বাচ্চাদের জ্বর ভালো হওয়ার দোয়া। দ্রুত জ্বর কমানোর দোয়া?

জ্বর হচ্ছে আমাদের শরীরের একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সক্রিয় হওয়ার কারণে হয়ে থাকে। তবে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এই জ্বর অনেক সময় ভয় এবং উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, বিশেষ করে যখন জ্বর দীর্ঘস্থায়ী বা বেশি তাপমাত্রায় চলে যায়। অনেক বাবা-মা এই অবস্থায় দুঃশ্চিন্তায় ভোগেন এবং দ্রুত আরোগ্য লাভের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা করেন।

ইসলামে দোয়া ও রুহানিয়াতের গুরুত্ব অত্যন্ত গভীরভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কোনো অসুস্থতার সময় শারীরিক চিকিৎসার পাশাপাশি রুহানী উপায় অনুসরণ করাও সুন্নাহসম্মত। নবী করিম (সা.) বিভিন্ন রোগে দোয়া পাঠ করতেন এবং সাহাবীদেরও দোয়া শিখিয়ে দিতেন। শিশুরা অসুস্থ হলে আমরা যেমন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হই, তেমনি আল্লাহর কাছে তাদের সুস্থতা কামনায় দোয়া করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ করণীয়।

এই আর্টিকেলে আমরা জানবো—দ্রুত জ্বর কমানোর জন্য কোন দোয়াগুলো পাঠ করা যায়, বাচ্চাদের জন্য কোন ইসলামিক আমলগুলো উপকারী, এবং দোয়ার পাশাপাশি আর কী কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

বাচ্চাদের জ্বর ভালো হওয়ার জন্য কোরআন ও হাদিসের দোয়া

আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কোরআনে বলেছেন: “আমি কোরআনের মধ্যে এমন কিছু নাযিল করেছি, যা রুহের জন্য শেফা ও রহমত।” (সূরা ইসরা: ৮২)। নিচে কিছু পরীক্ষিত ও হাদিসভিত্তিক দোয়া দেওয়া হলো যা জ্বরের সময় শিশুর ওপর পড়া যেতে পারে:

🔹 দোয়া ১:

أَذْهِبِ الْبَاسَ رَبَّ النَّاسِ، اشْفِ أَنْتَ الشَّافِي، لاَ شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ، شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا
উচ্চারণ: “Azhibi al-ba’sa, rabban-nas, ishfi anta al-shafi, la shifa’a illa shifa’uka, shifa’an la yughadiru saqama.”
অর্থ: “হে মানুষের রব! কষ্ট দূর করে দাও। তুমি রোগ মুক্তি দানকারী, তোমার শেফা ব্যতীত কোনো শেফা নেই। এমন শেফা দাও যাতে কোনো ব্যাধি অবশিষ্ট না থাকে।” (সহিহ বুখারী ও মুসলিম)

🔹 দোয়া ২:
সূরা আল-ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস তিনবার করে পড়ে বাচ্চার উপর ফুঁ দিলে ইনশাআল্লাহ সুরক্ষা এবং আরোগ্য লাভ হবে।

See also  তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুমের অর্থ কি ?

রাসুল (সা.) এর চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ: রুকইয়া ও পানির ব্যবহার

রাসুলুল্লাহ (সা.) অসুস্থতা হলে শুধু চিকিৎসকের কাছে যেতেন না, বরং দোয়া ও কোরআনের আয়াত দিয়ে রুকইয়া (ধর্মীয় উপায়ে ঝাড়ফুঁক) করতেন। নিচে কিছু কার্যকর আমল দেওয়া হলো:

  • রুকইয়া শরইয়াহ: উপরের হাদিসভিত্তিক দোয়াগুলো পড়ে শিশুর শরীরে ফুঁ দিন।

  • জামজম পানি: বাচ্চাকে যদি জামজম পানি খাওয়ানো সম্ভব হয়, তবে তা অত্যন্ত কল্যাণকর।

  • পানি দিয়ে মাথা ও কপালে মুছে দেওয়া: রাসুল (সা.) জ্বরের সময় ঠান্ডা পানি দিয়ে কপালে পানি দেন এবং ওজু করার নির্দেশ দেন (সহিহ বুখারী)।

জ্বর কমানোর জন্য কার্যকর কিছু ইসলামিক ও ঘরোয়া পদ্ধতি

দোয়ার পাশাপাশি কিছু ঘরোয়া ও ইসলামিকভাবে সুপারিশকৃত পদ্ধতিও অনুসরণ করা যেতে পারে:

  • কালোজিরা ও মধু: নবিজি (সা.) বলেছেন, “কালোজিরা সব রোগের জন্য উপকারী, মৃত্যুর ব্যতীত।” (সহিহ মুসলিম)। এক চামচ মধুর সঙ্গে সামান্য কালোজিরা মিশিয়ে বাচ্চাকে খাওয়ানো যেতে পারে।

  • তুলসি পাতা ও আদা চা (৩ বছরের বেশি হলে): এগুলো প্রাকৃতিকভাবে শরীর ঠান্ডা করে এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

  • জামাতে দোয়া: পরিবারের সকলে মিলে বাচ্চার জন্য দোয়া করা অত্যন্ত বরকতময়। অনেক সময় সম্মিলিত দোয়াতে দ্রুত ফলাফল দেখা যায়।

দ্রুত জ্বর কমানোর দোয়া?

🔹 ১. “রব্বান নাস” দোয়া (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)

أَذْهِبِ الْبَاسَ، رَبَّ النَّاسِ، اشْفِ أَنْتَ الشَّافِي، لاَ شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ، شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا
উচ্চারণ: “Azhibi al-ba’sa, Rabb an-naas, ishfi anta ash-shaafi, laa shifaa’a illaa shifaa’uka, shifaa’an laa yughaadiru saqamaa.”
অর্থ: “হে মানুষের পালনকর্তা! কষ্ট দূর করে দাও, তুমি রোগ মুক্তি দানকারী। তোমার শিফা ছাড়া কোনো শিফা নেই। এমন শিফা দাও যাতে কোনো ব্যাধি অবশিষ্ট না থাকে।”

📌 কিভাবে ব্যবহার করবেন:
এই দোয়াটি তিনবার জ্বরগ্রস্ত ব্যক্তির উপর পড়ে ফুঁ দিতে পারেন। শিশুর ক্ষেত্রে মাথা বা বুকে হাত রেখে পাঠ করা যায়।

See also  Ayatul Kursi Bangla ( আয়াতুল কুরসি বাংলা ) উচ্চারণ ,অর্থ , অনুবাদ ও ফজিলত

🔹 ২. সূরা ফালাক, সূরা নাস ও সূরা ইখলাস

এই তিনটি সূরা রাসুল (সা.) অসুস্থতার সময় নিজে পাঠ করতেন এবং হাত দিয়ে নিজের শরীর মুছতেন।

📌 পদ্ধতি:
➤ সূরা ইখলাস, ফালাকনাস – তিনবার করে পাঠ করুন।
➤ তারপর আপনার হাত দু’টি একসাথে করে মুখ, মাথা ও শরীরের ওপর মুছে দিন।

🔹 ৩. পানির উপর দোয়া করে ব্যবহার করা

হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) জ্বরের সময় পানি দিয়ে শরীর ঠান্ডা করার নির্দেশ দিয়েছেন।

📌 পদ্ধতি:
➤ একটি পাত্রে পানি নিন।
➤ উপরোক্ত দোয়াগুলো পড়ে সেই পানিতে ফুঁ দিন।
➤ তারপর সেই পানি দিয়ে শরীর মুছে দিন বা অল্প অল্প করে পান করান (যদি শিশু বড় হয়)।

দোয়া ও ধৈর্যের মাধ্যমে ঈমানী মনোভাব গড়ে তোলা

মুসলিম হিসেবে আমাদের বিশ্বাস, সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছায় ঘটে এবং রোগ-ব্যাধি পরীক্ষা হিসেবে আসে। এ সময় ধৈর্য ধারণ করা এবং আল্লাহর উপর ভরসা রাখা অত্যন্ত জরুরি। সন্তানদের সুস্থতা আল্লাহর হাতে, আর আমরা তাঁর কাছে সাহায্য চাইতে পারি দোয়া ও ইবাদতের মাধ্যমে।

সন্তান অসুস্থ হলে মায়ের দোয়া খুব দ্রুত কবুল হয়। তাই একজন মা হিসেবে নিয়মিত নামাজে সন্তানের জন্য সুস্থতার দোয়া করুন, রাতে তাহাজ্জুদ নামাজে আল্লাহর দরবারে আরোগ্য প্রার্থনা করুন।

শিশুর জ্বর হলে আতঙ্কিত না হয়ে ধৈর্য ধরে চিকিৎসা ও দোয়া উভয় পন্থাই অনুসরণ করা উচিত। ইসলাম আমাদের শিখিয়েছে—প্রতিকার নেওয়ার পাশাপাশি আল্লাহর সাহায্য কামনা করতে হবে। বাচ্চাদের জ্বর ভালো হওয়ার জন্য পবিত্র কোরআন ও হাদিসে যেসব দোয়া এসেছে, সেগুলো পাঠ করলে ইনশাআল্লাহ আরোগ্য লাভ সম্ভব। আল্লাহ যেন আমাদের সন্তানদের হেফাজত করেন এবং দ্রুত সুস্থ করে তোলেন—আমিন।

Leave a Comment