শিশুরা অনেক সময় সর্দি-কাশি বা ঠান্ডার কারণে বুকের মধ্যে কফ জমে যায়, যা শ্বাস নিতে কষ্ট সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে শীতকাল বা পরিবর্তনশীল আবহাওয়ায় এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। বুকের কফ জমে গেলে শিশুর ঘুমের সমস্যা, খাওয়া কমে যাওয়া এবং ক্রমাগত কাশি দেখা দিতে পারে। তাই সময়মতো কফ বের করার জন্য সঠিক ওষুধ ও ঘরোয়া পরিচর্যা জানা অত্যন্ত জরুরি। এই আর্টিকেলে আমরা জানব শিশুর বুকের কফ দূর করার ওষুধের নাম, খাওয়ানোর নিয়ম এবং কিছু কার্যকর ঘরোয়া পদ্ধতি।
সূচিপত্র
শিশুর বুকের কফ কেন হয়?
শিশুর শ্বাসযন্ত্র খুবই সংবেদনশীল, তাই ঠান্ডা, ধুলাবালি বা ভাইরাসজনিত সংক্রমণের কারণে সহজেই কফ জমে যায়। কখনও কখনও হঠাৎ তাপমাত্রা পরিবর্তন, ঠান্ডা পানি বা খাবার খাওয়া, কিংবা সঠিকভাবে নাক পরিষ্কার না করার কারণেও কফ জমে যেতে পারে।
যদি কফ বেশি পরিমাণে জমে যায়, তাহলে শিশুর কাশি বেড়ে যায়, বুক থেকে গুড়গুড় শব্দ হয় এবং শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এ অবস্থায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, কারণ দীর্ঘ সময় কফ জমে থাকলে শ্বাসযন্ত্রে ইনফেকশন হতে পারে।
শিশুর বুকের কফ বের করার ঔষধের নাম
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া শিশুকে কোনো ঔষধ দেওয়া উচিত নয়। তবে সাধারণত ডাক্তাররা নিচের কিছু ওষুধ প্রেসক্রাইব করে থাকেন —
ক. Ambroxol Syrup (Ambroxol Hydrochloride):
এই সিরাপ কফ পাতলা করে সহজে বের হতে সাহায্য করে। শিশুর বয়স অনুযায়ী ডোজ ঠিক করতে হয়।
খ. Brozedex Syrup:
এটি শিশুদের কফ দূর করতে কার্যকর একটি সিরাপ। এতে Ambroxol, Guaifenesin ও Salbutamol থাকে, যা শ্বাসনালী পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
গ. Tufnil Syrup / Tufnil Expectorant:
এই সিরাপ কাশি ও বুকের কফ দুটোই কমাতে সাহায্য করে। এটি সাধারণত ২ বছরের বেশি বয়সী শিশুদের দেওয়া হয়।
ঘ. Asthalin Syrup (Salbutamol):
এই সিরাপ শ্বাসকষ্ট ও কফজনিত সমস্যায় ব্যবহার করা হয়। এটি শ্বাসনালীকে প্রশস্ত করে শ্বাস নিতে সহায়তা করে।
ঙ. Mucosolvan Syrup:
এটি Ambroxol সমৃদ্ধ, যা কফ পাতলা করে দ্রুত বের করে দেয় এবং বুকের চাপ কমায়।
⚠️ সতর্কতা:
প্রতিটি ওষুধের ব্যবহার শিশুর বয়স, ওজন ও শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে। তাই অবশ্যই শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ দিতে হবে।
শিশুকে কফের ওষুধ খাওয়ানোর নিয়ম
১. শিশুকে ওষুধ দেওয়ার আগে ভালোভাবে বোতল ঝাঁকিয়ে নিন।
২. সিরাপ খাওয়ানোর জন্য ডাক্তারের দেওয়া পরিমাণ অনুসারে চামচ বা সিরিঞ্জ ব্যবহার করুন।
৩. খাওয়ানোর সময় শিশুর মাথা সামান্য উঁচু করে ধরুন যাতে ওষুধ গলায় আটকে না যায়।
৪. ওষুধ খাওয়ানোর পর শিশুকে কিছু পানি বা দুধ দিতে পারেন, এতে মুখের স্বাদ ঠিক থাকবে।
৫. দিনে নির্দিষ্ট সময়ে ওষুধ দিন এবং পরিমাণ বেশি কখনও দেবেন না।
৬. যদি ৩-৫ দিনের মধ্যে উন্নতি না দেখা যায়, তাহলে দ্রুত ডাক্তারকে দেখান।
ঘরোয়া উপায়ে শিশুর বুকের কফ দূর করার পদ্ধতি
ওষুধের পাশাপাশি ঘরোয়া কিছু পদ্ধতি শিশুর কফ দূর করতে সাহায্য করে —
ক. ভাপ নেওয়া (Steam Therapy):
একটি পাত্রে গরম পানি রেখে ঘরে ভাপ তৈরি করুন এবং শিশুকে সেই ঘরে রাখুন। এতে কফ নরম হয়ে বেরিয়ে আসে।
খ. গরম সরিষার তেল মালিশ:
হালকা গরম সরিষার তেল বা নারকেল তেল দিয়ে শিশুর বুক ও পিঠে আলতোভাবে মালিশ করুন। এটি রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় ও কফ নরম করে।
গ. পর্যাপ্ত পানি পান:
যদি শিশু ৬ মাসের বেশি বয়সের হয়, তাকে পর্যাপ্ত পানি দিন। পানি কফ পাতলা করে এবং সহজে বের হতে সাহায্য করে।
ঘ. গরম খাবার দিন:
শিশুকে গরম স্যুপ, খিচুড়ি বা হালকা উষ্ণ দুধ দিন। ঠান্ডা পানি বা ঠান্ডা খাবার একদম দেবেন না।
কখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে?
যদি নিচের কোনো লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন —
-
শিশুর শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
-
ঠোঁট বা নখ নীলচে হয়ে যায়।
-
শিশুর জ্বর ৩ দিনের বেশি থাকে।
-
কফের সঙ্গে রক্ত বা হলুদ পুঁজ জাতীয় কিছু দেখা যায়।
-
শিশুর খাওয়ার ইচ্ছে কমে যায় ও দুর্বল লাগে।
শিশুর বুকের কফ সাধারণত ঠান্ডা বা ভাইরাসজনিত সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে। সময়মতো সঠিক ওষুধ, সঠিক পরিমাণে খাওয়ানো এবং কিছু ঘরোয়া যত্নই পারে শিশুকে দ্রুত আরাম দিতে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, শিশুকে কখনোই নিজের সিদ্ধান্তে ওষুধ দেবেন না। শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ ব্যবহার করুন, এবং ঘরের পরিবেশ পরিস্কার রাখুন। যত্নের সঙ্গে নিয়মিত পরিচর্যা করলেই শিশুর শ্বাসযন্ত্র থাকবে সুস্থ ও স্বাভাবিক।