পুরো শরীরে চুলকানী | চুলকানি থেকে মুক্তির উপায় | চুলকানি হলে কি করনীয় ডাক্তারি পরামর্শ জানুন

পুরো শরীরে চুলকানি একটি খুবই বিরক্তিকর ও অস্বস্তিকর সমস্যা। কখনো হালকা, কখনো তীব্র—চুলকানি দিনের কাজকর্ম ও রাতের ঘুম দুটোই নষ্ট করে দিতে পারে। অনেক সময় ত্বকে ফুসকুড়ি বা লালচে দাগ না থাকলেও ভেতর থেকে চুলকানি অনুভূত হয়। আবার কারও ক্ষেত্রে শুষ্ক ত্বক, অ্যালার্জি, ফাঙ্গাল সংক্রমণ, লিভার বা কিডনির সমস্যা, ডায়াবেটিস কিংবা হরমোনের পরিবর্তনের কারণেও পুরো শরীরে চুলকানি দেখা দিতে পারে। তাই চুলকানি হলে শুধু মলম লাগালেই হবে না—কারণ, লক্ষণ ও সঠিক করণীয় জানা জরুরি। এই আর্টিকেলে পুরো শরীরে চুলকানির কারণ, ঘরোয়া ও চিকিৎসাবিদ্যার উপায় এবং কখন ডাক্তার দেখাবেন—সবকিছু বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো।

পুরো শরীরে চুলকানির সাধারণ কারণ

চুলকানির পেছনে একাধিক কারণ কাজ করতে পারে।
শুষ্ক ত্বক বা ডিহাইড্রেশন হলে ত্বক টানটান হয়ে চুলকায়। অ্যালার্জি (খাবার, ওষুধ, সাবান, ডিটারজেন্ট) থেকেও সারা শরীরে চুলকানি হতে পারে। ফাঙ্গাল বা স্ক্যাবিসের মতো সংক্রমণে রাতে চুলকানি বেশি হয়। আবার লিভার, কিডনি, থাইরয়েডের সমস্যা, ডায়াবেটিস, রক্তস্বল্পতা কিংবা গর্ভাবস্থার হরমোনজনিত পরিবর্তনেও চুলকানি দেখা যায়। দীর্ঘদিন মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তাও চুলকানির একটি বড় কারণ।

চুলকানির ধরন বুঝে নিন

চুলকানি সবার ক্ষেত্রে একরকম নয়।
কখনো ফুসকুড়ি ছাড়া চুলকানি, কখনো লালচে দাগসহ চুলকানি, কখনো রাতে বেশি, আবার কখনো গোসলের পর বাড়ে। এই লক্ষণগুলো থেকে সমস্যার ধরন আন্দাজ করা যায়। যেমন—রাতে তীব্র চুলকানি হলে স্ক্যাবিস বা ফাঙ্গাল সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে, আর শীতে গোসলের পর চুলকালে শুষ্ক ত্বক দায়ী হতে পারে।

চুলকানি হলে কী করণীয়—প্রথমিক পদক্ষেপ

চুলকানি শুরু হলেই কিছু অভ্যাস বদলালে অনেক সময় সমস্যা কমে যায়।
প্রথমত, অতিরিক্ত গরম পানি দিয়ে গোসল করা বন্ধ করুন। কুসুম গরম বা স্বাভাবিক পানি ব্যবহার করুন। ত্বক পরিষ্কার রাখতে দিনে একবার গোসল যথেষ্ট। গোসলের পর ত্বক ভেজা থাকা অবস্থায় ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। আঁচড়ানো একেবারেই এড়িয়ে চলুন, কারণ এতে সংক্রমণ ও দাগ পড়ার ঝুঁকি বাড়ে।

See also  নিউরোলজিক্যাল রোগের জন্য ব্যবহৃত ঔষধের নাম ও দাম

চুলকানি থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায়

হালকা চুলকানিতে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি আরাম দিতে পারে।
ঠান্ডা সেঁক চুলকানি কমাতে সাহায্য করে। অ্যালোভেরা জেল বা খাঁটি নারকেল তেল ত্বককে আর্দ্র রাখে ও জ্বালা কমায়। ওটমিল বা চালের মাড় দিয়ে গোসল করলে শুষ্কতা কমে। ঢিলেঢালা সুতির কাপড় পরুন, যাতে ঘাম জমে না। সুগন্ধিযুক্ত সাবান, লোশন বা পারফিউম আপাতত বন্ধ রাখুন।

খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনুন

খাবারের সাথেও চুলকানির সম্পর্ক আছে।
পর্যাপ্ত পানি পান করুন—দিনে অন্তত ৮–১০ গ্লাস। সবুজ শাকসবজি, ফলমূল, ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার (মাছ) ত্বকের জন্য ভালো। অতিরিক্ত ঝাল, ভাজা ও প্রক্রিয়াজাত খাবার কমান। কারও ক্ষেত্রে ডিম, চিংড়ি, বাদাম বা দুধ অ্যালার্জি তৈরি করে—এমন হলে সেই খাবার এড়িয়ে চলুন।

চুলকানিতে ব্যবহৃত সাধারণ ওষুধ (ডাক্তারি পরামর্শে)

চুলকানি দীর্ঘস্থায়ী বা তীব্র হলে চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন।
ডাক্তার সাধারণত অ্যান্টিহিস্টামিন ট্যাবলেট দেন, যা অ্যালার্জিজনিত চুলকানি কমায়। ফাঙ্গাল সংক্রমণে অ্যান্টিফাঙ্গাল ক্রিম বা ওষুধ দেওয়া হয়। শুষ্ক ত্বকে মেডিকেটেড ময়েশ্চারাইজার কাজে আসে। কখনো কখনো স্টেরয়েড ক্রিম দেওয়া হলেও তা নিজে নিজে ব্যবহার করা ঠিক নয়। ভেতরের রোগ সন্দেহ হলে রক্ত পরীক্ষা বা অন্যান্য টেস্ট লাগতে পারে।

কখন অবশ্যই ডাক্তার দেখাবেন

নিচের যেকোনো লক্ষণ থাকলে দেরি না করে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।
চুলকানি ২–৩ সপ্তাহেও না কমলে, রাতে ঘুম ভেঙে গেলে, ওজন কমে গেলে, চোখ বা ত্বক হলুদ হয়ে গেলে, প্রস্রাবের রঙ গাঢ় হলে, বা চুলকানির সাথে জ্বর ও ফুসকুড়ি দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা জরুরি। এগুলো ভেতরের রোগের লক্ষণ হতে পারে।

চুলকানি প্রতিরোধে দৈনন্দিন অভ্যাস

চুলকানি বারবার হলে কিছু নিয়ম মেনে চলুন।
নিয়মিত ত্বক আর্দ্র রাখুন, অতিরিক্ত সাবান ব্যবহার করবেন না, ঘাম হলে দ্রুত কাপড় বদলান, পরিষ্কার তোয়ালে ব্যবহার করুন এবং মানসিক চাপ কমাতে পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নিন। প্রয়োজনে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান।

See also  সকালে খালি পেটে আদা খাওয়ার উপকারিতা এবং কি কি ক্ষতি হয়

পুরো শরীরে চুলকানি ছোট সমস্যা মনে হলেও এর পেছনে বড় কোনো কারণ লুকিয়ে থাকতে পারে। তাই চুলকানি হলে অবহেলা না করে কারণ বুঝে ব্যবস্থা নেওয়াই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। ঘরোয়া যত্ন, সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন অনেক ক্ষেত্রে চুলকানি কমাতে সাহায্য করে। তবে সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী বা তীব্র হলে নিজে নিজে ওষুধ না খেয়ে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সময়মতো সঠিক চিকিৎসাই আপনাকে চুলকানি থেকে স্থায়ী মুক্তি দিতে পারে।

Leave a Comment