হজমের সমস্যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে একটি পরিচিত ও অস্বস্তিকর অবস্থা। ভাজাপোড়া খাবার, অনিয়মিত খাওয়াদাওয়া, দুশ্চিন্তা, অথবা দীর্ঘদিন কোনো ওষুধ সেবনের কারণে হজমের গণ্ডগোল দেখা দিতে পারে। পেটে ফাঁপা, গ্যাস্ট্রিক, অম্বল, বমিভাব, বা কোষ্ঠকাঠিন্য এসব এর সাধারণ উপসর্গ। তাই, সময়মতো উপযুক্ত চিকিৎসা নেওয়া জরুরি। এই আর্টিকেলে আমরা জানবো হজমের সমস্যার জন্য ডাক্তারি পরামর্শ অনুযায়ী কোন কোন ওষুধ খাওয়া উচিত এবং কিভাবে তা ব্যবহার করবেন।
সূচিপত্র
হজমের সমস্যা চিহ্নিত করুন: সাধারণ উপসর্গ ও কারণ
হজমের সমস্যা একেকজনের ক্ষেত্রে একেকভাবে প্রকাশ পায়। নিচে কিছু সাধারণ উপসর্গ তুলে ধরা হলোঃ
-
পেটে ফাঁপা ও গ্যাস তৈরি হওয়া
-
বমিভাব বা অম্বল
-
পেটে ব্যথা বা গুঞ্জন ধ্বনি
-
ঢেকুর উঠা
-
কোষ্ঠকাঠিন্য বা পাতলা পায়খানা
এর মূল কারণ হতে পারে দ্রুত খাওয়া, পানির অভাব, অতিরিক্ত তেল-চর্বি জাতীয় খাবার, অথবা দীর্ঘদিন ধরে চলা হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি সংক্রমণ। প্রথমে উপসর্গ বুঝে চিকিৎসা শুরু করাটাই সবচেয়ে জরুরি।
হজমের সমস্যা নিরসনে ব্যবহৃত ওষুধের ধরন
বাংলাদেশে সাধারণত নিচের ধরণের ওষুধগুলো হজমের সমস্যা সমাধানে ব্যবহৃত হয়:
-
এন্টাসিড: যেমন গ্যাভিসকন, ম্যাগালড্রেট – অম্বল ও বুকজ্বালায় উপকারী।
-
ডাইজেস্টিভ এনজাইম: যেমন এনজিস্টেন, ডাইজেস্টিন, ফেস্টাল – খাবার হজমে সহায়ক।
-
প্রোবায়োটিকস: যেমন ইন্টেস্টিফ্লোরা – অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়া বাড়িয়ে হজমে সহায়তা করে।
-
গ্যাস্ট্রিক রিলিফ ট্যাবলেট: যেমন ওমিপ্রাজল, এসোমিপ্রাজল – গ্যাস্ট্রিক এসিড কমাতে কার্যকর।
এই ওষুধগুলো সাধারণত খাবারের আগে বা পরে খেতে হয়। তবে দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহার না করে, উপসর্গ অনুযায়ী সীমিত সময়ের জন্য গ্রহণ করাই শ্রেয়।
কোন অবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ প্রয়োজন?
যদিও অনেক ক্ষেত্রে ওভার-দ্য-কাউন্টার (OTC) ওষুধে হজমের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আসে, কিন্তু নিচের অবস্থা হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিতঃ
-
এক সপ্তাহের বেশি হজম সমস্যা থাকলে
-
রক্তপাতসহ বমি বা পায়খানা হলে
-
হঠাৎ ওজন কমে গেলে
-
জ্বর ও পেট ব্যথা একসাথে থাকলে
এছাড়া গর্ভবতী নারী, শিশু, এবং ডায়াবেটিস বা কিডনি রোগে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ গ্রহণ ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
ওষুধের পাশাপাশি কিছু ঘরোয়া ও স্বাস্থ্যকর অভ্যাস
হজম ভালো রাখার জন্য শুধু ওষুধ খাওয়াই যথেষ্ট নয়, বরং প্রতিদিনের কিছু অভ্যাস পরিবর্তন করাও জরুরি। যেমনঃ
-
প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খাওয়া
-
উচ্চ তেল, ঝাল ও ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলা
-
পর্যাপ্ত পানি পান
-
নিয়মিত হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম
-
ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকা
এছাড়া আদা চা, জিরা পানি, টকদই, বা মধু-লেবু পানিও হজমে সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
হজমের সমস্যা এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণযোগ্য যদি সময়মতো উপযুক্ত ওষুধ ও অভ্যাস গড়ে তোলা যায়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজন অনুযায়ী ডাইজেস্টিভ ট্যাবলেট, এন্টাসিড কিংবা প্রোবায়োটিক গ্রহণ করলে উপকার পাওয়া যায়। তবে উপসর্গ দীর্ঘস্থায়ী হলে দেরি না করে বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। মনে রাখবেন, সচেতনতা ও সঠিক অভ্যাসই সুস্থ হজমের চাবিকাঠি।