স্কিন অ্যালার্জি ও চুলকানি একটি সাধারণ কিন্তু অত্যন্ত অস্বস্তিকর সমস্যা। এই সমস্যা অনেক সময় ত্বকের লালভাব, ফুসকুড়ি, ফোলাভাব, এবং তীব্র চুলকানির মাধ্যমে দেখা দেয়। এটি জীবনের স্বাভাবিক গতিকে প্রভাবিত করে এবং মন ও শরীরের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। অনেকেই নিজের মতো করে ওষুধ গ্রহণ করেন, যা মাঝে মাঝে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই স্কিন অ্যালার্জির প্রকৃত কারণ বুঝে চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।
সূচিপত্র
স্কিন অ্যালার্জি বা চুলকানির কারণ
ত্বকের অ্যালার্জি বা চুলকানির পেছনে থাকতে পারে নানা কারণ, যেমন:
-
ধুলাবালি বা গৃহের অ্যালারজেন (Dust mites)
-
খাবারের অ্যালার্জি (ডিম, চিংড়ি, গম ইত্যাদি)
-
কাপড় বা প্রসাধনীতে ব্যবহৃত কেমিকেল
-
অতিরিক্ত গরম বা ঘাম জমা হওয়া
-
ফাঙ্গাল সংক্রমণ (দাদ, খোসপাঁচড়া)
-
ইনসেক্ট বাইট বা মশার কামড়
-
অ্যাটপিক ডার্মাটাইটিস বা একজিমা
-
ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
এসব ক্ষেত্রে একেক জনের শরীর একেকভাবে প্রতিক্রিয়া করে। তাই উপসর্গ অনুযায়ী ওষুধ নির্বাচন করা দরকার।
স্কিন অ্যালার্জি ও চুলকানির জন্য ব্যবহৃত সাধারণ ওষুধের নাম
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ ব্যবহার না করাই ভালো, তবে নিচে কিছু সাধারণ ওষুধের নাম দেওয়া হলো যেগুলো স্কিন অ্যালার্জি বা চুলকানির চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়:
১. অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ (চুলকানি ও অ্যালার্জি কমায়)
-
Cetirizine (Seclo, Alergin, Zyrtec): দিনে ১ বার
-
Levocetirizine (Xevor, Alerzin): রাতে খাওয়ার পর
-
Fexofenadine (Fexo, Fexet): দিনে একবার বা দুবার
২. স্কিনে ব্যবহারের জন্য মলম বা ক্রিম
-
Betamethasone (Betnovate, Betameson): স্টেরয়েডযুক্ত, ইনফ্ল্যামেশন কমায়
-
Clotrimazole (Canesten, Candid): ফাঙ্গাল সংক্রমণের জন্য
-
Hydrocortisone cream: অল্প মাত্রার স্টেরয়েড, শিশুদের জন্যও ব্যবহৃত
৩. ফাঙ্গাল সংক্রমণের জন্য খাওয়ার ওষুধ
-
Fluconazole (Flugal, Diflucan): সপ্তাহে একবার বা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী
-
Itraconazole (Sporal, Itradol): দৈনিক ১–২ বার, নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত
৪. অ্যান্টিবায়োটিক (ইনফেকশন থাকলে)
-
Cefadroxil, Flucloxacillin: ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনের ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়
ওষুধ ব্যবহারের নিয়ম ও সতর্কতা
-
ওষুধ ব্যবহারের আগে ত্বক পরিষ্কার করুন।
-
অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধে ঘুম আসতে পারে, তাই রাতে খাওয়া ভালো।
-
স্টেরয়েড মলম বেশি দিন ব্যবহার করলে ত্বক পাতলা হয়ে যেতে পারে।
-
ফাঙ্গাল সংক্রমণের ক্ষেত্রে ওষুধ নির্ধারিত সময়ের আগেই বন্ধ করা উচিত নয়।
-
গর্ভবতী, শিশুরা বা দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্তদের ওষুধ ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ডাক্তারি পরামর্শ ও কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন
স্কিন অ্যালার্জি বা চুলকানির চিকিৎসা অনেক সময় দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে। বিশেষ করে যদি নিচের উপসর্গ থাকে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে:
-
চুলকানি ও র্যাশ এক সপ্তাহেও কমছে না
-
ত্বকে ফোস্কা, পুঁজ বা অতিরিক্ত ফোলাভাব দেখা যাচ্ছে
-
পুরো শরীরে অ্যালার্জি ছড়িয়ে পড়ছে
-
নিঃশ্বাসে কষ্ট বা চোখ ফুলে যাচ্ছে (এনাফাইল্যাক্সিসের লক্ষণ)
-
ঘন ঘন একই সমস্যা দেখা দিচ্ছে
চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের (Dermatologist) পরামর্শে এলার্জি টেস্ট করে মূল কারণ নির্ধারণ করা যেতে পারে। প্রয়োজনে অটোইমিউন রোগ বা লাইফস্টাইল ফ্যাক্টরও পর্যালোচনার আওতায় আসতে পারে।
স্কিন অ্যালার্জি বা চুলকানি আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ সমস্যা মনে হলেও তা জীবনযাত্রায় বড় প্রভাব ফেলতে পারে। তাই নিজের মতো করে ওষুধ ব্যবহার না করে সমস্যার প্রকৃত কারণ নির্ধারণ করে চিকিৎসা নেওয়া উচিত। অ্যান্টিহিস্টামিন ও ফাঙ্গাল ওষুধ কিছু ক্ষেত্রে উপকারী হলেও, দীর্ঘমেয়াদে এটি ব্যবহারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সঠিক ও সচেতন চিকিৎসাই সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা।