টনসিল এর ঔষধ। গলা ব্যাথার ঔষধের নাম ও ১০টি ঘরোয়া চিকিৎসা

টনসিল এবং গলা ব্যথা আমাদের দেশে একটি সাধারণ সমস্যা, বিশেষ করে ঋতু পরিবর্তনের সময় কিংবা ঠান্ডা-গরম খাবার খাওয়ার কারণে এই সমস্যা বেশি হয়। টনসিল হলো গলার দুই পাশে অবস্থিত গ্রন্থি, যা সংক্রমণের কারণে ফুলে যায় এবং ব্যথা সৃষ্টি করে। অনেকে সর্দি-কাশির পাশাপাশি গলা ব্যথা ও জ্বালাপোড়ায় ভোগেন। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সঠিক ঔষধ এবং ঘরোয়া চিকিৎসা জানা জরুরি। আজ আমরা জানবো টনসিলের ঔষধ, গলা ব্যথার জন্য ব্যবহৃত ঔষধের নাম এবং ১০টি কার্যকর ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে।

টনসিলের জন্য ব্যবহৃত ঔষধ

টনসিলের চিকিৎসায় সাধারণত সংক্রমণের ধরন অনুযায়ী ডাক্তার কিছু ঔষধ প্রেসক্রাইব করেন।

  • অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ: যদি ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হয় তবে অ্যামোক্সিসিলিন, সেফিক্সিম, আজিথ্রোমাইসিন ইত্যাদি অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়।

  • ব্যথানাশক ওষুধ: গলা ব্যথা ও জ্বালা কমাতে প্যারাসিটামল, আইবুপ্রোফেন ব্যবহার করা যেতে পারে।

  • গার্গলিং সলিউশন: গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে গার্গল করলে আরাম মেলে এবং প্রদাহ কমে যায়।
    তবে মনে রাখতে হবে, ঔষধ অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করা উচিত।

গলা ব্যথার সাধারণ ঔষধের নাম

গলা ব্যথা হলে অনেক সময় প্রেসক্রিপশন ছাড়াই কিছু ওষুধ সেবন করা যায়, তবে সঠিক ডোজ জানা জরুরি।

  • প্যারাসিটামল (Paracetamol): গলা ব্যথা ও জ্বর কমাতে কার্যকর।

  • আইবুপ্রোফেন (Ibuprofen): ব্যথা ও ফোলা কমাতে ব্যবহৃত হয়।

  • অ্যাসপিরিন (Aspirin): প্রাপ্তবয়স্কদের গলা ব্যথা কমাতে কার্যকর, তবে শিশুদের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা ঠিক নয়।

  • লোজেন্স (Lozenges): যেমন স্ট্রেপসিলস, হেক্সিসল লজেন্স, যা গলার ব্যথা কমাতে সাময়িক আরাম দেয়।
    এসব ওষুধ সাময়িকভাবে আরাম দিলেও দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা হলে ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন।

টনসিল ও গলা ব্যথার জন্য ১০টি ঘরোয়া চিকিৎসা

টনসিল ও গলা ব্যথার জন্য অনেক ঘরোয়া উপায় কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। নিচে ১০টি ঘরোয়া চিকিৎসা দেওয়া হলো—

  1. গরম লবণ পানিতে গার্গল করা – ব্যথা ও প্রদাহ কমায়।

  2. আদা ও মধু খাওয়া – সংক্রমণ দূর করতে সাহায্য করে।

  3. লেবু ও মধু মিশ্রিত গরম পানি – গলার ব্যথা কমায় ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

  4. বেসন বা হলুদ মিশ্রিত দুধ পান করা – প্রদাহ কমাতে কার্যকর।

  5. তুলসী পাতা চা – গলা ব্যথা ও কাশিতে উপকারী।

  6. গরম বাষ্প নেওয়া – গলা পরিষ্কার রাখে ও ব্যথা কমায়।

  7. রসুন খাওয়া – প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে।

  8. লিকারিস (মুলেঠি) চা – গলা ব্যথা ও টনসিল ফুলে যাওয়া কমায়।

  9. পিপার ও মধু খাওয়া – সর্দি-কাশি ও গলা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

  10. প্রচুর পানি পান করা – শরীর হাইড্রেটেড থাকলে গলা শুকিয়ে যায় না এবং আরাম পাওয়া যায়।

See also  খুসখুসে বিরক্তিকর কাশি দূর করার উপায়? কাশি ও কফ দূর করার ঔষধ

টনসিল ও গলা ব্যথা এড়াতে করণীয়

ঔষধ ও ঘরোয়া চিকিৎসার পাশাপাশি কিছু নিয়ম মেনে চললে টনসিল ও গলা ব্যথা থেকে দূরে থাকা যায়।

  • ঠান্ডা ও বরফজাত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।

  • ধূমপান ও ধুলাবালি থেকে দূরে থাকতে হবে।

  • নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নিতে হবে।

  • শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।

  • ঋতু পরিবর্তনের সময়ে গরম কাপড় ব্যবহার করা উচিত।

টনসিল ও গলা ব্যথা অস্বস্তিকর হলেও সঠিক চিকিৎসা ও কিছু ঘরোয়া পদ্ধতির মাধ্যমে সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। ঔষধের পাশাপাশি গার্গল করা, ভেষজ পানীয় খাওয়া এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোললে দ্রুত সুস্থ হওয়া যায়। তবে বারবার টনসিল বা গলা ব্যথা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

Leave a Comment