বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়েই হাঁটু, কোমর ও মাথাব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দৈনন্দিন কাজের চাপে, বয়সজনিত কারণ কিংবা দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করায় এসব ব্যথা হঠাৎ দেখা দিতে পারে এবং মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বাধা সৃষ্টি করে। অনেকেই তখন দ্রুত আরাম পেতে ব্যথানাশক ওষুধ গ্রহণ করেন। তবে ব্যথার ধরন বুঝে ওষুধ নির্বাচন করাই বুদ্ধিমানের কাজ। পাশাপাশি, কিছু ওষুধ যেমন হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন নির্দিষ্ট চিকিৎসায় ব্যবহৃত হলেও তা ব্যবহারের আগে বিস্তারিত জানা জরুরি।
সূচিপত্র
হাঁটুর ব্যথার জন্য ব্যবহৃত ওষুধ
হাঁটুর ব্যথা সাধারণত অস্টিওআর্থ্রাইটিস, গাউট, অথবা লিগামেন্ট ইনজুরির কারণে হয়। কিছু কার্যকর ওষুধ রয়েছে যা হাঁটুর ব্যথা কমাতে সহায়তা করে:
-
Aceclofenac (এক্লোফেন্যাক) – অস্থিসন্ধি ব্যথার জন্য কার্যকর
-
Naproxen – ইনফ্ল্যামেশন কমাতে সাহায্য করে
-
Diclofenac Sodium Gel – বাহ্যিক ব্যবহার উপযোগী
-
Glucosamine + Chondroitin – হাঁটুর জয়েন্টের ঘর্ষণ কমাতে সহায়তা করে
ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিয়মিত ব্যবহার করা উচিত নয়, কারণ এসব ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেমন অ্যাসিডিটি, কিডনি সমস্যা হতে পারে।
কোমর ব্যথার জন্য ব্যবহৃত ওষুধ
কোমর ব্যথা দীর্ঘ সময় বসে কাজ করার ফলে অথবা স্নায়ুবন্ধুতা (sciatica) থেকে হতে পারে। এ ধরণের ব্যথা উপশমে ব্যবহৃত হয়:
-
Ibuprofen (আইবুপ্রোফেন) – ব্যথা ও ফোলাভাব কমাতে সহায়ক
-
Eperisone Hydrochloride – পেশি শিথিল করতে ব্যবহৃত হয়
-
Paracetamol (প্যারাসিটামল) – হালকা কোমর ব্যথার জন্য নিরাপদ
-
Tizanidine – মাংসপেশীর স্প্যাজম দূর করতে কার্যকর
দীর্ঘমেয়াদে সমস্যা থাকলে ফিজিওথেরাপির পরামর্শ নিন, কারণ ওষুধ সাময়িক আরাম দিলেও মূল সমস্যার সমাধান নয়।
মাথাব্যথার জন্য ব্যবহৃত ওষুধ
মাথাব্যথা নানা কারণে হতে পারে— যেমন টেনশন, মাইগ্রেন বা সাইনাস ইনফেকশন। নিচের ওষুধগুলো সাধারণত মাথাব্যথায় ব্যবহার করা হয়:
-
Paracetamol – সাধারণ মাথাব্যথায় প্রথম পছন্দ
-
Sumatriptan – মাইগ্রেনের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ব্যবহৃত
-
Ergotamine – দীর্ঘস্থায়ী মাথাব্যথার জন্য
-
Flunarizine – প্রিভেন্টিভ ওষুধ হিসাবে মাইগ্রেনে দেওয়া হয়
মাইগ্রেন থাকলে নিয়মিত ওষুধ সেবনের পাশাপাশি জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা জরুরি।
হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ওষুধের ব্যবহার ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
Hydroxychloroquine একটি অ্যান্টি-ম্যালেরিয়াল ওষুধ হলেও এটি বর্তমানে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, লুপাস, এবং কিছু অটোইমিউন রোগে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। করোনা ভাইরাস চলাকালে এটি আলোচনায় আসে।
ব্যবহার:
-
রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে জয়েন্টের ব্যথা কমাতে
-
লুপাস রোগে প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে
-
ম্যালেরিয়ার নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে প্রতিরোধ ও চিকিৎসায়
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:
-
চোখে ঝাপসা দেখা বা রেটিনাল ড্যামেজ
-
গ্যাস্ট্রিক, বমিভাব, ডায়রিয়া
-
স্কিনে অ্যালার্জি বা র্যাশ
-
লম্বা সময় ব্যবহার করলে লিভার ও কিডনির ক্ষতি
সতর্কতা: এই ওষুধ কখনোই নিজে থেকে সেবন করা উচিত নয়। শুধুমাত্র অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে ও চোখ পরীক্ষা করেই দীর্ঘমেয়াদে গ্রহণ করতে হয়।
ব্যথা সাময়িক হলেও ভুল ওষুধের ব্যবহার দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা তৈরি করতে পারে। হাঁটু, কোমর বা মাথাব্যথা— প্রতিটি ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ গ্রহণ করাই নিরাপদ। বিশেষ করে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের মতো ওষুধগুলো নিজের ইচ্ছামতো সেবন ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। সঠিক তথ্য, পেশাদার পরামর্শ এবং নিয়মিত স্বাস্থ্যচর্চাই হতে পারে যেকোনো ব্যথার স্থায়ী সমাধান।