গরমে শরীর ঠান্ডা রাখার কার্যকর উপায়? গরমে শরীর ঠান্ডা রাখার খাবার

প্রচণ্ড গরমে আমাদের শরীর দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং অতিরিক্ত ঘাম, পানিশূন্যতা ও মাথা ঘোরা দেখা দেয়। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে দীর্ঘক্ষণ রোদে থাকলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই এই সময় শরীরকে ভিতর থেকে ঠান্ডা রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শরীরকে ঠান্ডা রাখার কিছু কার্যকর উপায় এবং গরমে উপযোগী কিছু প্রাকৃতিক খাবার নিয়মিত গ্রহণ করলে আমরা সহজেই সুস্থ থাকতে পারি। এই লেখায় থাকছে—গরমে শরীর ঠান্ডা রাখার ঘরোয়া উপায় এবং এমন কিছু উপকারী খাবারের তালিকা যা গরমে শরীরকে সতেজ ও ঠান্ডা রাখে।

গরমে শরীর ঠান্ডা রাখার কার্যকর উপায়

১. পর্যাপ্ত পানি পান করুন

গরমে শরীর থেকে প্রচুর ঘাম ঝরে, ফলে শরীরের ভেতর থেকে পানির ঘাটতি দেখা দেয়। প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস বিশুদ্ধ পানি পান করুন। এছাড়া লেবু পানি, ডাবের পানি, ওআরএস ইত্যাদি পানীয় শরীরকে ঠান্ডা ও হাইড্রেটেড রাখে। শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে পানি একটি শক্তিশালী প্রাকৃতিক উপাদান।

২. তুলসি ও পুদিনা পাতার ব্যবহার

তুলসি ও পুদিনা প্রাকৃতিকভাবে ঠান্ডা করে এমন গুণাগুণে পরিপূর্ণ। পুদিনা পাতা দিয়ে চা বানিয়ে পান করলে এটি শরীর ও মস্তিষ্ককে ঠান্ডা করে। তুলসি পাতাও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর এবং হজমে সহায়তা করে, ফলে শরীরের ভেতরের উত্তাপ কমে যায়।

See also  নাকের সর্দি দূর করার ট্যাবলেট। সর্দিতে নাক বন্ধ হলে কি করব?

৩. স্নান ও ঠান্ডা পানি দিয়ে শরীর ধোয়া

গরমে দিনে অন্তত ২ বার স্নান করার চেষ্টা করুন। হালকা ঠান্ডা পানি ব্যবহার করলে শরীরের বাইরের তাপমাত্রা হ্রাস পায় এবং মনে প্রশান্তি আসে। চাইলে পানিতে এক-দুই ফোঁটা গোলাপ জল বা নিম পাতা মিশিয়ে নিতে পারেন, যা ত্বকেরও যত্ন নেয়।

৪. ঢিলেঢালা ও সুতি কাপড় পরুন

গরমে সিল্ক, নাইলন বা কৃত্রিম কাপড় ত্বকের শ্বাস-প্রশ্বাসে বাধা সৃষ্টি করে এবং ঘাম জমিয়ে শরীরকে আরও গরম করে তোলে। তাই সুতি, হালকা রঙের, ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করা উচিত। এটি শরীরের বাতাস চলাচল বজায় রাখে এবং ঘাম কমায়।

৫. সূর্যের তীব্রতা এড়িয়ে চলুন

বিকেল ১২টা থেকে ৪টার মধ্যে রোদের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি থাকে। এই সময় অপ্রয়োজনীয়ভাবে বাইরে যাওয়া এড়িয়ে চলুন। প্রয়োজন হলে ছাতা ব্যবহার করুন এবং মাথা ঢেকে রাখুন। সরাসরি রোদ শরীরকে অতিরিক্ত গরম করে দেয়।

৬. হালকা ও কম তেলযুক্ত খাবার খান

গরমকালে অতিরিক্ত ঝাল-মশলা বা ভাজা খাবার শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাই হালকা ও সহজপাচ্য খাবার যেমন ডাল, ভাত, সবজি, টক দই, ফলমূল ইত্যাদি বেশি করে খান। এতে হজম ভালো হবে এবং শরীরও থাকবে ঠান্ডা।

৭. রাতে ভালো ঘুম নিশ্চিত করুন

গরমে ঘুমের ব্যাঘাত হলে শরীর আরও দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই শোবার ঘর ঠান্ডা রাখুন, জানালা খোলা রাখুন বা ফ্যান/এসি ব্যবহার করুন। ভালো ঘুম শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং মস্তিষ্ককে প্রশান্ত রাখে।

গরমে শরীর ঠান্ডা রাখার উপকারী খাবার

১. তাজা ফলমূল

তরমুজ, বাঙ্গি, আনারস, কমলা, পেঁপে ইত্যাদি ফল গরমে শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে। তরমুজে রয়েছে ৯০% এর বেশি পানি, যা শরীরকে ঠান্ডা রাখে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। প্রতিদিন এক বাটি ফল খাওয়া গরমকালে খুবই উপকারী।

See also  রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির ঔষধ। কি কি খাবার খেলে ইমিউনিটি পাওয়ার বাড়ে?

২. ডাবের পানি

ডাবের পানি প্রাকৃতিক ইলেক্ট্রোলাইট ও মিনারেলে ভরপুর। এটি শরীরের পানি ও লবণের ঘাটতি পূরণ করে এবং শরীরকে ঠান্ডা রাখে। সকালে খালি পেটে ডাবের পানি খেলে দ্রুত শক্তি পাওয়া যায় ও ক্লান্তি দূর হয়।

৩. টক দই ও লাচ্ছি

টক দই হজমে সহায়ক এবং ঠান্ডা রাখার অন্যতম শ্রেষ্ঠ খাবার। দই দিয়ে তৈরি লাচ্ছি বা দই-পানি গরমে খুবই উপকারী। এটি পেট ঠান্ডা রাখে, শরীরকে ঠান্ডা করে এবং গরমজনিত অসুস্থতা থেকে রক্ষা করে।

৪. শশা ও টমেটো

শশা ও টমেটো প্রাকৃতিকভাবে শরীরকে ঠান্ডা রাখে এবং এতে রয়েছে প্রচুর পানি ও ভিটামিন। সালাদ বা সরাসরি খাওয়া যায়—দু’ভাবেই শরীর উপকৃত হয়। শশা হজমে সহায়তা করে এবং ত্বকও সতেজ রাখে।

৫. বার্লি জল বা জাও পানা

জাও (barley) পানীয় গরমে শরীরকে ঠান্ডা রাখার জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি শরীরের অতিরিক্ত গরম ভাব কমায় ও প্রস্রাবের মাধ্যমে টক্সিন বের করে দেয়। দিনে একবার বার্লি জল পান করা খুবই উপকারী।

৬. লেবু ও মধু মিশ্রিত পানি

লেবুতে ভিটামিন সি আছে যা শরীরকে ঠান্ডা ও সতেজ রাখে। হালকা গরম পানিতে লেবু ও মধু মিশিয়ে খেলে শরীরের এনার্জি বাড়ে, হজম ভালো হয় এবং গরমে ক্লান্তি দূর হয়।

৭. মেথির পানি

মেথি ভেজানো পানি গরমকালে একটি প্রাকৃতিক ঠান্ডা পানীয় হিসেবে কাজ করে। মেথির ঠান্ডা প্রকৃতির কারণে এটি শরীরের গরম ভাব কমায় এবং গ্যাস, অ্যাসিডিটির সমস্যা কমায়।

গরমকালে শরীর সতেজ ও ঠান্ডা রাখতে হলে প্রাকৃতিক জীবনধারা ও খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা অত্যন্ত জরুরি। পর্যাপ্ত পানি পান, হালকা খাবার গ্রহণ এবং ঘরোয়া উপায়গুলো মেনে চললে গরমের কষ্ট অনেকটাই লাঘব করা সম্ভব। গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ার আগে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ। তাই আজ থেকেই গরমের চাহিদা অনুযায়ী লাইফস্টাইল ও খাবার তালিকায় পরিবর্তন আনুন এবং নিজেকে রাখুন সুস্থ, সতেজ ও ঠান্ডা।

See also  সকালে খালি পেটে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

Leave a Comment