গলার ব্যথা (Sore Throat) বা গলার ইনফেকশন একটি সাধারণ অথচ বিরক্তিকর সমস্যা। এটি সাধারণত ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, অ্যালার্জি, ঠান্ডা বা ধুলাবালি জনিত কারণে হতে পারে। অনেক সময় এই সমস্যা কয়েক দিনেই সেরে যায়, আবার কখনো তা জটিল আকার ধারণ করে এবং চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। তাই এই সমস্যার যথাযথ ওষুধ এবং ডাক্তারি পরামর্শ জানা অত্যন্ত জরুরি।
সূচিপত্র
গলার ব্যথা ও ইনফেকশনের সাধারণ কারণ কী কী?
গলার ব্যথার পেছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে, যেমন:
-
ভাইরাল ইনফেকশন: যেমন সাধারণ সর্দি, ফ্লু বা করোনাভাইরাস
-
ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ: যেমন স্ট্রেপ থ্রোট (Streptococcus throat infection)
-
অ্যালার্জি বা ধুলাবালি: পরিবেশের ধূলিকণা ও অ্যালারজেন
-
ধূমপান বা রাসায়নিক গন্ধ: যা গলা শুষ্ক ও জ্বালাপোড়ার সৃষ্টি করে
-
অতিরিক্ত চিৎকার বা গলার ব্যবহার: যেমন শিক্ষক, বক্তা, কণ্ঠশিল্পীদের ক্ষেত্রে
-
এসিড রিফ্লাক্স (GERD): পাকস্থলীর অ্যাসিড গলায় উঠে ব্যথা তৈরি করে
গলার ব্যথা বেশিরভাগ সময় ভাইরাসজনিত হয় এবং কয়েকদিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়, তবে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনের ক্ষেত্রে চিকিৎসা প্রয়োজন।
গলার ব্যথা ও ইনফেকশনে ব্যবহৃত সাধারণ ওষুধ
গলার ব্যথা বা ইনফেকশনের চিকিৎসা নির্ভর করে এর মূল কারণের ওপর। নিচে বিভিন্ন ধরণের ওষুধ দেওয়া হলো, যেগুলো সাধারণত ডাক্তাররা ব্যবহারের পরামর্শ দেন:
১. অ্যান্টিবায়োটিক (ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনে)
-
Azithromycin (Azipro, Azithrocin): দিনে ১ বার, ৩ থেকে ৫ দিন
-
Cefuroxime (Xorimax, Cefurix): দিনে ২ বার, ৫–৭ দিন
-
Penicillin V (Pen-Vee K): স্ট্রেপ থ্রোটে কার্যকর
মনে রাখবেন: ভাইরাল ইনফেকশনে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না।
২. ব্যথানাশক ও জ্বর কমানোর ওষুধ
-
Paracetamol (Napa, Ace): ব্যথা ও জ্বর কমায়
-
Ibuprofen (Nurofen, Ibufen): প্রদাহ কমায়, তবে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা থাকলে সাবধানতা জরুরি
৩. গার্গল ও অ্যান্টিসেপটিক থ্রোট স্প্রে
-
Betadine Gargle: দিনে ২–৩ বার গলায় গার্গল করুন
-
Strepsils, Vicks Lozenges: গলার আরাম ও প্রদাহ কমাতে সহায়ক
-
Chlorhexidine mouthwash: গলার জীবাণু নাশ করে
৪. অ্যান্টিহিস্টামিন (অ্যালার্জি বা ইনফ্ল্যামেশন কমাতে)
-
Cetirizine (Seclo, Alergin): রাতে ১টি
-
Levocetirizine (Xevor): ঘুম না আনার অ্যান্টিহিস্টামিন
গলার ব্যথায় ঘরোয়া চিকিৎসা ও টিপস
সাধারণ বা হালকা গলার ব্যথায় নিচের ঘরোয়া উপায়গুলো কার্যকর হতে পারে:
-
গরম পানি ও লবণ দিয়ে দিনে কয়েকবার গার্গল
-
আদা, মধু ও লেবু দিয়ে গরম পানি পান
-
গলায় ঠান্ডা লাগবে এমন পানীয়, আইসক্রিম বা ধূমপান এড়িয়ে চলুন
-
প্রচুর পরিমাণে পানি ও তরল খাবার গ্রহণ
-
ঘর ঠান্ডা ও ধুলাবালিমুক্ত রাখা
গলার ব্যথায় কখন ডাক্তার দেখানো উচিত?
সব গলার ব্যথা চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। তবে নিচের উপসর্গগুলো থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে:
-
গলার ব্যথা ৭ দিনের বেশি স্থায়ী হচ্ছে
-
গিলতে সমস্যা হচ্ছে বা খাবার আটকে যাচ্ছে
-
জ্বর, ঘাম, বা শরীরে ব্যথা বাড়ছে
-
গলা ফুলে যাচ্ছে বা ঘাড়ে গাঁট দেখা যাচ্ছে
-
কণ্ঠস্বর একেবারে চলে গেছে
-
শিশুদের ক্ষেত্রে যদি খাবার ও পানি খেতে অস্বীকৃতি দেয়
চিকিৎসক প্রয়োজন অনুযায়ী থ্রোট কালচার বা CBC টেস্ট দিয়ে সঠিক কারণ নির্ধারণ করে ওষুধ দেন।
গলার ব্যথা সাধারণত হালকা ইনফেকশনের কারণে হলেও কিছু ক্ষেত্রে তা জটিল হয়ে দাঁড়াতে পারে। সঠিক সময়ে সঠিক ওষুধ গ্রহণ ও বিশ্রামই দ্রুত আরোগ্যের মূল চাবিকাঠি। অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার এড়িয়ে চলা উচিত এবং অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। ঘরোয়া যত্ন এবং প্রতিরোধই গলা সুস্থ রাখার সর্বোত্তম উপায়।