারে এবং এর পেছনে নানা কারণ থাকতে পারে। এটি সাধারণত পাকস্থলীর অস্বস্তি, খাদ্যে বিষক্রিয়া, ভাইরাস সংক্রমণ, ভ্রমণজনিত অসুস্থতা (মোশন সিকনেস), অতিরিক্ত তেল-মশলাযুক্ত খাবার খাওয়া কিংবা গর্ভাবস্থায় হরমোন পরিবর্তনের কারণে হয়ে থাকে। অনেক সময় বমি একবার হয়েই থেমে যায়, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি বারবার হতে পারে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর এবং পানিশূন্যতা সৃষ্টি করতে পারে।

সঠিক সময়ে সঠিক ওষুধ সেবন করলে বমি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। তবে ওষুধ সেবনের আগে বমির আসল কারণ চিহ্নিত করা গুরুত্বপূর্ণ, যাতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নেওয়া যায়।

বমির প্রাথমিক কারণ বোঝা জরুরি

বমি নিয়ন্ত্রণের আগে কেন বমি হচ্ছে তা জানা জরুরি। সাধারণ কিছু কারণ হলো:

  • খাদ্যে বিষক্রিয়া: দূষিত বা বাসি খাবার খাওয়ার ফলে।

  • মোশন সিকনেস: বাস, ট্রেন বা নৌযাত্রায় দীর্ঘ সময় ভ্রমণের সময়।

  • ভাইরাল গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস: পেটের ভাইরাস সংক্রমণ।

  • গর্ভাবস্থা: বিশেষ করে প্রথম তিন মাসে সকালের সময় বমি বমি ভাব।

  • অতিরিক্ত খাওয়া বা হজমের সমস্যা।
    কারণ জানা থাকলে ওষুধ সেবনের পাশাপাশি সঠিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হয়।

সাথে সাথে খাওয়া যায় এমন সাধারণ বমির ওষুধ

বাংলাদেশে বমি নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু পরিচিত ও সহজলভ্য ওষুধ পাওয়া যায়, যা চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যবহার করা উচিত।

(ক) ডমপেরিডন (Domperidone)

  • ব্র্যান্ড নাম: Motilium, Dompy ইত্যাদি।

  • ব্যবহার: হজমে সহায়তা করে এবং পাকস্থলীর খালি হওয়ার প্রক্রিয়া দ্রুত করে, ফলে বমি কমায়।

  • সতর্কতা: লিভারের সমস্যা বা হৃদরোগ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া সেবন করবেন না।

(খ) অনড্যানসেট্রন (Ondansetron)

  • ব্র্যান্ড নাম: Emeset, Vomikind ইত্যাদি।

  • ব্যবহার: বিশেষ করে কেমোথেরাপি, অপারেশনের পর বা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে বমি হলে কার্যকর।

  • সতর্কতা: গর্ভাবস্থায় সেবনের আগে অবশ্যই ডাক্তারকে জানাতে হবে।

See also  বাচ্চাদের এলার্জির লক্ষণ ও এলার্জি দূর করার উপায়

(গ) মেকলিজিন (Meclizine)

  • ব্র্যান্ড নাম: Bonamine, Antivert ইত্যাদি।

  • ব্যবহার: ভ্রমণজনিত বমি (মোশন সিকনেস) নিয়ন্ত্রণে ভালো কাজ করে।

  • সতর্কতা: ঘুম ঘুম ভাব আনতে পারে, তাই গাড়ি চালানোর সময় এড়িয়ে চলা উচিত।

ওষুধ সেবনের পাশাপাশি করণীয়

শুধু ওষুধ খেলেই বমি নিয়ন্ত্রণ হয় না, কিছু অভ্যাস পরিবর্তনও জরুরি।

  • স্বল্প পরিমাণে কিন্তু বারবার পানি পান করুন যাতে শরীরে পানিশূন্যতা না হয়।

  • সেদ্ধ ভাত, কলা, টোস্ট, স্যুপের মতো হালকা খাবার খান।

  • তৈলাক্ত, অতিরিক্ত মশলাযুক্ত এবং অম্লীয় খাবার এড়িয়ে চলুন।

  • বেশি সময় খালি পেটে থাকবেন না।

  • সম্পূর্ণ বিশ্রাম নিন এবং ঠাণ্ডা ও বাতাস চলাচল করে এমন পরিবেশে থাকুন।

কখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে

যদি বমি দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে বা এর সঙ্গে নিচের উপসর্গগুলো দেখা দেয়, তবে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে:

  • ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে লাগাতার বমি হওয়া

  • রক্ত বা কফ মিশ্রিত বমি

  • প্রচণ্ড পেট ব্যথা বা জ্বর

  • মারাত্মক পানিশূন্যতার লক্ষণ (অতিরিক্ত দুর্বলতা, মাথা ঘোরা, প্রস্রাব কম হওয়া)

  • শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, কারণ তাদের পানিশূন্যতার ঝুঁকি বেশি।

বমির সমস্যা সাধারণ হলেও সময়মতো সঠিক ওষুধ ও করণীয় জানলে এটি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। ডমপেরিডন, অনড্যানসেট্রন এবং মেকলিজিনের মতো ওষুধ অনেক ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক উপশম দেয়, তবে এগুলো সেবনের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। পাশাপাশি পর্যাপ্ত পানি পান, হালকা খাবার খাওয়া এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম বমি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকুন এবং বমি দীর্ঘস্থায়ী হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।

Leave a Comment