রিজ সেটিরিজিন ডাইহাইড্রোক্লোরাইড (Reze Cetirizine Dihydrochloride) একটি বহুল ব্যবহৃত অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ। এটি মূলত এলার্জি বা অ্যালার্জিজনিত বিভিন্ন সমস্যার উপশমে ব্যবহার করা হয়। আমাদের শরীরে হিস্টামিন নামে একধরনের রাসায়নিক পদার্থ থাকে যা অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়ার সময় ত্বক চুলকানি, নাক দিয়ে পানি পড়া, হাঁচি, চোখ চুলকানি বা ফুলে যাওয়ার মতো উপসর্গ সৃষ্টি করে।
এই ওষুধটি হিস্টামিনের প্রভাবকে নিয়ন্ত্রণ করে অ্যালার্জির সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। বাংলাদেশে এটি “রিজ” (Reze) ব্র্যান্ড নামে পরিচিত এবং এটি ট্যাবলেট ও সিরাপ দুইভাবেই পাওয়া যায়।
সূচিপত্র
রিজ সেটিরিজিন ডাইহাইড্রোক্লোরাইড কিসের ওষুধ
এই ওষুধটি মূলত অ্যালার্জি প্রতিরোধক ওষুধ (Antihistamine)। এটি দ্বিতীয় প্রজন্মের অ্যান্টিহিস্টামিন, যা ঘুম ভাব কমায় এবং দীর্ঘস্থায়ী আরাম দেয়।
এটি ব্যবহৃত হয় নিচের রোগ বা উপসর্গগুলোর ক্ষেত্রে—
-
নাকের অ্যালার্জি (Allergic Rhinitis):
ধুলো, ফুলের রেণু, ধোঁয়া বা পোষা প্রাণীর লোমে অ্যালার্জি হলে এটি উপকারী। -
ত্বকের অ্যালার্জি (Urticaria বা চুলকানি):
ত্বকে চুলকানি, লাল ফুসকুড়ি বা র্যাশ দেখা দিলে এই ওষুধ কার্যকর। -
চোখের অ্যালার্জি (Allergic Conjunctivitis):
চোখে চুলকানি, পানি পড়া বা লাল হয়ে যাওয়া রোধ করে। -
সর্দি-হাঁচি ও নাক বন্ধের সমস্যা:
মৌসুমি ঠান্ডা বা ধুলোবালির কারণে হাঁচি ও নাক দিয়ে পানি পড়া কমায়। -
ইনসেক্ট বাইট বা পোকামাকড়ের কামড়:
এতে চুলকানি ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
রিজ সেটিরিজিন সিরাপ ও ট্যাবলেটের ডোজ
রিজ সেটিরিজিন বাজারে সাধারণত ১০ মি.গ্রা ট্যাবলেট এবং ৫ মি.গ্রা/৫মিলি সিরাপ আকারে পাওয়া যায়। সঠিক ডোজ বয়স ও রোগের ধরন অনুযায়ী নির্ভর করে।
👉 প্রাপ্তবয়স্ক ও ১২ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য:
-
দিনে ১ বার (রাতে ঘুমানোর আগে) ১০ মি.গ্রা ট্যাবলেট।
👉 ৬–১২ বছর বয়সী শিশুদের জন্য:
-
দিনে ৫–১০ মি.গ্রা, অর্থাৎ ৫ মি.গ্রা সিরাপ সকাল ও রাতে একবার করে খাওয়ানো যেতে পারে।
👉 ২–৬ বছর বয়সী শিশুদের জন্য:
-
দিনে ২.৫ মি.গ্রা (প্রায় আধা চা চামচ) সিরাপ দেওয়া হয়।
⚠️ গুরুত্বপূর্ণ:
ওষুধ খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, বিশেষ করে শিশু ও গর্ভবতী মহিলার ক্ষেত্রে।
রিজ সেটিরিজিন কিভাবে কাজ করে
এই ওষুধ শরীরে হিস্টামিন রিসেপ্টরের সাথে প্রতিযোগিতা করে হিস্টামিনের কার্যকারিতা বন্ধ করে দেয়। ফলে হাঁচি, চুলকানি, চোখ ও নাকের জ্বালা বা ত্বকের ফুসকুড়ির মতো অ্যালার্জিজনিত প্রতিক্রিয়া কমে যায়।
এটি মস্তিষ্কে খুব বেশি প্রভাব ফেলে না, তাই ঘুম ভাব বা ক্লান্তি তুলনামূলক কম হয়।
রিজ সেটিরিজিন ব্যবহারের নিয়ম
-
প্রতিদিন একই সময়ে খেলে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়।
-
খাবারের আগে বা পরে খাওয়া যায়, তবে খালি পেটে খেলে কিছু ক্ষেত্রে হালকা অস্বস্তি হতে পারে।
-
সিরাপ ব্যবহারের আগে ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে নিতে হবে।
-
ওষুধ খাওয়ার পরপরই গাড়ি চালানো বা যন্ত্র পরিচালনা করা ঠিক নয়, কারণ কিছু ক্ষেত্রে হালকা ঘুম ভাব হতে পারে।
-
অ্যালকোহল বা ঘুমের ওষুধের সঙ্গে একসাথে খাওয়া নিষেধ।
রিজ সেটিরিজিনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
যদিও এটি একটি নিরাপদ অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধ, তবুও কিছু ক্ষেত্রে সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে —
-
মাথা ঘোরা বা হালকা ঘুম ভাব
-
মুখ শুকিয়ে যাওয়া
-
পেটের হালকা ব্যথা বা গ্যাস
-
বমি বমি ভাব
-
শিশুদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত উত্তেজনা বা অস্থিরতা
দীর্ঘদিন অতিরিক্ত ডোজে ব্যবহার করলে লিভার বা কিডনি ফাংশনে প্রভাব ফেলতে পারে, তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদে খাওয়া ঠিক নয়।
সতর্কতা ও বিশেষ পরামর্শ
-
গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারী: চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার করা ঠিক নয়।
-
লিভার বা কিডনির রোগী: কম ডোজ নিতে হয় বা বিকল্প ওষুধ ব্যবহার করা উচিত।
-
অ্যালকোহল সেবনকারী: অ্যালকোহল এই ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বাড়িয়ে দিতে পারে।
-
বাচ্চাদের ক্ষেত্রে: ২ বছরের নিচে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার করা নিষেধ।
রিজ সেটিরিজিনের সঙ্গে খাদ্যাভ্যাসে সতর্কতা
-
অতিরিক্ত ঠান্ডা খাবার, ধুলোবালি বা সুগন্ধিযুক্ত প্রসাধনী থেকে দূরে থাকলে অ্যালার্জি কম হয়।
-
ভিটামিন সি, দই, এবং তাজা ফলমূল খেলে ইমিউন সিস্টেম শক্ত হয়।
-
পর্যাপ্ত পানি পান করলে মুখ শুকিয়ে যাওয়া সমস্যা কমে।
বিকল্প নাম ও ব্র্যান্ড
বাংলাদেশে সেটিরিজিন ডাইহাইড্রোক্লোরাইড বিভিন্ন কোম্পানির মাধ্যমে ভিন্ন নামে পাওয়া যায় —
-
Allercet (Beximco)
-
Cetilin (Square)
-
Zeset (ACME)
-
Histacin (Incepta)
-
Reze (Healthcare)
সবগুলোর মূল উপাদান একই, পার্থক্য শুধু প্রস্তুতকারক কোম্পানির।
রিজ সেটিরিজিন ডাইহাইড্রোক্লোরাইড হলো অ্যালার্জি প্রতিরোধে কার্যকর ও নিরাপদ ওষুধ। এটি সর্দি, চুলকানি, চোখের পানি পড়া বা মৌসুমি অ্যালার্জিতে দ্রুত আরাম দেয়। তবে যেহেতু এটি একটি ওষুধ, তাই নিজে থেকে অতিরিক্ত বা দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহার না করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করাই শ্রেয়। সঠিকভাবে ব্যবহারে এটি অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণে এনে আপনাকে দিতে পারে স্বস্তিদায়ক ও সুস্থ জীবন।