শরীরের রক্তস্বল্পতা দূর করার ঘরোয়া পদ্ধতি

রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া আমাদের শরীরের একটি সাধারণ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। এই অবস্থায় শরীরের রক্তে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি দেখা দেয়, ফলে অক্সিজেন পরিবহন বাধাগ্রস্ত হয়। যার প্রভাব পড়ে শরীরের শক্তি, কর্মক্ষমতা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর। মাথা ঘোরা, দুর্বলতা, মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি রক্তস্বল্পতার সাধারণ লক্ষণ। অনেকেই ওষুধের উপর নির্ভর করেন, কিন্তু কিছু কার্যকর ঘরোয়া উপায় রয়েছে যা প্রাকৃতিকভাবে রক্তের ঘাটতি পূরণে সহায়ক হতে পারে। আজকের লেখায় আমরা জানবো রক্তস্বল্পতা দূর করার ৭টি কার্যকর ঘরোয়া পদ্ধতি।

রক্তস্বল্পতা দূর করার ৭টি ঘরোয়া পদ্ধতি

১. আয়রন সমৃদ্ধ খাবার বেশি খান

রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে আয়রনের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। আয়রনের ঘাটতি রক্তস্বল্পতার প্রধান কারণ। খনিজ আয়রনে সমৃদ্ধ খাবার যেমন—কালো কিসমিস, খেজুর, পালং শাক, কলিজা, ডিমের কুসুম, বিট, চিঁড়া এবং কালো তিল প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখুন। বিশেষ করে পালং শাকে আয়রন ছাড়াও আছে ভিটামিন সি, যা আয়রন শোষণে সহায়তা করে।

২. ভিটামিন সি যুক্ত ফলমূল গ্রহণ করুন

আয়রন শরীরে সঠিকভাবে শোষিত হতে হলে প্রয়োজন হয় ভিটামিন সি-র। আপনি যদি প্রতিদিন কমলা, আমলকি, লেবু, পেয়ারা, টমেটো বা মাল্টা জাতীয় ফল খান, তবে আয়রনের কার্যকারিতা বহুগুণ বেড়ে যায়। সকালে খালি পেটে লেবু পানিও উপকারী।

৩. পুদিনা ও মেথি পাতার রস

পুদিনা ও মেথি পাতায় রয়েছে প্রচুর আয়রন, ভিটামিন এ ও সি। এই পাতা দিয়ে রস তৈরি করে সকালে এক চামচ করে খেলে রক্তস্বল্পতা কমে এবং হজম শক্তি বাড়ে। চাইলে এই পাতা রান্নায়ও ব্যবহার করতে পারেন।

See also  চুল পড়া বন্ধ ও চুলের গোড়া শক্ত করার উপায় জানুন

৪. খেজুর ও কিসমিস ভিজিয়ে খান

খেজুর ও কিসমিসে রয়েছে উচ্চমাত্রার আয়রন, ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। প্রতিদিন সকালে ৩–৪টি খেজুর ও ১ চামচ কিসমিস এক গ্লাস গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে খালি পেটে খেলে রক্ত তৈরি হয় দ্রুত। এটি বিশেষ করে মহিলাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

৫. বিটরুট বা চুকুন্দার রস

বিটরুট প্রাকৃতিকভাবে আয়রন ও ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ, যা নতুন রক্ত তৈরি ও হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সহায়ক। প্রতিদিন সকালে ১ গ্লাস বিটের রস পান করুন বা স্যালাড হিসেবে বিট খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

৬. মসুর ডাল ও চিড়া একত্রে খান

মসুর ডালে রয়েছে প্রচুর আয়রন ও প্রোটিন। চিড়াও আয়রনসমৃদ্ধ একটি সহজলভ্য খাবার। সকালের নাশতায় দুধ, কলা ও চিড়ার সঙ্গে ভাজা মসুর ডাল মিশিয়ে খেলে তা রক্তস্বল্পতা দূর করতে কার্যকর হতে পারে।

৭. ধূমপান ও চা-কফি পরিহার করুন

অনেকেই জানেন না—চা ও কফিতে থাকা ট্যানিন নামক উপাদান শরীরে আয়রনের শোষণ বাধাগ্রস্ত করে। তাই আয়রন গ্রহণের অন্তত ১ ঘণ্টা আগে ও পরে চা-কফি না খাওয়াই ভালো। ধূমপান ও অ্যালকোহলও রক্তস্বল্পতার জন্য মারাত্মক কারণ হতে পারে, তাই সেগুলো সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে চলুন।

রক্তস্বল্পতা কোনো কঠিন রোগ নয়, তবে এটি শরীরকে ধীরে ধীরে দুর্বল করে তোলে এবং দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলে। ঘরোয়া পদ্ধতিতে আয়রন ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করে, নিয়মিত স্বাস্থ্যকর অভ্যাস বজায় রেখে আপনি খুব সহজেই রক্তস্বল্পতা থেকে মুক্ত থাকতে পারেন। তবে উপসর্গ দীর্ঘস্থায়ী হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

Leave a Comment