আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সাধারণ অসুস্থতার ক্ষেত্রে যেসব ওষুধ সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়, তার মধ্যে রয়েছে প্যারাসিটামল, এন্টিবায়োটিক এবং অ্যান্টিহিস্টামিন। অনেকেই এগুলো ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই সেবন করে থাকেন, যা ভবিষ্যতে নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। এই লেখায় আমরা জানব, এই তিনটি ওষুধ কখন, কেন ও কিভাবে সেবন করা উচিত – যাতে করে ওষুধের কার্যকারিতা নিশ্চিত হয় এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এড়ানো যায়।
সূচিপত্র
প্যারাসিটামল: জ্বর ও ব্যথার জন্য নির্ভরযোগ্য ওষুধ
প্যারাসিটামল একটি বহুল ব্যবহৃত ওষুধ, যা সাধারণত জ্বর, মাথাব্যথা, দেহব্যথা কিংবা ঠান্ডা লাগার উপসর্গে ব্যবহার করা হয়। এটি শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য নিরাপদ হলেও, অতিরিক্ত মাত্রা লিভারের ক্ষতি করতে পারে।
সেবন পদ্ধতি:
-
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য একবারে ৫০০ মিগ্রা থেকে ১০০০ মিগ্রা দিনে ৩–৪ বার নেওয়া যেতে পারে (ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী)।
-
খাবার খাওয়ার পর খাওয়া উত্তম, তবে জরুরি ক্ষেত্রে খালি পেটেও নেওয়া যায়।
-
শিশুদের ক্ষেত্রে বয়স ও ওজন অনুযায়ী সঠিক মাত্রা প্রয়োগ করতে হবে।
সতর্কতা:
-
যাদের লিভারের সমস্যা আছে তারা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া সেবন করবেন না।
-
নিয়মিতভাবে অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে দীর্ঘমেয়াদে লিভার ফেইলিউরের ঝুঁকি থাকে।
এন্টিবায়োটিক: ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণের বিরুদ্ধে
এন্টিবায়োটিক ওষুধ শুধু ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। ভাইরাসজনিত রোগ (যেমন সাধারণ সর্দি-কাশি, ফ্লু) হলে এটি কোনো কাজে আসে না। অনেকেই অপ্রয়োজনে বা কোর্স শেষ না করেই এন্টিবায়োটিক বন্ধ করে দেন, যা শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স তৈরি করে এবং ভবিষ্যতের জন্য বড় বিপদ ডেকে আনে।
সেবন পদ্ধতি:
-
শুধুমাত্র চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী সেবন করতে হবে।
-
প্রতিটি এন্টিবায়োটিকের নির্দিষ্ট ডোজ ও সময়সীমা রয়েছে (যেমন প্রতি ৮ ঘণ্টা বা ১২ ঘণ্টা পর)।
-
সম্পূর্ণ কোর্স শেষ করা বাধ্যতামূলক, এমনকি উপসর্গ দূর হয়ে গেলেও।
সতর্কতা:
-
গর্ভবতী নারী, কিডনি বা লিভারের রোগীদের ক্ষেত্রে সাবধানতা প্রয়োজন।
-
ক্যালসিয়াম বা আয়রন যুক্ত খাবারের সঙ্গে অনেক এন্টিবায়োটিক খাওয়া নিষেধ।
অ্যান্টিহিস্টামিন: অ্যালার্জি ও ঠান্ডা উপশমে কার্যকর
অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধ মূলত অ্যালার্জিজনিত সমস্যা যেমন হাঁচি, চোখ চুলকানো, চর্মরোগ, র্যাশ ইত্যাদির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া ঠান্ডা, জ্বর ও ইনফ্লুয়েঞ্জার ক্ষেত্রে উপসর্গ নিয়ন্ত্রণেও ব্যবহৃত হয়।
সেবন পদ্ধতি:
-
সাধারণত রাতে খাওয়াই উত্তম, কারণ কিছু অ্যান্টিহিস্টামিন ঘুমের প্রবণতা বাড়ায়।
-
খাওয়ার সময় বা পরে খাওয়া যায়।
-
ব্যবহারের পর যানবাহন চালানো বা ভারী কাজ না করাই ভালো।
সতর্কতা:
-
দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে শরীর অভ্যস্ত হয়ে যেতে পারে।
-
শিশুদের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট মাত্রা অনুসরণ করতে হবে।
-
যাদের হৃদরোগ বা গ্লুকোমা রয়েছে, তাদের জন্য কিছু অ্যান্টিহিস্টামিন বিপজ্জনক হতে পারে।
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ গ্রহণের ঝুঁকি
অনেক সময় আমরা নিজেরাই রোগ চিহ্নিত করে ওষুধ খেতে শুরু করি, যা একদমই ঠিক নয়। প্রতিটি ওষুধের আছে নির্দিষ্ট কার্যপ্রক্রিয়া ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ গ্রহণ করলে রোগ উপশম না হয়ে আরও জটিলতা দেখা দিতে পারে।
প্রধান ঝুঁকিগুলো হলো:
-
ভুল মাত্রা বা ওষুধের সঙ্গে ওষুধের সংঘর্ষ (drug interaction)।
-
দীর্ঘমেয়াদি অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতি।
-
অপ্রয়োজনে ওষুধ খাওয়ার কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যাওয়া।
তাই ওষুধ গ্রহণের আগে অবশ্যই একজন যোগ্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
প্যারাসিটামল, এন্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধগুলো আমাদের জীবনে অনেক সময় উপকার করে, তবে এগুলোর যথাযথ ব্যবহার না জানলে ক্ষতিও হতে পারে। নিজে থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে ওষুধ খাওয়ার বদলে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ গ্রহণই সবচেয়ে নিরাপদ উপায়। স্বাস্থ্য সচেতন থাকুন এবং ওষুধের ক্ষেত্রে কখনোই অবহেলা করবেন না।