ওজন বাড়ানো অনেকের কাছেই একটি বড় চ্যালেঞ্জ। যেমন কেউ অতিরিক্ত ওজন কমাতে চান, তেমনি অনেকেই ওজন বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করেন। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সহজ উপায় হলো ওয়েট গেইন মিল্ক শেক। এটি এমন একটি পুষ্টিকর পানীয় যা শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরি ও প্রোটিন সরবরাহ করে, ফলে ধীরে ধীরে ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। তবে এই শেক খাওয়ার আগে জানা জরুরি, এর উপকারিতার পাশাপাশি কিছু অপকারিতাও রয়েছে। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিত জানব — ওয়েট গেইন মিল্ক শেকের উপকারিতা, অপকারিতা ও সঠিকভাবে খাওয়ার নিয়ম।
সূচিপত্র
ওয়েট গেইন মিল্ক শেক কী এবং কেন খাওয়া হয়?
ওয়েট গেইন মিল্ক শেক মূলত দুধ, বাদাম, পিনাট বাটার, কলা, ওটস, প্রোটিন পাউডার, মধু বা চকোলেট সিরাপ দিয়ে তৈরি একটি ক্যালরি সমৃদ্ধ পানীয়। এটি শরীরকে শক্তি দেয় এবং দ্রুত ওজন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
বিশেষ করে যারা রোগা-পাতলা শরীরের কারণে দুর্বল বোধ করেন, অথবা যাদের খাবার রুচি কম — তাদের জন্য এটি খুবই কার্যকর। অনেক সময় চিকিৎসকরাও অপুষ্টিজনিত রোগে ভোগা ব্যক্তিদের জন্য ওয়েট গেইন শেক খাওয়ার পরামর্শ দেন।
ওয়েট গেইন মিল্ক শেকের পুষ্টিগুণ
একটি মিল্ক শেকে সাধারণত থাকে উচ্চমাত্রার কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন। নিচে উপাদানভিত্তিক পুষ্টিগুণ তুলে ধরা হলো —
-
দুধ: প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও ফ্যাটের উৎস।
-
কলা: প্রাকৃতিক কার্বোহাইড্রেট, পটাশিয়াম ও ফাইবার সরবরাহ করে।
-
পিনাট বাটার: উচ্চ ক্যালরি ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট প্রদান করে।
-
ওটস: শক্তি বৃদ্ধিকারী জটিল কার্বোহাইড্রেট সরবরাহ করে।
-
মধু বা চকোলেট সিরাপ: প্রাকৃতিক মিষ্টি ও ক্যালরি যোগ করে।
এইসব উপাদান একত্রে শরীরে অতিরিক্ত এনার্জি ও পুষ্টি যোগ করে যা ওজন বাড়ানোর প্রক্রিয়াকে সহজ করে তোলে।
ওয়েট গেইন মিল্ক শেকের উপকারিতা
ক. দ্রুত ওজন বৃদ্ধি:
ওয়েট গেইন শেক একবারে প্রচুর ক্যালরি দেয়, যা শরীরে অতিরিক্ত শক্তি হিসেবে জমা হয় এবং ধীরে ধীরে ওজন বাড়াতে সহায়তা করে।
খ. পেশি গঠনে সহায়তা করে:
এতে থাকা প্রোটিন ও অ্যামিনো অ্যাসিড পেশি শক্তিশালী করে ও পেশির বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে। যারা ব্যায়াম বা জিম করেন, তাদের জন্য এটি উপযুক্ত একটি পোস্ট-ওয়ার্কআউট ড্রিঙ্ক।
গ. ক্ষুধা বাড়ায়:
মিল্ক শেকে থাকা মধু, কলা ও দুধ হজমে সাহায্য করে এবং ক্ষুধা বৃদ্ধি করে। ফলে খাবার রুচি বাড়ে।
ঘ. পুষ্টিহীনতা দূর করে:
যাদের শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি ঘাটতি রয়েছে, যেমন প্রোটিন বা ক্যালসিয়ামের অভাব, তারা নিয়মিত মিল্ক শেক খেলে দ্রুত পুষ্টি পেতে পারেন।
ঙ. শরীরে শক্তি জোগায়:
এই শেকে থাকা কার্বোহাইড্রেট ও প্রাকৃতিক ফ্যাট শরীরে সারাদিনের শক্তি জোগায়, যা ক্লান্তি দূর করে কর্মক্ষমতা বাড়ায়।
চ. হজমে সহায়তা করে:
দুধ ও কলার সংমিশ্রণ হজমে সহায়তা করে এবং শরীরের অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য রক্ষা করে।
ওয়েট গেইন মিল্ক শেক খাওয়ার সঠিক নিয়ম
১. প্রতিদিন সকালে নাস্তার পর বা রাতে ঘুমানোর আগে ১ গ্লাস ওয়েট গেইন শেক খাওয়া সবচেয়ে উপকারী।
২. শেকটি তৈরির সময় অতিরিক্ত চিনি না দিয়ে প্রাকৃতিক মিষ্টি (যেমন মধু) ব্যবহার করা ভালো।
৩. কলা, দুধ, পিনাট বাটার ও ওটস দিয়ে তৈরি করা শেকটি ঘরে বানানো সবচেয়ে নিরাপদ।
৪. শরীরচর্চা করলে শেক খাওয়ার আধা ঘণ্টা পরে হালকা খাবার খাওয়া যেতে পারে।
৫. অতিরিক্ত পরিমাণে শেক খাওয়া উচিত নয়; দিনে সর্বোচ্চ ১-২ গ্লাসই যথেষ্ট।
ওয়েট গেইন মিল্ক শেকের অপকারিতা
যদিও এটি অনেক উপকারী, তবুও অতিরিক্ত খাওয়া বা ভুলভাবে ব্যবহার করলে কিছু ক্ষতি হতে পারে —
ক. অতিরিক্ত ফ্যাট জমা:
নিয়মিত বেশি পরিমাণে খেলে শরীরে অপ্রয়োজনীয় ফ্যাট জমে যেতে পারে, যা মোটা হয়ে যাওয়া বা পেট বের হওয়ার কারণ হতে পারে।
খ. ডায়াবেটিসের ঝুঁকি:
যদি শেকে বেশি পরিমাণে চিনি, চকোলেট সিরাপ বা মধু ব্যবহার করা হয়, তাহলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
গ. হজমের সমস্যা:
অনেকের ক্ষেত্রে দুধ বা পিনাট বাটার হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে। এতে পেট ফাঁপা বা ডায়রিয়া হতে পারে।
ঘ. কোলেস্টেরল বৃদ্ধি:
উচ্চ ফ্যাটযুক্ত উপাদান (যেমন ফুল ক্রিম দুধ বা পিনাট বাটার) অতিরিক্ত খাওয়া কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।
ঙ. এলার্জির ঝুঁকি:
কিছু মানুষ দুধ বা বাদামে অ্যালার্জিতে ভোগেন। তাই শেক খাওয়ার আগে নিজের সহনশীলতা যাচাই করা উচিত।
কারা ওয়েট গেইন শেক খাবেন এবং কারা খাবেন না?
খাবেন:
-
রোগা ও দুর্বল ব্যক্তি যারা ওজন বাড়াতে চান।
-
জিম বা ফিটনেস ট্রেনিং করা মানুষ।
-
যাদের ক্ষুধা কম বা খাওয়ার রুচি নেই।
খাবেন না:
-
ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ রোগী।
-
যাদের কোলেস্টেরল বেশি।
-
যাদের দুধ বা বাদাম অ্যালার্জি আছে।
ওয়েট গেইন মিল্ক শেক একটি সহজ, পুষ্টিকর ও কার্যকর উপায় ওজন বাড়ানোর জন্য। এটি শরীরে শক্তি যোগায়, পেশি শক্তিশালী করে এবং ক্ষুধা বাড়ায়। তবে এর পাশাপাশি কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে, বিশেষত অতিরিক্ত খাওয়া বা ভুল উপাদান ব্যবহার করলে। তাই সঠিক উপায়ে ও পরিমিত পরিমাণে এটি গ্রহণ করলেই এর উপকারিতা পাওয়া সম্ভব। মনে রাখবেন, ওজন বাড়ানো মানেই কেবল ক্যালরি নয় — বরং পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম ও নিয়মিত ব্যায়ামই হচ্ছে সুস্থভাবে ওজন বাড়ানোর মূল রহস্য।