গর্ভবতী মায়েদের জন্য নিরাপদ ঔষধের তালিকা ও সতর্কতা

গর্ভাবস্থার সময় একজন নারীর শরীরে নানান শারীরিক ও হরমোনজনিত পরিবর্তন ঘটে, যা বিভিন্ন উপসর্গ বা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। এ সময় অনেক মায়েই সাধারণ অসুস্থতা যেমন মাথাব্যথা, সর্দি-কাশি, পেট ব্যথা বা গ্যাস্ট্রিক সমস্যার জন্য ওষুধ খেতে চান। তবে গর্ভাবস্থায় যেকোনো ওষুধ গ্রহণে চরম সতর্কতা প্রয়োজন, কারণ কিছু ওষুধ গর্ভস্থ শিশুর বিকাশে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। এই জন্য গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে কোন ওষুধ নিরাপদ এবং কীভাবে সেগুলো ব্যবহার করা উচিত তা জানা অত্যন্ত জরুরি। চলুন জেনে নিই বিস্তারিত ডাক্তারি পরামর্শসহ।

গর্ভাবস্থায় নিরাপদ ও সাধারণত ব্যবহৃত ওষুধসমূহ

গবেষণা ও চিকিৎসকদের মতে, নিচের কিছু ওষুধ গর্ভাবস্থায় সাধারণত নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত হয় (শুধু ডাক্তারি পরামর্শে):

  • প্যারাসিটামল (Paracetamol): হালকা জ্বর ও মাথাব্যথার জন্য এটি নিরাপদ।

  • সালাইন ও ওআরএস (ORS): ডায়রিয়া বা ডিহাইড্রেশনের জন্য।

  • অ্যান্টাসিড (Antacid – যেমন জেলুসিল): গ্যাস্ট্রিক বা অম্বলের জন্য।

  • ডক্সিলামিন+পাইরিডক্সিন (Doxylamine + Vitamin B6): বমিভাব বা সকাল বেলা বমির সমস্যা নিরসনে ব্যবহৃত হয়।

  • আয়রন, ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম: গর্ভাবস্থায় প্রায় সব নারীকে এগুলো সাপ্লিমেন্ট হিসেবে দেওয়া হয়।

তবে এগুলোর ব্যবহারে মাত্রা ও সময় অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্ধারিত হতে হবে।

গর্ভাবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণ বা এড়িয়ে চলার ওষুধ

গর্ভাবস্থায় অনেক প্রচলিত ওষুধ রয়েছে যেগুলো গর্ভস্থ শিশুর বিকাশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে বা জন্মগত ত্রুটি ঘটাতে পারে। যেমন:

  • আইবুপ্রোফেন (Ibuprofen), ডাইক্লোফেনাক (Diclofenac): ব্যথানাশক হিসেবে ব্যবহৃত হলেও গর্ভবতীদের জন্য বিপজ্জনক।

  • অ্যান্টিবায়োটিকের কিছু গ্রুপ: যেমন টেট্রাসাইক্লিন, সিপ্রোফ্লক্সাসিন।

  • অ্যাকিউট মাইগ্রেন ওষুধ: অনেক টাইপের স্নায়ুবিষয়ক ওষুধ শিশুর স্নায়ু উন্নয়নে সমস্যা তৈরি করতে পারে।

তাই গর্ভকালীন যে কোনও ওষুধ গ্রহণের আগে অবশ্যই নির্ভরযোগ্য চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ নেওয়া উচিত।

See also  বাচ্চাদের এলার্জির লক্ষণ ও এলার্জি দূর করার উপায়

ভেষজ বা হারবাল ওষুধ ব্যবহারে সতর্কতা

অনেকে মনে করেন ভেষজ বা আয়ুর্বেদিক ওষুধ গর্ভাবস্থায় নিরাপদ, তবে বাস্তবে অনেক হারবাল উপাদান গর্ভাবস্থায় ক্ষতিকর হতে পারে। যেমন:

  • আলোভেরা, গারলিক সাপ্লিমেন্ট, জিনসেং: অতিরিক্ত গ্রহণ করলে গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

  • পেঁয়াজ, মেথি, দারুচিনি অতিমাত্রায় খাওয়া: রক্তচাপ বা রক্ত তরলীকরণে প্রভাব ফেলতে পারে।

তাই ভেষজ ও ঘরোয়া ওষুধ বা টোটকাও চিকিৎসকের অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা উচিত নয়।

ওষুধ গ্রহণের সময় যা অবশ্যই মাথায় রাখবেন

  • চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ খাবেন না – এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা।

  • প্রেসক্রিপশন পড়ুন: প্রতিটি ওষুধের লিফলেটে প্রেগনেন্সি ক্যাটাগরি উল্লেখ থাকে।

  • কোনো সমস্যা হলে ওষুধ বন্ধ না করে তৎক্ষণাৎ ডাক্তারকে জানান।

  • স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অনুমোদিত বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিত ওষুধই ব্যবহার করুন।

  • সঠিক ডোজ ও সময় মেনে চলুন।

গর্ভকালীন ওষুধ গ্রহণ অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি বিষয়। একজন মায়ের সামান্য ভুল ওষুধ সারা জীবনের জন্য একটি শিশুর জীবনে জটিলতা তৈরি করতে পারে। তাই ওষুধ গ্রহণে কোনো রকম ঝুঁকি না নিয়ে অবশ্যই পেশাদার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলা উচিত। নিজের এবং অনাগত সন্তানের সুস্থ ভবিষ্যতের জন্য সচেতনতা ও দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত নেওয়া সময়ের দাবি।

Leave a Comment