ফুসফুস পরিষ্কার করার ঔষধের নাম। ফুসফুস পরিষ্কার করার খাবার কোনগুলো?

মানবদেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো ফুসফুস। এটি শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করে ও কার্বন ডাই অক্সাইড বের করে দেয়। কিন্তু ধূমপান, বায়ুদূষণ, জীবাণু সংক্রমণ বা অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ফুসফুসে ময়লা বা টক্সিন জমাতে সাহায্য করে। ফলে শ্বাসকষ্ট, কাশি, ক্লান্তি এবং এমনকি ফুসফুসের জটিল রোগও হতে পারে। তাই সময়মতো ফুসফুস পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত জরুরি। আজকের এই আর্টিকেলে জানবো—ফুসফুস পরিষ্কার রাখার ঔষধের নাম, কার্যকর খাবার এবং কিছু প্রাকৃতিক টিপস।

ফুসফুস পরিষ্কার করার প্রয়োজন কেন

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ধোঁয়া, ধুলাবালি, গাড়ির ধোঁয়া, কারখানার নির্গমন বা ধূমপানের কারণে ফুসফুসে টার ও বিষাক্ত পদার্থ জমে যায়। এগুলো শ্বাসনালী বন্ধ করে শ্বাস নিতে অসুবিধা সৃষ্টি করে। সময়মতো ফুসফুস পরিষ্কার না করলে ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া বা ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই ফুসফুস পরিষ্কার রাখলে শুধু শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকে না, বরং শরীরও থাকে আরও উদ্যমী ও রোগমুক্ত।

ফুসফুস পরিষ্কার করার ঔষধের নাম

ফুসফুসে জমে থাকা কফ বা টক্সিন দূর করতে কিছু ওষুধ কার্যকর ভূমিকা রাখে। তবে মনে রাখতে হবে—ওষুধ ব্যবহারের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

(১) Ambroxol Syrup / Tablet

এই ওষুধটি শ্বাসনালীতে জমে থাকা কফ পাতলা করে, যা সহজে বেরিয়ে আসে। এটি সাধারণত কফযুক্ত কাশি বা ফুসফুসে জমাট মিউকাস পরিষ্কারে ব্যবহৃত হয়।

See also  এলার্জি দূর করার উপায়

(২) Montelukast Tablet (10mg)

অ্যালার্জি, শ্বাসকষ্ট ও ফুসফুসে প্রদাহ কমাতে এই ট্যাবলেট অত্যন্ত উপকারী। এটি শ্বাসনালীকে প্রশস্ত করে এবং শ্বাস নিতে সাহায্য করে।

(৩) Bromhexine Syrup / Tablet

এই ওষুধটি ফুসফুসে জমে থাকা ঘন কফ ভেঙে তরল আকারে বের করে দেয়। শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক উভয় ক্ষেত্রেই এটি নিরাপদ।

(৪) Theophylline Tablet

এটি ফুসফুসের পেশি শিথিল করে ও বায়ু চলাচল সহজ করে। সাধারণত অ্যাজমা ও ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (COPD)-এ এটি ব্যবহৃত হয়।

(৫) Salbutamol Inhaler

যাদের শ্বাসকষ্ট বা অ্যাজমার সমস্যা আছে, তাদের জন্য ইনহেলার দ্রুত কার্যকরভাবে ফুসফুসে বাতাসের প্রবাহ বাড়াতে সাহায্য করে। এটি ফুসফুস পরিষ্কার রাখতেও সহায়তা করে।

ফুসফুস পরিষ্কার রাখার ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক উপায়

প্রাকৃতিক উপাদানগুলো ফুসফুসের জন্য অনেক কার্যকর। নিয়মিত কিছু ঘরোয়া টিপস অনুসরণ করলে ফুসফুসের স্বাস্থ্য অনেক ভালো রাখা যায়।

(১) স্টিম থেরাপি (বাষ্প নেওয়া)

গরম পানির বাষ্প ফুসফুসে জমে থাকা কফ ও ধুলোবালি আলগা করে দেয়। এতে শ্বাস নিতে সহজ হয় এবং ফুসফুসের ভেতরের অংশ পরিষ্কার থাকে।

(২) গভীর শ্বাস নেওয়া ব্যায়াম

প্রতিদিন সকালে ৫-১০ মিনিট খোলা বাতাসে গভীর শ্বাস নেওয়া ফুসফুসের ক্ষমতা বাড়ায় এবং টক্সিন নির্গমনে সাহায্য করে।

(৩) অ্যালোভেরা ও মধুর রস

অ্যালোভেরায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে যা ফুসফুসের কোষকে সুরক্ষা দেয়। মধুর সাথে অ্যালোভেরা জুস মিশিয়ে খেলে কফ দূর হয় ও শ্বাসনালী পরিষ্কার থাকে।

ফুসফুস পরিষ্কার রাখার উপকারী খাবার

সঠিক খাদ্যাভ্যাস ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। নিচে কিছু খাবারের নাম দেওয়া হলো যা ফুসফুস পরিস্কারে বিশেষ ভূমিকা রাখে—

(১) আদা

আদা ফুসফুসের টক্সিন দূর করে ও শ্বাসনালী পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। এটি শরীরে প্রদাহ কমায় এবং কফ সহজে বের করতে সহায়তা করে।

(২) রসুন

রসুনে থাকা অ্যালিসিন উপাদান ফুসফুসে জমে থাকা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে এবং রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ায়। প্রতিদিন কাঁচা রসুন খেলে ফুসফুস শক্তিশালী হয়।

See also  ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর উপকারিতা ও অপকারিতা

(৩) হলুদ

হলুদের কারকিউমিন উপাদান শরীরের টক্সিন দূর করে এবং ফুসফুসে প্রদাহ প্রতিরোধ করে। দুধের সাথে হলুদ মিশিয়ে খেলে এটি প্রাকৃতিক ডিটক্স হিসেবে কাজ করে।

(৪) সবুজ চা (Green Tea)

গ্রিন টি-তে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফুসফুসের কোষ পুনর্গঠনে সাহায্য করে। দিনে এক কাপ গ্রিন টি পান করলে ফুসফুসের টক্সিন দূর হয়।

(৫) কমলা ও লেবু জাতীয় ফল

ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল যেমন কমলা, কিউই, লেবু ইত্যাদি ফুসফুসের কোষ মজবুত করে এবং দূষণজনিত ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।

(৬) ব্রোকলি ও পালং শাক

এগুলো ভিটামিন কে, ই ও আয়রনে সমৃদ্ধ যা ফুসফুসের কোষে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ায় এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

(৭) আমলকি (Indian Gooseberry)

আমলকিতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি আছে যা ফুসফুসকে সতেজ রাখে। প্রতিদিন এক চামচ আমলকি রস পান করলে টক্সিন দ্রুত বের হয়।

যে খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত

ফুসফুস সুস্থ রাখতে কিছু খাবার এড়ানোও জরুরি। যেমন—

  • অতিরিক্ত ভাজা-পোড়া খাবার

  • প্যাকেটজাত ফাস্টফুড

  • অতিরিক্ত লবণ ও চিনি

  • ধূমপান ও অ্যালকোহল

এগুলো ফুসফুসে প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং অক্সিজেন সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটায়।

ফুসফুস পরিষ্কার রাখা মানে শুধু শ্বাসপ্রশ্বাসের আরাম নয়, বরং পুরো শরীরকে সুস্থ রাখা। নিয়মিত পানি পান, প্রাকৃতিক খাবার গ্রহণ, ব্যায়াম ও স্টিম থেরাপি অনুসরণ করলে ফুসফুস অনেকাংশে টক্সিনমুক্ত থাকে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করতে পারেন। মনে রাখবেন, সুস্থ ফুসফুসই সুস্থ জীবনের মূলভিত্তি।

Leave a Comment