কৃমি একটি সাধারণ কিন্তু গুরুতর সমস্যা যা শিশুদের স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে ৫ বছরের বাচ্চারা কৃমি সংক্রমণে বেশি ভোগে, কারণ তারা বাইরে খেলাধুলা করে এবং প্রায়ই অস্বাস্থ্যকর খাবার বা পানীয় গ্রহণ করে। কৃমি হলে শিশুরা অপুষ্টি, অ্যানিমিয়া, পেট ব্যথা, ওজন কমে যাওয়া এবং পড়াশোনায় মনোযোগ কমার সমস্যায় আক্রান্ত হয়। তাই নিয়মিত কৃমির ঔষধ খাওয়ানো অত্যন্ত জরুরি।
সূচিপত্র
কেন বাচ্চাদের কৃমির ঔষধ খাওয়ানো প্রয়োজন
-
কৃমি শরীর থেকে খাবারের পুষ্টি চুরি করে।
-
হজম শক্তি দুর্বল করে ও শিশুদের ওজন কমিয়ে দেয়।
-
ঘন ঘন পেট ব্যথা, বমি বমি ভাব ও ডায়রিয়ার কারণ হয়।
-
শিশুর পড়াশোনা ও মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটায়।
-
দীর্ঘদিন কৃমি থাকলে রক্তশূন্যতা (অ্যানিমিয়া) হতে পারে।
৫ বছরের বাচ্চাদের জন্য সাধারণত ব্যবহৃত কৃমির ঔষধ
বাংলাদেশে শিশুদের জন্য নিরাপদ ও কার্যকর বেশ কিছু কৃমির ঔষধ পাওয়া যায়। ৫ বছরের বাচ্চাদের জন্য ডাক্তাররা সাধারণত নিচের ওষুধগুলো প্রেসক্রাইব করে থাকেন—
১. Albendazole (400 mg) Chewable Tablet
-
৫ বছরের বাচ্চাদের জন্য ১টি চিবানো ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়।
-
এটি সাধারণত বছরে ২ বার (৬ মাস পরপর) খাওয়ানো হয়।
২. Mebendazole (500 mg single dose / 100 mg for 3 days)
-
একবারে একটি ট্যাবলেট খাওয়ানো যেতে পারে।
-
অনেক ক্ষেত্রে ৩ দিন ধরে দিনে ২ বার ১০০ মি.গ্রা. করে দেওয়া হয় (চিকিৎসকের পরামর্শে)।
৩. Pyrantel Pamoate Syrup
-
ট্যাবলেট খেতে অসুবিধা হলে সিরাপ ব্যবহার করা যায়।
-
শিশুর ওজন অনুযায়ী ডোজ নির্ধারণ করা হয়।
৫ বছরের বাচ্চাদের কৃমির ঔষধ খাওয়ানোর নিয়ম
-
বাচ্চাদের কৃমির ঔষধ সবসময় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়াতে হবে।
-
সাধারণত ৬ মাস পরপর ১ ডোজ খাওয়ানো হয়।
-
ঔষধ খাওয়ানোর সময় শিশুর ওজন ও স্বাস্থ্য অনুযায়ী ডোজ নির্ধারণ করা জরুরি।
-
ট্যাবলেট খেতে না পারলে চিবানো ট্যাবলেট অথবা সিরাপ দেওয়া যেতে পারে।
-
খালি পেটে ওষুধ খাওয়ানো ভালো, তবে শিশুর অসুবিধা হলে খাবারের পরও খাওয়ানো যায়।
-
একই সময়ে পরিবারের সব সদস্যকে কৃমির ঔষধ খাওয়ানো উচিত, কারণ কৃমি ছড়িয়ে পড়তে পারে।
কৃমির ঔষধ খাওয়ানোর পর করণীয়
-
ওষুধ খাওয়ানোর পর শিশুর পেটে হালকা ব্যথা, বমি বা ডায়রিয়া হতে পারে—এটি স্বাভাবিক।
-
পর্যাপ্ত পানি খাওয়াতে হবে।
-
শিশুর নখ ছোট করে কাটতে হবে ও হাত ধোয়ার অভ্যাস করাতে হবে।
-
খাওয়ার আগে ভালোভাবে হাত ধোয়ানো নিশ্চিত করতে হবে।
-
কাঁচা বা অপরিষ্কার খাবার খাওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে।
কৃমি প্রতিরোধে অভ্যাস গড়ে তোলা
-
সব সময় সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস করাতে হবে।
-
শিশুদের নখ বড় হতে দেওয়া যাবে না।
-
খাবার সব সময় পরিষ্কার ও গরম করে খাওয়াতে হবে।
-
খালি পায়ে মাটিতে হাঁটতে নিরুৎসাহিত করতে হবে।
-
নোংরা পরিবেশে খেলতে না দেওয়া ভালো।
কৃমির ঔষধ ব্যবহারে সতর্কতা
-
ডাক্তারি পরামর্শ ছাড়া শিশুদের কোনো ওষুধ খাওয়ানো উচিত নয়।
-
শিশুর অন্য কোনো রোগ বা ওষুধ সেবনের ইতিহাস থাকলে ডাক্তারকে জানাতে হবে।
-
অতিরিক্ত ডোজ খাওয়ানো বিপজ্জনক হতে পারে।
-
গর্ভবতী মায়েরা ৫ বছরের শিশুকে ঔষধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করবেন।
৫ বছরের বাচ্চাদের কৃমির ঔষধ খাওয়ানো শিশুদের সুস্বাস্থ্য রক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। নিয়মিত ডিওয়ার্মিং করলে শিশু অপুষ্টি, অ্যানিমিয়া, পেট ব্যথা ও দুর্বলতা থেকে মুক্ত থাকে। তবে যেকোনো ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই সর্বোত্তম। পাশাপাশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন অভ্যাস গড়ে তোলা এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখলে কৃমির সমস্যা অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব।